পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে নির্মিত একটি হোটেল মহাকাশে অবকাশ কাটানোর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে। আর হোটেলটি বানানো হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যেই।
ভয়েজার স্টেশন নামে এই হোটেলটিতে ২৪ টি মডিউল থাকবে যা লিফট শ্যাফটের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে সংযোগ স্থাপন করবে। `হোটেলটির নকশা স্ট্যানলি কিউব্রিকের `২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ সিনেমাটির মতোই, এতে এমন সব ব্যবস্থা থাকবে যা মানুষ পৃথিবীতে করতে পারে না’
সিএএনএন জানায়, গেটওয়ে ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালে মহাকাশে একটি হোটেল তৈরির পরিকল্পনা প্রথম প্রকাশ করেছিল। সেই সময় এর নামকরণ করা হয়েছিল ভন ব্রাউন স্টেশন। এখন, গেটওয়ে ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান জন ব্লিনকোর নেতৃত্বে অরবিটাল অ্যাসেম্বলি কর্পোরেশন এই ভবিষ্যত কাঠামোটির নীলনকশা তৈরিতে কাজ করছেন।
গণমাধ্যমকে ব্লিনকো জানিয়েছেন, মহামারির কারণে কিছু পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে, তবে হোটেলটির নির্মাণ কাজ ২০২৬ সাল নাগাদ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে মহাকাশে এটি বাস্তবে রূপ নিতে পারে।
হোটেলটির রেন্ডারিংগুলো দ্বারা বোঝায়, যে এর নকশা পৃথিবীর বিলাসবহুল হোটেলগুলোর মতো করেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এর আগে, অরবিটাল অ্যাসেম্বলি কর্পোরেশনের সিনিয়র ডিজাইন আর্কিটেক্ট টিম আলাতোরে বলেন, হোটেলটির নকশা স্ট্যানলি কিউব্রিকের “২০০১: আ স্পেস ওডিসি” সিনেমাটির মতোই।
আলাতোরের মতে, এতে এমন সব ব্যবস্থা থাকবে যা মানুষ পৃথিবীতে করতে পারে না।
টিম আলাতোরে ও তার দলের লক্ষ্য হলো অত্যাধুনিক বার, রেস্তোঁরার মাধ্যমে হোটেলের পরিচিতি আনা। তবে, পুরোপুরি মহাকাশে থাকার অভিনবত্বটিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। হোটেলটি তাদের রেস্তোঁরায় “স্পেস ফুড” যেমন “শুকনো আইসক্রিম” অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে।
তিনি আরও বলেন, “ওজনহীনতা এবং ক্ষীয়মাণ মহাকর্ষ বলের কারণে আপনি উঁচুতে লাফিয়ে উঠতে পারবেন, জিনিস তুলতে সক্ষম হবেন, পৃথিবীতে যেভাবে দৌড়াতে পারেন না সেভাবেই দৌড়াতে পারবেন।” এছাড়া লিফটের শ্যাফটগুলো দিয়ে তৈরি ঘুর্ণায়মান চাকাটি কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ বল সৃষ্টি করবে।
তিনি জানান যে, “স্টেশনটির কেন্দ্রে কোনও উত্তেজক মাধ্যাকর্ষণ বল নেই, তবে আপনি বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথেই মাধ্যাকর্ষণ বল বাড়বে।”
হোটেলের আসল নাম ৬০ বছর পূর্বে ওয়ার্নার ভন ব্রাউনের ডিজাইন দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি ধারণাকে ফুটিয়ে তোলে। ব্রাউন ছিলেন এমন এক প্রকৌশলী যিনি জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে রকেট প্রযুক্তি প্ররোচিত করেছিলেন।
তবে, ব্রাউনের নামে হোটেলটির নামকরণ বেশ বিতর্কিত হয়েছিল। কেননা তিনি জার্মানির অধিবাসী ছিলেন। ভন ব্রাউন নাজি রকেট ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির অংশও ছিলেন।
ব্লিনকো সিএনএনকে বলেন, আংশিকভাবে এর নামটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্লিনকো বলেছিলেন, “স্টেশনটি আসলে তার সম্পর্কে নয়, বরং তার নকশার উপর ভিত্তি করেই এর নামকরণ করা।”
ভার্জিন গ্যালাকটিক থেকে শুরু করে এলন মাস্কের স্পেসএক্সের মতো সংস্থাগুলোর বাস্তবায়নের চেষ্টার মধ্য দিয়েই মহাকাশ পর্যটন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্পেসএক্স ভয়েজার স্টেশন হোটেলটিকে সহায়তা করতে পারে।
“আমরা স্পেসএক্সকে আমাদের অংশীদার বলতে পারি না, তবে ভবিষ্যতে আমরা তাদের সাথে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি,” ব্লিনকো অরবিটাল অ্যাসেম্বলির একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন। হোটেলটির রুমের সংখ্যা ও কাজের বিবরণ এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। তবে অবশ্যই একটি বড় দামের অঙ্ক আশা করা যায়। যেমন, ভার্জিন গ্যালাকটিক গ্রাহকদের মহাকাশে ঘোরার জন্য ট্রিপ প্রতি ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার চার্জ করে।
তবে, ভয়েজার স্টেশন দলের মতে, তারা হোটেলের কোনও অতিথিকে “ক্রুজ ভ্রমণে বা ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়ার” মতো অনুভব করাতে চায়। এই দলটি গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের আশা করে এবং মহাকাশ পর্যটন ও ব্যবসায়ের সুযোগ প্রচার করাই এর লক্ষ্য।
ব্লিনকো আরও জানান, “আমরা এই মুহূর্তে এমন সরঞ্জাম এবং মেশিন ডিজাইন করছি যা খুব দ্রুত এই কাঠামোটি দাঁড় করাতে পারে।”