করোনা নামক মহামারি পাল্টে দিয়েছে বিশ্বের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষের জীবনেও এ ব্যাধি চাপিয়ে দিয়েছে নানা শৃঙ্খল। মানুষের খাদ্যাভ্যাস, চলাচল, আনুষ্ঠানিকতা, বিনোদন থেকে শুরু করে সব কিছুতেই অস্বস্তি সৃষ্টি করে চলেছে করোনা। বাধা সৃষ্টি করেছে ভ্রমণপিপাসুদের যাত্রায়। যাঁরা প্রতিনিয়ত ভ্রমণ করেন, দীর্ঘ লকডাউন তাঁদের যেন বন্দি করে দিয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতির অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। হয়তো অনেকেই পরিকল্পনা করছেন করোনা-পরবর্তী ভ্রমণের। আপনার সেই ভ্রমণ পরিকল্পনায় থাকুক কুয়াকাটা। কারণ দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় পর্যটকহীন প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। সৈকত কুয়াকাটার রূপ যেন আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে।
সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি রাখাইন পল্লি। আদিবাসী রাখাইনদের জীবনব্যবস্থা, তাদের জীবিকা ও বসতি সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে কুয়াকাটা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। পল্লির পাশে রয়েছে একটি রাখাইন মার্কেট। সেখানে মিলবে তাঁতে বোনা পোশাক, বার্মিজ প্রসাধন, বার্মিজ জুতা, আচারসহ হরেক পণ্য। দেখতে পাবেন রাখাইন উপাসনালয় এবং কুয়াকাটা নামকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেই পানির গভীর কূপটি।
কুয়াকাটা বিচ থেকে আট কিমি দূরত্বে রয়েছে আমখোলা নামক আরো একটি রাখাইন পল্লি। রয়েছে মিছরিপারার মন্দির। সেই মন্দিরে ঢুকতেই দেখতে পাবেন বৃহৎ আকৃতির একটি বুদ্ধমূর্তি। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের নিকট বিক্রির উদ্দেশ্যে সাজিয়ে রাখা হয় হরেক শামুক-ঝিনুকের পণ্য। ঘর সাজানোর আসবাবসহ পাওয়া যাবে শৌখিন নানা কারুপণ্য।
কুয়াকাটায় আগতদের আবাসিক সেবা দিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-মোটেল। মাত্র ৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা অবধি আরামদায়ক কামরা প্রস্তুত রয়েছে পর্যটকদের সেবায়। আর খাবারের চাহিদা পূরণ করতে এখানে রয়েছে একাধিক রেস্তোরাঁ। এসব রেস্তোরাঁয় মিলবে একাধিক সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি মাছের ভর্তা।
যাতায়াত : ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে কুয়াকাটা রুটের একাধিক বাস চলে। সেসব বাসে সরাসরি কুয়াকাটাতে পৌঁছানো যাবে। যাতায়াত ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া লঞ্চে করে আসা যাবে কুয়াকাটার পথে। সেক্ষেত্রে নামতে হবে বরগুনা জেলাধীন আমতলি লঞ্চঘাটে। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১০০০, ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা। ডেকে জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা। লঞ্চ থেকে নেমে লোকাল ট্রান্সপোর্টে কুয়াকাটা অবধি আসতে হবে। এতে খরচ পড়বে আরো ১৫০ টাকা।
হয়তো করোনা কিংবা লকডাউন বিদায় নেবে। স্বাভাবিক হয়ে উঠবে মানুষের জীবনযাত্রা। ঘরবন্দি সময়ের অবসান হবে। ভ্রমণের জন্য উতলা হবেন আপনিও। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনার স্থান হোক কুয়াকাটা। কুয়াকাটার পথে আপনাকে স্বাগতম।