একটি দেশকে ধনী তখনই বলা হয়, যখন সে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের সর্বোচ্চ গড় আয় নির্ধারণ করা হয়। একটা দেশ ধনী না কি দরিদ্র, সেটা বোঝার জন্য জিডিপি পার ক্যাপিটাল দেখা হয়। জিডিপি পার ক্যাপিটাল মানে মাথা পিছু জিডিপি আয়। আর এই তালিকা তৈরি করে আইএমএফ।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ কোনগুলো? মাথাপিছু জিডিপির (পিপিপি) ভিত্তিতে বিশ্বের ধনী ১০টি দেশের তালিকা দিয়েছে ফোর্বস ইন্ডিয়া।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের হিসাবমতে, মাথাপিছু জিডিপিতে (পিপিপি) বিশ্বের ধনী ১০টি দেশ হলো—
১. লুক্সেমবার্গ
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ। ইউরোপের অন্যতম প্রধান আর্থিক প্রযুক্তি (ফিনটেক) হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দেশটি। সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিষেবার অতুলনীয়। সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গণপরিবহণ ব্যবহার করেন নাগরিকরা।
দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৪০ হাজার ৩১২ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা।
২. ম্যাকাও এসএআর
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ম্যাকাও এসএসআর। চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। এখানকার মূল আয় আসে পর্যটন এবং ক্যাসিনো থেকে। এশিয়ার প্রথম এবং শেষ ইউরোপীয় উপনিবেশ ছিল এখানেই।
দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪০ ডলার।
৩. আয়ারল্যান্ড
স্বল্প জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ধনী দেশের তিনে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ আয়ারল্যান্ড। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এ দেশে বিনিয়োগ করেছে বিধায় একে কর্পোরেটদের স্বর্গরাজ্য বলা হয়ে থাকে। অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আইরিশ অর্থনীতিতে ৫০ শতাংশের বেশি যোগ করেছে।
আয়ারল্যান্ডের জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ ডলার।
৪. সিঙ্গাপুর
ধনী দেশের তালিকায় চার নাম্বারে রয়েছে এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটি বহু বছর ধরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। এখানে মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪০ ডলার। এছাড়া সিঙ্গাপুরের বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশ।
৫. কাতার
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে এখানে। পাশাপাশি রয়েছে তেলের ভাণ্ডার। বর্তমানে পর্যটনেও উৎসাহ দিচ্ছে দেশটি।
কাতারের জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১২ হাজার ২৮০ ডলার।
৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এই অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বলা হয়। কাতারের মত এই দেশটিও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এই দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ৯৬ হাজার ৮৫০ ডলার।
৭. সুইজারল্যান্ড
পর্যটকদের স্বপ্নের দেশ ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বেশ স্থিতিশীল অর্থনীতিও দেশটির। মূল্যবান ধাতু, যন্ত্রপাতি এবং কম্পিউটার ও মেডিকেল ডিভাইস রপ্তানি করেও প্রচুর টাকা উপার্জন করে দেশটি।
সুইজারল্যান্ডের জনগণের মাথাপিছু আয় ৯১ হাজার ৯৩০ মার্কিন ডলার।
৮. সান মারিনো
সান মারিনো ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এটি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি। বিশ্বের খুব কম দেশই আছে যাদের ঘাড়ে ঋণের বোঝা নেই। সান মারিনো তাদের মধ্যে একটি। এই দেশের ছত্রে ছত্রে ইতালীয় সংস্কৃতির প্রভাব।
এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনগণের মাথাপিছু আয় হল ৮৬ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার।
৯. যুক্তরাষ্ট্র
উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সামরিক বলেও বলীয়ান দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ৮৫ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার।
১০. নরওয়ে
ইউরোপের দ্বিতীয় জনবহুল রাষ্ট্র নরওয়ে। সবচেয়ে বেশি তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে দেশটিতে। পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করে নরওয়ে। এই দেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ৫২৬.৯৫ বিলিয়ন ডলার।
নরওয়ের জনগণের মাথাপিছু আয় ৮২ হাজার ৮৩০ মার্কিন ডলার।