বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

মধুচন্দ্রিমায়

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

বিয়ের পরপরই নবদম্পতির দু’জনই চান নির্জনে ঘুরে আসতে। কেউ যান সমুদ্রে, কেউ যান পাহাড়ে নৈসর্গিক আবহে। একসঙ্গে পথচলার শুরুতে দু’জন মিলে কয়েকদিনের জন্য বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকে সবারই। পরস্পর বুঝে নেওয়ার জন্য এর থেকে সঠিক পরিকল্পনা আর হতে পারে না। আমাদের দেশেই রয়েছে মন মাতানো সৌন্দর্যের বেশ কয়েকটি স্থান। ঘুরে আসতে পারেন দু’জন মিলে।

সমুদ্রস্নানে চলো

মধুচন্দ্রিমায় পছন্দের সবার ওপরে থাকে সমুদ্র। ভিড় এড়িয়ে একটু নিরিবিলিতে যারা অপূর্ব সুন্দর এ সৈকতে ঘুরতে চান, তাদের জন্য ঋজু খালঘেঁষে গড়ে ওঠা মারমেইড ইকো রিসোর্ট পারফেক্ট। পাশেই ইনানি বিচ, টেকনাফের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ইসলামগঞ্জ-শাপলাপুর গ্রামের অনিন্দ্যসুন্দর সৈকত। নিরাপত্তার ব্যাপারে একটু সাবধান থাকলেই সমুদ্র আর বালিয়াড়ির দুটোই বেশ প্রাকৃতিকভাবে উপভোগ করা যায়। টেকনাফ পেরিয়ে নারকেল জিঞ্জিরা বা সেন্টমার্টিন দ্বীপও হতে পারে আপনার মধুচন্দ্রিমার গন্তব্য। সেন্টমার্টিনের যাত্রায় আপনাকে সঙ্গ দেবে ঝাঁকঝাঁক গাংচিল। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপটিতে নারকেল গাছের আধিপত্যের কারণে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়। পানির স্বচ্ছতায় সাগরতলার প্রবাল আর শৈবালগুচ্ছ আপনাদের মুগ্ধ করবেই।

ওই দূর পাহাড়ে

বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি- তিন জেলাতেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল। এ ছাড়া বান্দরবানে মিলনছড়ি, সেনাবাহিনীর নীলগিরি, সাকুরা রিসোর্টসহ আরও বেশকিছু ভালো মানের রিসোর্ট রয়েছে।

সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ি থেকে। যদি বাসে যান তাহলে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা। সাজেকে একটা ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এখানে ২৪ ঘণ্টায় প্রকৃতির তিনটি রূপই দেখা মেলে। কখনও খুবই গরম, একটু পরই হঠাৎ বৃষ্টি এবং তার কিছু পরই হয়তো চারদিক ঢেকে যায় মেঘের চাদরে; মনে হয় যেন একটা মেঘের উপত্যকা। সাজেকের রুইলুইপাড়া থেকে ট্র্যাকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

নীলগিরি হিল রিসোর্ট

নীলগিরি হিল রিসোর্টটি বান্দরবান জেলায় নীলগিরি পাহাড়ের পাশে অবস্থিত। এই রিসোর্টটি পর্যটক ও নবদম্পতির মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় যে, যাওয়ার কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো বাস অথবা নিজেদের গাড়ি। এসি, নন-এসি সব ধরনের বাসের টিকিট সহজেই পাওয়া যায়। এতে কমপক্ষে খরচ হবে ৫৫০-৭৫০ টাকা প্রতিজন এবং পৌঁছতে সময় লাগবে ৮-১০ ঘণ্টা। এই রিসোর্টটি বান্দরবান শহর থেকে আরও ৪৭ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান শহরে পৌঁছানোর পর এলাকার চাঁদের গাড়ি অথবা জিপে করে নীলগিরি যেতে হবে এবং এতে খরচ পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা প্রতি গাড়ি। রিসোর্টটি এতটাই সুন্দর, সেখানে পৌঁছতে যতটা কষ্ট, সেখানের পরিবেশ দেখে সব ভুলে যাবেন। এখানে থাকার খরচ পড়বে আনুমানিক ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিনপ্রতি। এটি বাংলাদেশ আর্মি দ্বারা পরিচালিত।

