আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে পবিত্র শহর মক্কাকে কয়েকটি নামে সম্বোধন করেছেন। তাহলো-
১. মক্কা।
২. বাক্কা।
বিজ্ঞাপন
৩. আল-বালাদ।
৪. আল-কারিয়াহ।
৫. উম্মুল কুরা
اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ
‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত। তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য পথের দিশারী।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৯৬)
وَ ضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا قَرۡیَۃً کَانَتۡ اٰمِنَۃً مُّطۡمَئِنَّۃً یَّاۡتِیۡهَا رِزۡقُهَا رَغَدًا مِّنۡ کُلِّ مَکَانٍ
‘আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিজিক তাতে বিপুলভাবে আসত।…’ (সুরা নাহল: আয়াত ১১২)
পবিত্র নগরী মক্কার সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশের জন্য আল্লাহ তাআলা মক্কার কসম করে বলেছেন-
لَاۤ اُقۡسِمُ بِهٰذَا الۡبَلَدِ
‘আমি কসম করছি এই নগরীর।’ (সুরা বালাদ: আয়াত ১)
البلد বা নগরী বলে এখানে মক্কা নগরীকে বোঝানো হয়েছে। (ইবনে কাসির) এমনিভাবে সুরা আত-ত্বীনেও মক্কা নগরীর শপথ করা হয়েছে এবং তদসঙ্গে أمين বিশেষণও উল্লেখ করা হয়েছে।
মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফের পরিধি
কাবা ঘর ও এর চারপাশে তওয়াফের জায়গা বেষ্টন করে যে মসজিদ স্থাপিত হয়েছে, তা মসজিদুল হারাম নামে পরিচিত। কাবা ঘরের চারপাশে তওয়াফের জায়গার মেঝেকে মাতাফ বলা হয়। কাবা ঘরের তওয়াফ শুরু করার কর্নারটি রোকনে হাজরে আসওয়াদ নামে পরিচিত। এর ডান পাশের কর্নারটি রোকনে ইরাকি, তার ডান পাশের কর্নারটি রোকনে শামি এবং তার ডান পাশের কর্নারটি রোকনে ইয়েমেনি নামে পরিচিত।
পবিত্র নগরী মক্কার ফজিলত
পবিত্র নগরী মক্কায় মুমিন মুসলমানের বসবাসের জন্য উত্তম। এখানের নেকি এবং ইবাদতও উত্তম। আবার এখানে খারাপ কাজ এবং পাপের গুনাহও অনেক বেশি। পবিত্র এ শহর মক্কাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। মক্কায় কখনও মহামারী/প্লেগ রোগ ছড়াবে না। মক্কায় দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। কেননা মক্কায় প্রবেশের সব পথে আল্লাহর ফেরেশতারা রক্ষী হিসাবে অবস্থান করছেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আদি ইবন আল-হামরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘আল্লাহর কসম! হে মক্কা তুমি আল্লাহর সকল ভূমির চেয়ে উত্তম ও আমার কাছে অধিক প্রিয়। আমাকে যদি তোমার থেকে বের হওয়ার জন্য বাধ্য না করা হতো তাহলে আমি কখনো বের হতাম না।’ (তিরমিজি ৩৯২৫, ইবনে মাজাহ ১৩০৮)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদে হারাম ছাড়া আমার এ মসজিদে (মসজিদে নববি) নামাজ অন্য স্থানে নামাজের চেয়ে ১ হাজার গুণ উত্তম, আর মসজিদে হারামে নামাজ ১ লক্ষ নামাজের চেয়ে উত্তম।’ (ইবন মাজাহ ১৩৯৬)
কাবা শরিফ ও হারামের সীমানা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় কাবা ও মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে অনেক বসতি গড়ে উঠেছিল যা পরবর্তীতে ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদের জন্য নামাজের জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে প্রথমে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও পরে হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের আশেপাশের জায়গা লোকদের কাছ থেকে ক্রয় এর সীমা বর্ধিত করেন ও প্রাচীর দিয়ে দেন।
পরবর্তীতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের পূর্বদিকে এবং আবু জাফর মনসুর পশ্চিম দিকে ও শামের দিকে প্রশস্ত করেন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন মুসলিম শাসকদের আমলে মসজিদুল হারামের সীমা বর্ধিত হয় ও সংস্কার সাধিত হয়।
এরপর প্রায় এক হাজার বছর মসজিদের সীমা বর্ধিত করার কোনো কাজ করা হয়নি। এরপর ১৩৭০ হিজরিতে সৌদি বাদশাহ আব্দুল আযীয ইবন আব্দুর রহমান আল সাউদের আমলে মসজিদের জায়গা ছয় গুণ বৃদ্ধি করা হয়। যার আয়তন হয় ১,৮০,৮৫০ মিটার।
এ সময়ে মসজিদে মার্বেল পাথর, আধুনিক কারুকার্য, নতুন মিনার সংযোজন করা হয়। সাফা-মারওয়া দোতলা করা হয়। ছোট বড় সব মিলিয়ে ৫১টি দরজা তৈরি করা হয় মসজিদে। বর্তমানে এ দরজার সংখ্যা আরও বেশি।
এরপর সৌদি বাদশা ফাহাদ ইবন আব্দুল আযীয কাবা শরিফ ও মসজিদে হারামের প্রশস্তকরণের কাজে হাত দেন। তিনি মসজিদের দোতলা, তিন তলা ও ছাদে নামাজে ব্যাবস্থা করেন। তিনি মসজিদের আধুনিকায়নের জন্য অনেক কাজ করেন।
সর্বশেষ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে মসজিদুল হারামের তওয়াফ ও মূল মসজিদ প্রশস্তকরনের দায়িত্ব পায় সৌদি ইবন লাদেন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এখন এ প্রশস্তকরনের কাজ প্রতীয়মান।
পবিত্র নগরী মক্কার সীমানা
পশ্চিম দিকে
শুমাইসী (হুদায়বিয়া) যা মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে জেদ্দার রাস্তায় ২২ কি: মি: দূরে অবস্থিত।
পূর্ব দিকে
তায়েফের রাস্তায় ‘উরানা’ উপত্যকার পশ্চিম পার্শ্ব পর্যন্ত। যা মসজিদে হারাম থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব। জেরানার দিক থেকে মোজাহিদিনের পথ হয়ে মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ১৬ কিলো মিটার দূরত্ব।
উত্তর দিকে
‘তানঈম’ পর্যন্ত; যা মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ৭ কিলো মিটার দূরত্ব।
দক্ষিণ দিকে
‘আযাতু লীন’ ইয়ামেনের রাস্তা। যা মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ১২ কিলো মিটার দূরত্ব।