শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

মধুচন্দ্রিমা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

বাঙালী সাংস্কৃতিতে একটা রেওয়াজ আছে, শীত এলে বিয়ের ধুম লাগে, সেই ধুমে রং ছড়াতে আরও বেশি বর্ণিল করে তোলার জন্য, ইদানীং জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনগুলোর ফিচারে বিশেষ আয়োজন করে থাকেন। হবু বর-কনের সাজ-সজ্জা, মধুচন্দ্রিমা, কি করণীয়, কি করা যাবে না, সংসার গুছানোসহ আরও অনেক কিছুই।

মধুচন্দ্রিমা, বিয়ে পরবর্তী এমন এক আয়োজন, যা নবদম্পতির মানসিক বোঝাপড়ায় বেশ অবদান রেখে থাকে। মধুচন্দ্রিমা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি এখন বিয়ে পরবর্তী গুছানো জীবনের অনুষঙ্গ। আর্থিক সামর্থ্যরে উপর নির্ভর করে প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে দু-চারটা দিন কোথায় কাটাবেন, দেশে না বিদেশে? আমাদের এই সুজলা-সুফলা, শ্যামল-সুন্দর বাংলাদেশেই রয়েছে অনেক অনেক সুন্দর জায়গা।

এ রকম অনেক অনেক সুন্দরতম আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে মাত্র দশটি জায়গার নাম দেয়া হলো- মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের জন্য দেশের মধ্যে সর্ব প্রথম যে জায়গাটির কথা আসবে তার নাম হলো কক্সবাজার। দারুণ এক পরিবেশ, মনোরম তার চার পাশ। তবে নতুন যুগলবন্দীরা এই সময়টা একটু বেশিই একান্তে কাটাতে চান, তাই তাদের জন্য পরিচিত জেলাগুলোর মধ্যে থেকে বেশ নিরিবিলি ও কোলাহল মুক্ত এবং নিরাপদ স্থানগুলো হলো যথাক্রমেÑ কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার মনোরম সমুদ্র সৈকত পাটুয়ারটেক, প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে গল্প আর খুনসুটি করার ছলে দৌড়ে বেড়ানোর মতো চমৎকার এক সাদা বালির সৈকত। জোয়ারে মন মাতিয়ে তুলবে আর ভাটার সময় যতদূর চোখর দৃষ্টি যায়, শুধুই দেখা যাবে হাজারো লাখো ছড়িয়ে থাকা প্রবাল, জীবন্ত সেই প্রবাল পাথরে বসে শুভ্র ফেনা তোলা ঢেউয়ে পা’দুলিয়ে ভেজাতে ভেজাতে করে নিন, আগামী দিনের সাংসারিক পরিকল্পনা।

দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় চলে আসে সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। স্থানীয়রা নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডেকে থাকেন। কারণ সেখানে রয়েছে প্রচুর নারিকেল গাছ। জোছনা রাতে সেই গাছের নিচে বসে ঝির ঝির বাতাস আর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়েÑ নববধূর কোলে মাথা রেখে, নানান গল্পে মেতে থাকার মুহূর্তগুলো আজীবন স্মরণীয় হয়ে রবে।

তৃতীয় যে জায়গাটি মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের জন্য স্মৃতির আঙ্গিনায় জলজল করবে, সেই দুর্নিবার আকর্ষণের বর্তমান সুপার হিট পর্যটন স্পট- ঢেউ খেলানো পাহাড়ের গায়ে গড়ে তোলা সাজেক ভ্যালি, ওয়াও! সাজেক। যাদের কিছুদিন হলো বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু ঠিক করেন নাই কোথায় যাবেন মধুচন্দ্রিমা উদযাপনে, তারা আর অন্য কোথাও চিন্তা না করে ছুটে যান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি, সাজেকের বর্ণনা আমি না হয় নাই দিলাম। আপনি নিজে গিয়েই দেখুন না, সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মিজোরাম পাহাড় থেকে জেগে উঠা সূর্যদোয়!

