চাঁদ মামা’র সাথে আর যে বিষয়ে রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষকে চিরকালই আকর্ষণ করেছে, তার নাম পাহাড়। যেন বলদেয়ারের সে কবিতার মত উঁচুতে – ঐ উঁচুতে যাবার প্রবল বাসনা মানুষকে পেয়ে বসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় মানুষ জয় করে নিয়েছে সুউচ্চ মাউন্ট এভারেস্ট – বাংলায় যাকে আমরা হিমালয় বলেই জানি। এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম পা রাখেন নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারী এবং নেপালের তেনজিং নোরগে, ১৯৫৩ সালের ২৯ মে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই কোটি বছর আগে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের মূল ভূখণ্ড ছিল আফ্রিকা মহাদেশের কাছাকাছি। ভূমিকম্প, জলবায়ুরসহ নানা ভু প্রাকৃতিক কারন ও পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশ ধীরে ধীরে এগোতে থাকে এশিয়া মহাদেশের দিকে। তারপর একসময় প্রচণ্ড ধাক্কার ফলে এশিয়ার সাথে সংঘর্ষ হয়। তাতে এশিয়ার মূলভূখণ্ডের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশ জোড়া লেগে যায়। জোড় লাগা স্থানগুলো প্রচণ্ড সংঘর্ষের কারণে স্বাভাবিক থেকে উঁচু হয়ে যায়। এই উঁচু হয়ে যাওয়া বিরাট ভূমিই কালের বিবর্তনে হিমালয় পর্বতমালায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। ভারতীয় ও এশিয়ান পে’টের মধ্যে এই মহাদেশীয় সংঘর্ষ আনুমানিক ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর থেকে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল বলে তারা ধারনা করছেন।
পর্বতশৃঙ্গটি হিমালয়ের মহালঙ্গুর হিমাল পর্বতমালায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট) হলেও পৃথিবীর কেন্দ্র হতে এই শৃঙ্গের দুরত্ব সর্বাধিক নয়। প্রথমে সবাই জানতো যে, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতচূড়া হল কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই পর্বতশৃঙ্গটির অবস্থান হিমালয়ের কাছেই। পরে হিমালয়ের খোজ মিললে নতুন করে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাপার কাজ শুরু হয়। প্রথমে ১৮৫২ সালে পর্বতটিরটির উচ্চতা মেপে বের করার কাজটি পেয়েছিলেন একজন বাঙালি, নাম রাধানাথ শিকদার। বৃটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল অ্যান্ড্রু ওয়াহ নিজ উদ্যোগেও এই মাপজোখের কাজে লেগে যান। এর জন্য তারা বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ পরিচালনা করেন। এই প্রক্রিয়াকে আরও নিখুতভাবে চালানোর জন্য তারা ব্যবহার করেন ১১০০ পাউন্ড ওজনের থিওডোলাইট (Theodolite)।
অনেকদিন হিমালয় জয়ীদের তালিকায় কোনো বাংলাদেশির নাম ছিলোনা। সেই আক্ষেপ দূর করেন আমাদের মুসা ইব্রাহিম। ২০১০ সালের ২৩ মে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে লাল সবুজের পতাকা ওড়ান। তারপর অবশ্য এভারেস্ট জয় করেছেন আরো কয়েকজন বাংলাদেশী। যেমন মুহিত চুড়োয় গিয়েছেন দুবার। নিশাত মজুমদার প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন ২০১২ সালের ১৯ মে। পরে ওয়াসফিয়া নাজরীন দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে জয় করেন একসময়ের অজেয় হিমালয়।
উচ্চতা এখন আর মানব জাতির জন্য কোন নতুন চ্যালেঞ্জ নয়। যতই বাধা আসুক, মানুষ থিকই তা জয় করে নিবে-এভারেস্টই তাঁর প্রমান!