প্রকৃতির ঐশ্বর্য, জীবনধারার স্নিগ্ধতা কিংবা প্রত্ন প্রাচুর্য সব জায়গায় পাওয়া যায় না। কিন্তু বগুড়ার শিবগঞ্জে তা আছে। আছে বলেই বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতকে এখানে এসেছিলেন সুদূর চীন থেকে। ঐতিহাসিক পুণ্ড্রনগর এখানে অবস্থিত। শিবগঞ্জের রায়নগর ইউনিয়নে মহাস্থানগড়ের মূল আকর্ষণ প্রাচীন দুর্গনগর। বুরুজ এবং রক্ষীকক্ষ সম্বলিত পূর্ব প্রাচীর তোরণটি দুর্গ নগর প্রবেশের প্রধান ফটক। পুণ্ড্রনগরকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা দুর্গনগর বলেছেন চারিদিকে বেষ্টনী থাকায়। দুর্গপ্রাচীরকে ঘিরে রাখা এই প্রচীরের দৈর্ঘ্য ১৯ হাজার বর্গফুট। পুণ্ড্রনগরের এই প্রাচীর ৬-১২ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত। প্রায় ২,৫০০ বছর পূর্বে প্রাচীন বঙ্গের পুণ্ড্রবর্ধন অঞ্চলের রাজধানী ছিল এই পুণ্ড্রনগর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এই নগরের পত্তন মৌর্য যুগে। এখানে জনবসতি ছিল প্রাক মৌর্য যুগেও। বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন এই নগর নিজের অস্তিত্ব লুকিয়ে রেখেছিল মহাস্থানগড়ের আড়ালে। নানা প্রত্নতত্ত্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই দূর্গ নগরে। নগরের পাশেই রয়েছে কূপ।
কথিত আছে, রাজা পরশুরাম মহাস্থানগড়ের কূপের পানি ছিটিয়ে মৃত সৈনিকদের জীবিত করতেন। বেষ্টনী প্রাচীর থেকে নজর দিলে পড়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। ইতিহাস যেন ঘুমিয়ে আছে এখানে। নিরাপত্তা প্রাচীরের নির্দিষ্ট দূরত্বে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও বুরুজ। দূর্গের এককোণে পাথরের তোরণ স্বাগত জানায় জাদুঘরকে। মহাস্থান এলাকায় যে মূল্যবান প্রত্নতত্ত্ব পাওয়া গেছে সেগুলোর ঠাই হয়েছে এই জাদুঘরে। সমৃদ্ধ এই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে ১৯৬৭ সালে। মহাস্থানগড় থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে গোকুল গ্রামে রয়েছে গোকুল মেধ।
এই গোকুল মেধের সাথে লুকিয়ে আছে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের কাহিনী। একদিকে নির্মাণশৈলী এবং অন্যদিকে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের কিংবদন্তীতুল্যতার কারণে বহু লোকের আনাগোনা এখানে। গোকুল মেধের এই স্থাপনাটি মাটি থেকে প্রায় ৪৫ ফুট উঁচুতে। বর্তমান নিয়ে যতই বিতর্ক থাক না কেন আমাদের অতীত কিন্তু দারুণ সমৃদ্ধ। শিবগঞ্জই এর প্রমাণ।
আসা যাওয়া ঢাকা থেকে খুব সহজেই বগুড়া যাওয়া যায়। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি, টেম্পো, রিকশা করে মহাস্থানগড় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে টি আর ট্রাভেলস, শ্যামলি পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস ও হানিফ এন্টারপ্রাইজের সকাল থেকে রাত অবদি বাস যাওয়া সা করে।
রাফসান জনি শিরু