সমুদ্রপুষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ফুট উপরে পেরুর এই শহরটি বৈচিত্রে, স্থাপত্যে ও নিঃসর্গের মাধুর্যে দক্ষিন গোলার্ধের অন্যতম আকর্ষনীয় স্থানের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। প্লাজাটির ভিতরে একটি সুবিন্যস্ত বাগান আছে। চারিদিকে বসার সুন্দর ব্যবস্থা। সান ফেষ্টিভালের সময় পার্কটি থাকেপর্যটকে ভরা। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের নাচে গানে স্থানটি থাকে মুখরিত। প্রতি বছর জুন মাসে এই উৎসব হয়।
কুসকো শহরের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম গির্জা, গথিক স্থাপত্বের এক অনবদ্য সৃষ্টি। এর সামনে থেকেই সান ফেষ্টিভালের শোভাযাত্রা শুরু হয়। দুপাশে সারি সারি দোকান ও রেস্তোরা।
পরদিন সকালে পেরু রেলে চেপে অন্ডিজ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে পৌছাতে হবে আগুয়াস ক্যালিএস্তেজ। এরপর বাসে রাতে পৌছাতে হবে স্বপ্নের জগত মাচুপিচু। সেই হারিয়ে যাওয়া ইনকা সভ্যতার পীঠস্থান। পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চার্যের একটি মাচু পিচু। মাচু পিচু অর্থ পুরানো পাহাড়। এই পাহাড়ের উপর ১৩ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপি এক পরিত্যক্ত ও মৃত শহরের আবিষ্কার করেন। পর্যটক ও ইয়েক বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিরাস বিংহাম। তিনি এই স্থানটিকে লষ্ট সিটি অব ইনকাজ নামদেন। এই জায়গাটি ছবির মতো সুন্দর। উরুবাম্বা নদী উচু পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে। তার পাশে ছোট একটা পাহাড়ি গ্রাম। এখানে স্থানীয় হস্তশিল্পের অনেক দোকান ও প্রচুর রেস্তোরা আছে।
তারপর বাসে করে পাহাড়ের মাথায়। পাহাড়ের উপর থেকে উরুবাম্বা নদী দেখা যায়। সে এক অতুলনীয় পরিবেশ। মাচুপিচু সংরক্ষীত অঞ্চলের প্রবেশ পথ। সামনে প্রশস্ত ধ্বংসস্তুপ। বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে সবুজের মাঝে পাহাড়ের খাদে দুইশরও বেশি কালী, সাদা গ্রানাইটের মন্দির ফোয়ারা এবং সুন্দর রাস্তাঘাট। বিস্ময়ে অবাক হতে হয়।
পেরুর কাসকোতে অবস্থিত এ শহর। ১৫ শতাব্দীতে রাজা পাচাকুতেক এ নগর গড়ে তোলেন। ১৬ শতাব্দীতে স্প্যানিশরা দখল করার পর শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। তাই, মাচুপিচুকে ইনকা সিটি বা ইনকাদের হারানো শহরও বলা হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা অঞ্চলটিতে চাষাবাদ করলেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষজন একে বিধ্বস্ত জনপদ হিসেবেই জানতো। ১৯১১ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক হিরাম বিংহাম এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বিশ্ববাসীর কাছে বৈচিত্র্যময় এ শহরের নান্দনিকতার জানান দেন। স্প্যানিশ আক্রমণের পূর্বে মাচুপিচু ছিল ইনকাদের তীর্থস্থান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তাদের রাজকীয় ব্যক্তিবর্গ, অভিজাত লোকজন ও তীর্থযাত্রীরা পাহাড়ের উঁচুতে অবস্থিত সেখানকার সরাইখানাগুলোতে সময় কাটাতো। আন্দিজ পর্বতের উত্তর পাদদেশে অবস্থিত এই সাইটে পর্যটকরা পায়ে হেঁটেও পৌঁছাতে পারেন, তবে তা কষ্টসাধ্য।
অপূর্ব সে দৃশ্য এক অজানা ইতিহাস ছুয়ে দেখার অদ্ভুত রোমাঞ্চকর স্মৃতিকে সঙ্গে করে ফিরতে হবে।