আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যত ছড়িয়ে পড়ছে, ততই মানুষের মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভাবিত এবং মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট মানুষেরই বুদ্ধির বিকল্প এই প্রযুক্তি পৃথিবীকে আশংকার দিকে ধাবিত করছে। এই আশংকা উপলব্ধি করে গত মঙ্গলবার সহ¯্রাধিক বিজ্ঞানী, টেক ইন্ডাস্ট্রির লিডার এবং উচ্চপর্যায়ের এক্সিকিউটিভবৃন্দ একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাদের সতর্কবার্তার মর্মবাণী হলো ‘মানুষের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিধ্বংসী’। যারা এই সতর্কতা দিয়েছেন তাদের অন্যতম মাইক্রোসফট ও গুগলের নির্বাহীবৃন্দ।
মঙ্গলবার এই খবরটি দিয়ে এসোসিয়েটড প্রেস বলছে, এই নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো রয়েছেন ওপেনএআই’র প্রস্তুতকারী চ্যাটজিপিটি’র সিইও স্যাম অল্টম্যান এবং যাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গডফাদার বলা হয়, সেই জিওফ্রি হিনটন। আর্র্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেভাবে মানুষের মেধাকে পেরিয়ে যাওয়ার সংকেত দিচ্ছে, তাতে নতুন প্রজন্মকে এই প্রযুক্তি দুর্ধর্ষ বা ওয়াইল্ড করে তোলার আশংকা দেখা দিয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা তাদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।
এসোসিয়েটেড প্রেস ভবিষ্যদ্বাণী করে বলছে, এ বছরই ‘এআই এ্যাক্ট’ নামে নতুন আইন প্রণীত হবে বিভিন্ন দেশে। সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এআই সেফটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড্যান হেনড্রিক্স এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন টপ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন, ফলে তারা এই বিষয়টিকে গেøাবাল অগ্রাধিকারে রাখতে তাদের মতামত দিয়েছেন।
এপি বলছে, এ বছরের শুরুতে এলন মাস্কসহ এক হাজারেরও বেশি গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ দীর্ঘ এক চিঠিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রক্রিয়া ৬ মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাদের ভাষায় ‘AI poses profound risks to society and humanity’। কিন্তু মাইক্রোসফট (Open AI প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রতিষ্ঠানের অংশীদার) এবং তাদের প্রতিদ্ব›দ্বী গুগল স্থগিত রাখতে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
কিন্তু গত মঙ্গলবারের সতর্কতা বিষয়ক বিবৃতিতে মাইক্রোসফটের চিফ টেকনোলজি ও সাইন্স অফিসার এবং গুগল’এর এআই রিসার্চ ল্যাবের সিইও স্বাক্ষর করেছেন। বিবৃতিতে কোনো নির্দিষ্ট পয়েন্ট উল্লেখ করা না হলেও তারা জাতিসংঘের নিউক্লিয়ার এজেন্সির মত একটি আন্তর্জাতিক রেগুলেটরি বডি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। অনেক সমালোচক বলেছেন, এখন পর্যন্ত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তেমন হুমকি হয়ে আসেনি। তার আগেই কেন এই আশংকা? তার উত্তরে সেন্টার ফর এআই সেফটির নির্বাহী পরিচালক ড্যান হ্যানড্রিক ১৯৩০ এর দশকে যখন এ্যাটম বোমা তৈরির প্রস্তুতি চলছিল তখনও নিউক্লিয়ার সাইন্টিস্টরা সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। এখনো চ্যাট জিপিটি বা জিপিটি-ফোর তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না ফেললেও এর ভয়াবহতার ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। সে জন্য আমরা আগে থেকেই সতর্কতা দিচ্ছি। তিনি বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে ভয়াবহ চেহারায় আবির্ভূত হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো বিজ্ঞানী বা প্রযুক্তিবিদের কোনো ন্যূনতম সন্দেহ নেই।