বিয়ে মানে সারা জীবনের বন্ধন। একসঙ্গে ভ্রমণও বটে। এই ভ্রমণের শুরুটা হয় মধুচন্দ্রিমা থেকে। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে দুজনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে মধুচন্দ্রিমায় যায়। তারপর একে অন্যকে চিনতে শুরু করে, জানতে শুরু করে। এই চেনা-জানাই পুরো জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। আর এ প্রথাটা আজকের নয়, অনেক আগের। দেশে কিংবা বিদেশে পছন্দের জায়গায় হোক মধুচন্দ্রিমা তথা হানিমুন।
দেশে কোথায় যাবেন
শুরুতেই আসবে কক্সবাজারের নাম। আমাদের দেশে সবচেয়ে স্বীকৃত এই ট্যুরিস্ট স্পটে সমুদ্র আর পাহাড় একই সঙ্গে উপভোগ করা যায়। পাশাপাশি ঘুরে দেখা যায় ইনানী ও মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন অসাধারণ সব জায়গা। সি ফুডসহ বিভিন্ন দেশীয় মুখরোচক খাবার তো আছেই। আছে দেশের সবচেয়ে বড় অ্যাকুরিয়াম। কক্সবাজার থেকে চাইলে যেতে পারেন মহেশখালী।
সেন্ট মার্টিন
সেন্ট মার্টিন হানিমুন কাটানোর জন্য অসাধারণ জায়গা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই প্রবাল দ্বীপের চমৎকার সব রিসোর্টে বসে উপভোগ
করা যাবে সমুদ্রের পরিষ্কার নীলাভ পানি ও মুখরোচক খাবার। অ্যাকটিভিটি হিসেবে পাওয়া যাবে স্কুবা ডাইভিং। চাইলে ছোট ট্রলারে বসে মাছ ধরার অভিজ্ঞতাও নেওয়া যাবে। আপনার প্রিয়জন যদি সমুদ্র পছন্দ করে থাকে, তাহলে এটাই হচ্ছে আপনার জন্য সেরা গন্তব্য।
ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত যাওয়া যায়
সেন্ট মার্টিন।
সাজেক
দুজনে যদি পাহাড়প্রেমী হন, তাহলে সেরা গন্তব্য মেঘের রাজ্য সাজেক। কাপলদের জন্য হালের ক্রেজ সাজেক হচ্ছে নিজেদের মতো একান্ত সময় কাটানোর খুবই চমৎকার একটি জায়গা। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত— দুটোই উপভোগ করা যাবে কাংলাক পাহাড় থেকে। এ ছাড়া স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মাংস রান্না হানিমুন ট্রিপে এনে দেবে বাড়তি আনন্দ। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এই এলাকা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। সারা বছর সাজেক ভ্রমণ করা যায়। এটি একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে।
এ ছাড়া অল্প দিনের জন্য নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে সিলেট-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার এলাকার বিভিন্ন রিসোর্ট বেছে নিতে পারেন। বেশ ছিমছাম এই এলাকায় চা-বাগানসহ দেখা যাবে ঝরনা ও ঝিরির সৌন্দর্য। বছরের যেকোনো সময় যাওয়া যায় সিলেট-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার।
বিদেশে
দেশের বাইরে বাঙালিদের হানিমুন গন্তব্য ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মীর। ডাল লেকে হাউস বোট, গোলকন্ডা রাইড, টিউলিপ গার্ডেন, শিকারা রাইড, আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি ও গুলমার্গের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। এর বাইরে যদি আপনারা রোমাঞ্চপ্রিয় হয়ে থাকেন, তাহলে যেতে পারেন বিভিন্ন ট্রেইলে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গেলে দেখতে পাবেন তুষারপাত। এ ছাড়া হিমালয়ের বিস্তীর্ণ রেঞ্জে অবস্থিত লেক ও সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য সব সময়ই চোখের সামনে থাকবে কাশ্মীরে। অক্টোবর থেকে জুন মাস পর্যন্ত কাশ্মীর যাওয়ার উপযুক্ত সময়।
অন্যান্য জায়গা
ইদানীং আমাদের দেশে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ভ্রমণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ অঞ্চলে আছে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ভ্রমণ গন্তব্য তিব্বতের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সিকিম, গ্যাংটক, লাচুং ও কাটাওয়ে। এ অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের কোনো জুড়ি নেই। তবে এসব এলাকায় বরফ দেখতে চাইলে নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত ভালো সময়। নাথুলা পাস, এমজি রোড কিংবা ছাঙ্গু লেকের অপরূপ দৃশ্য নজর কাড়বে।
মালদ্বীপ
বাজেট বেশি থাকলে হানিমুন ট্রিপের জন্য ভালো গন্তব্য মালদ্বীপ। পরিষ্কার পানি ও সাদা বালুর বিচখ্যাত এই দ্বীপরাষ্ট্রে মধুচন্দ্রিমার অভিজ্ঞতা হবে অবিস্মরণীয়। প্রতি মুহূর্তকে উপভোগ্য করার জন্য এখানে রয়েছে প্যারাগ্লাইডিং, স্নোরকেলিং, বিকেলবেলা মাছ ধরা, তিমি মাছ দেখা, হাঙরকে খাবার দেওয়াসহ আরও বিভিন্ন ধরনের রোমাঞ্চকর অ্যাক্টিভিটি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্পিডবোট নিয়েও ঘুরে বেড়াতে পারবেন সাগরের বুকজুড়ে।
শ্রীলঙ্কা
সাগরের পাশাপাশি পাহাড়ি সৌন্দর্য পছন্দ করলে হানিমুন পয়েন্ট হতে পারে শ্রীলঙ্কা। এখানে সবুজ পাহাড়ের পাশাপাশি পাওয়া যাবে জঙ্গল সাফারি, নীল পানির ভারত মহাসাগর এবং গোল্ডেন স্যান্ড বিচ। ঘুরতে পারবেন ক্যান্ডি, কলম্ব, এলা, মিরিশা, গালের মতো বিখ্যাত সব শহর। সেগুলোতে আছে সুন্দর সুন্দর চার্চ, মন্দির ও মসজিদ। তবে বিবেচনায় রাখতে হবে শ্রীলঙ্কায় হানিমুন ট্রিপের জন্য বাজেট কিছুটা বেশি রাখতে হবে। বছরজুড়ে দেশটিতে যাওয়া যায়। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যাওয়া ভালো।
থাইল্যান্ড
হানিমুনের লাক্সারি ট্রিপ হতে পারে থাইল্যান্ডে। ফি ফি আইল্যান্ড, আও নাঙ, ফুকেট, ক্রাবি, পাতায়া ঘুরতে পারবেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকতসংবলিত এক অসাধারণ পর্যটকবান্ধব দেশে মধুচন্দ্রিমার অভিজ্ঞতা
হবে অসাধারণ।
পাহাড়ের দেশে
যাঁরা পাহাড়প্রেমী, তাঁদের জন্য অদ্বিতীয় গন্তব্য অবশ্যই হিমালয়কন্যা নেপাল। নাগরকোট, পোখারা, চিতওয়ান, কাঠমান্ডুসহ হিমালয়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শহরের নির্জনতা ছুঁয়ে যাবে আপনাদের। স্বল্প বাজেটে রোমাঞ্চকর হানিমুনের জন্য নেপাল হতে পারে ভালো জায়গা।