দেশ থেকে মানবপাচারের এক নতুন ফাঁদ ‘সাইবার দাস’। তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে চাকরির কথা বলে কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যায় প্রতারক চক্র। এরপর জিম্মি করে হ্যাকিং ও অনলাইন প্রতারণার কাজে লাগানো হয় চাকরিপ্রার্থীদের।
এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার কংকং প্রদেশে দুঃস্বপ্নের ২১ দিন কাটিয়ে এখন টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছেন ইব্রাহীম খলিল। কথা ছিল কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি হবে। বেতন হবে এক হাজার ডলার। সেই আশাতেই দালালের হাত ধরে গত ৮ জুলাই কম্বোডিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি।
পরদিন তাকে পাহাড়ি অঞ্চলে একটি তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে নেয়া হয়। যেটি পরিচালনা করেন কিছু চীনা নাগরিক। তারপরের গল্পটা শুধুই প্রতারণার। সাধারণ কোনো অপারেটরের কাজ নয়, সেখানে ইব্রাহিমকে শেখানো হয় অনলাইন প্রতারণা আর হ্যাকিংয়ের কাজ।
ইব্রাহিম বলেন, একটা রুমে নিয়ে যায়। সেখানে একটি টেবিলে দেখি শত শত কম্পিউটার। টেলিগ্রাম অ্যাপসে চায়না সুন্দরী মেয়েদের একটি ছবি ও নাম দিয়ে একটি আইডি খুলে দেয়। তারপর ফরেন ত্রিশ বছরের বেশি পুরুষদের সঙ্গে ওই আইডি দিয়ে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তারপর ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর, ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর―এসব নেয়া ছিল আমার কাজ।
ভীনদেশের মাটিতে সাইবার অপরাধ চক্রের একজন সদস্য হিসেবে যখন নিজেকে আবিস্কার করেন ইব্রাহিম, তখনই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কম্বোডিয়ায় একই চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ মো. নাজমুলও। এই ভুক্তভোগী জানান, বিদেশ যেতে আগ্রহী অনেককে সাইবার দাস হিসেবে নেয়া হচ্ছে।
মো. নাজমুল বলেন, সেখানে দেখি তারা থাকে কম্বোডিয়ায় কিন্তু কাজ করে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকার নেটওয়ার্ক দিয়ে। তারা মূলত দুই বা তিন মাস পরপর প্রজেক্ট পরিবর্তন করে। পরে বুঝতে পারি আমাদের তারা বিক্রি করে দেয়। তারপর হ্যান্ডওভার করে আর ওদের কাছ থেকে তিন বা চার হাজার ডলার করে নেয়
নাজমুল ও ইব্রাহিমের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার পল্টনে গ্লোবাল ওভারসিজ নামের সেই এজেন্সিতে পৌঁছে । ট্রাভেল এজেন্সি হলেও অবৈধভাবে বিদেশে লোক পাঠাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুনিম মজলিস। তবে বাংলাদেশ থেকে সাইবার দাস পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
মুনিম মজলিস বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে শুধু প্রসেসিং করে দেয়া। টিকিট করে দেয়া। কম্বোডিয়ায় আমার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পার্টনারে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তারা সেখানেই ছিলেন। পরবর্তীতে তারা সেখান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন।
কম্বোডিয়ায় যাওয়ার জন্য ইব্রাহিম ও নাজমুলকে ছাড়পত্র দিয়েছিল বিএমইটি। কিন্তু কার যোগসাজশে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হয়নি বিএমইটি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি ইউরোপের পাশাপাশি কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচার চক্র। রামরু’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, মানবপাচার করে যে কাজগুলো করানো হচ্ছে, তা কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল চক্রের কাজ। যেখানে তাদের কাজ দেয়া হচ্ছে, সেই জায়গার কোনো নিয়ন্ত্রণ ওই দেশের বা আমাদের দেশের সরকারের নেই।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত বছর কাজের খোঁজে কম্বোডিয়ায় গেছেন ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি।
সূত্র : চ্যানেল 24