করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় থমকে আছে পুরো পৃথিবীটা। আহ্নিক গতির কারণে দিন-রাত হচ্ছে, শুধু গতি থেমে গেছে মানজীবনের। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে ঘরে বসে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাসও বাঙালির অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। রাজধানীর শাহবাগ-রমনা এলকায় আয়োজন করা হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রায় থাকে নানা ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম, বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও প্রাণীর প্রতিকৃতি। যে যাত্রায় জমায়েত হয় হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বাংলাদেশের নতুন সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এবার একটু ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। ১৯৮৫ সালে যশোরে চারুপীঠ নামের একটি সংগঠন এধরণের একটি শোভাযাত্রা করেছিল। যার উদ্যোক্তারা ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনে ভূমিকা রাখেন। মূলত সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু। চারুকলা থেকে এই শোভাযাত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। সে হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার পা দিল ৩১ বছরে। একবিংশ শতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব হিসাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শুরুর দিকে এটি তেমন বর্ণাঢ্য ছিল না। প্রথম শোভাযাত্রার একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিজ-নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছিলেন অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক। কিছুটা সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, বিশেষ করে চিত্রশিল্পীরা এই মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিকল্পনা করেন। শুরুতে এই আয়োজনের নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। যার ১৯৯৬ সালে নাম হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইউনেসকো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে মূল্যায়ন করেছে অন্যায় ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের মানুষের সাহসী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর স্বীকৃতি পায় বিশ্ব ঐতিহ্যের।
প্রতিবছর শোভাযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ থাকে বাঁশ এবং কাগজের তৈরি নানা ভাস্কর্য। যা তৈরি হয় কোন একটি প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে। এসব মুখোশ বা অন্যান্য মোটিফের যে কোন একটা বৈশিষ্ট্য আছে, সেটা শোভাযাত্রা দেখলে হয়তবা অনেকের চোখে পড়বে। শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল এই শোভাযাত্রাটিতে ‘বাঙ্গালির ঐতিহ্য থেকে উপাদান নেয়া এবং দেশের কল্যাণের জন্য একটি আহ্বান।
আজ আমরা যুদ্ধ করছি করোনা নাম এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে। ঘরে থেকেই এই অদৃশ্য শত্রুকে আমরা হারাবো। বাংলা নতুন বছরে আমাদের প্রত্যয় হোক ঐক্যতার। নিজেকে নিরাপদ রাখি, পরিবারকে নিরপদ করি। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।