চতুর্থতম স্থান নেত্রকোনাÑ ইতিহাস ঐতিহ্য ও প্রকৃতির রানী নেত্রকোনা, মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চ করতে গিয়ে কেউ আর হতিহাস ঐতিহ্যের খোঁজ করবে না। করারও কথা না, তাই তাদের জন্য নেত্রকোনা জেলার সু-স দুর্গাপুর হলো বেস্ট হিট। সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে কিংবা চিনামাটি পাহাড়ের পাদদেশে, একান্তে দুজনে কাটিয়ে দিন না অনেকগুলো সোনালি সময়। ঘুরে বেড়ান সীমান্ত গ্রাম লেংগুরা পর্যন্ত।

পঞ্চম মৌলভী বাজার জেলার চা পাতার দেশ শ্রী মঙ্গল। চা বাগানের মাঝে কোন রিজোর্টের ব্যালকনিতে কিংবা খোলা প্রান্তরে দুজন-দুজনার হয়ে যাবার জন্য রয়েছে বেশ সুযোগ, আরও রয়েছে নীল পদ্ম ফোটা প্রকৃতির অপার নিয়ামত মাধাবপুর লেক। যেখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেয়সীর সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিন সময় নিশ্চিন্তে।

ষষ্টতম স্থান হলো, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনÑ কোলাহল থেকে অনেক দূরে হিরণ পয়েন্টে। মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের সময়গুলোতে মন চাইবে না আর ফিরে আসি শব্দ দূষণের ঘিঞ্চি শহরে। দিনের আলোতে ঘুরে বেড়াবেন কেওড়া শুঠি আর পূর্ণিমার আলোতে রেস্ট হাউসের- বারান্দাতে মজার মজার সব গল্প বলে। সপ্তম স্থান হলোÑ ঝুম ঝুম নিঝুম দ্বীপ, কেওড়া ও গোল পাতার ছায়ায় নববধূকে আলিঙ্গন করে রাখুন সারাক্ষণ। বনের হরিণও আপনাদের দুজনের আনন্দ ঘনমুহূর্তে, ছন্দপতনে ভূমিকা রাখবে না। শুধুই হবেন দুজন-দুজনার। আর এমন পারিবেশেই গড়ে তোলা যায় ভবিষ্যত সংসারের ভিক্তি।

অষ্টম স্থান হলো, রাঙ্গামাটি জেলার গহীনের সৌন্দর্য জুড়াছড়িÑ আজকাল অনেক দম্পতি আছেন যারা ব্যক্তি জীবনে এ্যাডভ্যাঞ্চার ট্রাভেল করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য জুড়াছড়ি একের মাঝে দুই, মেঘ যেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে অলস সময় কাটায়! ভাবুন’ত একবার, ওমন জায়গায় মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চের মাত্রাটা কেমন হতে পারে?

নবম স্থান হলো, বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার প্রকৃতির স্বর্গতিন্দুÑ তিন্দুর উপমা শুধু তিন্দুই। পাহাড়ী খরস্রোতা নদী শঙ্খর স্বচ্ছ জলে, রাত শেষে যখন কাকডাকা ভোরে ডুব দেবেন- তখন মনে হবে মধুচন্দ্রিমায় তিন্দু আসায়, দুজনের বন্ধন যেন হয়ে গেল চির অটুট। দশম স্থান হলোÑ খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায়, পাহাড়ের পিঠে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জোছনা বাড়ি। অনেকেই আছেন নববধূর সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্ত- মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের দিনগুলোতে দুপক্ষের পরিবারের সদস্যদেরও সঙ্গে রাখাতে চান। ভাগাভাগি করে সবার সঙ্গেই সোনালি সময়গুলো অতিবাহিত করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য