চায়ের দেশে

সিলেট-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজারে ঘোরাঘুরির জন্য আদর্শ সময় বর্ষা হলেও শীতকাল এখানে উপভোগ্য। হালকা শীতে ধূমায়িত চায়ের কাপ হাতে শ্রীমঙ্গলের টি রিসোর্টের বারান্দায় প্রিয়জনকে নিয়ে বসে থাকা রোমান্টিক নিশ্চয়ই। আছে মাধবকুণ্ডের ঝরনা, জাফলং, জৈন্তা, খাসিয়া পল্লি। এ সময় সিলেটে এলে অন্যতম আকর্ষণ ভোলাহাট, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পানথুমাই, লক্ষ্মণছড়া মিস করবেন না নিশ্চয়। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ টি-রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসোর্ট বুকিং দিতে হয় বেশ আগে। সেখানে ঠাঁই না মিললে রয়েছে শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, মৌলভীবাজারে দুসাই রিসোর্ট, সিলেট লালাখালের পাশে নাজিমগড় রিসোর্টসহ ভালো মানের আরও অনেক হোটেল-মোটেল। চাইলে থাকতে পারেন শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জের রেমা কেলেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেস্ট হাউসেও। বন বিভাগের পাশাপাশি নিসর্গ কটেজও আছে বেশকিছু। বর্ষাকাল সিলেটের হাওর আর বিলে ঘোরাঘুরির মূল সময় হলেও এ শীতে অতিথি পাখিদের সঙ্গে ভ্রমণে পাবেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

সুন্দরবন

বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণের আবাস সুন্দরবন মধুচন্দ্রিমায় গন্তব্য হিসেবে মন্দ নয়। ঋতুভেদে এ বন বারবার রূপ পাল্টায়। নিসর্গ উপভোগ, লঞ্চ থেকে নেমে নৌকায় সূর্যোদয় দেখা, কুমির, বানর, হরিণ, সাপ, হাজারো পাখি দেখার আনন্দই আলাদা।

সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ আর বাগেরহাটের মোংলা এ জন্য আদর্শ। মোংলায় পর্যটনের পশুর হোটেলে রাত কাটিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন করমজল, হাড়বেড়িয়ার মতো জায়গাগুলো। খুলনা-মোংলা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়; মোংলা থেকে কিছুদূর গেলে কচিখালী হয়ে যাওয়া যায় কটকা পর্যন্ত। আবার সাতক্ষীরার বুড়ি গোয়ালিনী রেঞ্জ দিয়ে সুন্দরবনের অনেক গভীরে জামতলা পর্যন্ত। দূরের গন্তব্য কটকা আর হিরণ পয়েন্ট। সাতক্ষীরায় বর্ষা রিসোর্ট আর এনজিওগুলোর রেস্ট হাউসে রাত কাটিয়ে গভীর অরণ্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে।

রিসোর্টনামা

বর্তমানে বাংলাদেশে এমন অনেক রিসোর্ট হয়েছে, যেগুলোতে গেলে আর আলাদা করে কোথাও বেড়াতে যেতে হয় না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বান্দরবানের সাইরু হিল রিসোর্ট, নড়াইলের অরুনিমা রিসোর্ট, সিলেটের দ্য প্যালেস রিসোর্ট ও গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্ট ও রয়্যাল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।

অন্য কোথাও

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সূর্যাস্ত আপনাকে মুগ্ধ করবে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে একই সঙ্গে পাহাড় আর জলের যুগলবন্দিও চোখ জুড়িয়ে দেয়। মনে রাখবেন, হানিমুন আপনার সারাজীবনের একমাত্র অভিজ্ঞতা। অতএব একে করে তুলুন জীবনের সবচেয়ে রোমান্টিক মুহূর্ত। উপভোগ করুন দু’জনে মিলে। একে অন্যকে বুঝতে, একে অন্যের পছন্দ-অপছন্দ, পরিকল্পনা সবকিছু জানতেই সময় লাগে অনেকটা। আর এই বোঝাপড়াটা ভালোভাবে করতে হলে একে অন্যকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাই তো বিয়ের পর হানিমুনে যাওয়া নবদম্পতির একান্ত জরুরি।

সীমানা পেরিয়ে

কভিডকালে দেশের বাইরে হানিমুনে যেতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করে যেতে হবে। একেক দেশের একেক নসরত আরোপ করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে যাবেন। মধুচন্দ্রিমায় দেশের সীমানা পেরিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই। সঙ্গীকে নিয়ে বাছাই করে নিন কোন দেশে যাবেন।

কভিডকালে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দু’দেশের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে মালে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে।

বাজেট নিয়ে ভাবনা

বাজেট নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলেন তাই না? খুব বেশি ভাবতে হবে না প্রিয় পাঠক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ট্রাভেল লোন দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের সেবা নিয়েও বিভিন্ন হানিমুন ট্যুর প্যাকেজের সেবা নিতে পারেন। তাহলে আর দেরি কেন! সঙ্গীকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলুন কবে কোথায় যাচ্ছেন। আপনার ভ্রমণ আনন্দের ও নিরাপদ হোক। শুভকামনা।

লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া
ছবি: ড্রিম উইভার

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com