জোছনা বাড়ির বাগান ঘেরা পরিবেশের তুলনা আর হয় না। এছাড়া আরও রয়েছে আলু টিলা গুহাসহ অনেক বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে নবনন্দিনীকে সঙ্গে নিয়ে এ্যাডভ্যাঞ্চার রোমাঞ্চ করতে মজাই লাগবে বেশ। নেটে সার্চ দিলে, মিলে যাবে সব আকর্ষণীয় তথ্য। নবদম্পতিরা ছুটে যান মধুচন্দ্রিমা উদযাপনে। যোগাযোগ ও থাকা-খাওয়াÑ নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে সড়ক ও নৌপথে যেতে হবে, তবে নৌপথে বেশ নিরাপদ। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজ ছেড়ে যায় নোয়াখালীর হাতিয়া, সেখান থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ। থাকা খাওয়ার জন্য থাকুন নিশ্চিন্ত। যাবার আগে যোগাযোগ করে যাবেন নিউ ইস্কাটনে অবস্থিত অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবানÑ ঢাকা থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন পরিবহনের এসি/ননএসি বাস সার্ভিস রয়েছে। বান্দরবানের শহর থেকে লোকাল বাস/জিপে থানচি। থানচি বাজার হতে ট্রলারে তিন্দু। থাকা খাওয়ার জন্য কটেজ রয়েছে। ভাড়া সহনীয়। জোছনা বাড়িÑ থাকা খাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন কটেজের স্বত্বাধিকারী মি. সামির মল্লিকের নিকট। যোগাযোগ সি.টি.জি ফেসবুক পেজ। জুড়াছড়িÑ ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিজার্ভ বাজার হতে জাহাজে জুড়াছড়ি। থাকা খাওয়া আদিবাসীদের ভাড়া দেয়া ঘরে। পাহাড় ঘেরা ছোট্ট ঘরে মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চ হয়ে উঠবে ষোল কলায় পূর্ণ। সুন্দরবন ঢাকা থেকে মঙ্গলা, বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জালি বোটে হিরণ পয়েন্টে, যাবার আগে অবশ্যই বন বিভাগ হতে অনুমতি নিয়ে যাবেন। সাজেক ভ্যালিÑ ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা।

সেখান থেকে জিপে/মোটরবাইকে অপরূপ সাজে সাজানো সাজেক ভ্যালি। থাকা-খাওয়ার জন্য নেটে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন পূর্ণাঙ্গ তথ্য। নেত্রকোনাÑ ঢাকার মহাখালী হতে সুসং-দুর্গাপুরের বাসে। সময় লাগবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। থাকবেন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ ওয়াই এম সিতে। খাবেন লাল বিড়ই চালের ভাত আর সোমেশ্বরী নদীর মাছের ঝোল দিয়ে। সেন্ট মার্টিনÑ ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ, বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ে স্বপ্নের আঙ্গিনা, কোড়াল দ্বীপ সেন্টমার্টিন চলে যান। থাকবেন সায়েরি ইকো রিসোর্টসহ বেশকিছু উঁচুমানের হোটেল-মোটেল রয়েছে সেখানে। চাইলেই কটেজের রাধুনী শিল্পীদের দিয়ে, নানান পদের সামুদ্রিক মাছ রান্না করিয়ে, স্বাদ নিতে পারবেন।

শ্রীমঙ্গল বাস ও ট্রেন দুটোই চলাচল করে। তবে ট্রেনে চড়ে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে যাবার অনুভূতিই হবে অন্যরকম। থাকবেন-খাবেন, লাউয়াছড়া বনের পাশে গড়ে উঠা আনন্দবাড়িসহ বেশকিছু কটেজে। তবে যেখানেই থাকুন না কেন হাঁসের গোস্তের ঝোল দিয়ে-চিতই পিঠা আর নীল কণ্ঠের সাত রঙ্গের চা পান করতে ভুল যেন না হয়। খরচাতিÑ দশটি জায়গার মধ্যে চারটি বাদ দিলে বাকি ছয়টি জায়গায়, এক সপ্তাহ মধুচন্দ্রিমায় খরচ হবে বার থেকে পনেরো হাজার টাকা মাত্র। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সাজেক ও শ্রীমঙ্গল এই চারটি জায়গায় খরচের লাগাম নিজেকেই টানতে হবে। এক সপ্তাহে মোটামুটিভাবে কাটাতে চাইলেও ন্যূনতম পঞ্চাশ থেকে এক লাখ টাকা খরচ হবে। বিস্তারিত আরও কিছু তথ্য পেতে, দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ ফেসবুক গ্রুপ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com