সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ অপরাহ্ন

ভ্রমণে হৃদয় হরণ করা খাবার

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা নবদ্বীপ হালদারের কৌতুকগীতি ‘শরীরটা আজ বেজায় খারাপ’-এ গেয়েছেন, ‘বাগবাজারের রসগোল্লা, ভীমনাগের সন্দেশ/ বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা দরবেশ।’ যথার্থ বলেছেন নবদ্বীপ হালদার। বিশেষত সীতাভোগ মিষ্টি সম্পর্কে তার উক্তিটি অনন্য।

শান্তিনিকেতন থেকে ফেরার পথে শক্তিগড় অভিরাজ সুইটস অ্যান্ড ফুড হোটেলে গাড়ি দাঁড়ালো; আমি হোটেলে গিয়ে ল্যাংচার পাশাপাশি নতুন কিছু খোঁজ করছি। পেটে তখন প্রচণ্ড ক্ষুধা! ভাতের বা চিড়ার মতো দেখে অর্ডার দিলাম। দেখি মিষ্টি শ্রেণির খাবার আবার জর্দার মতো স্বাদ। এক বাক্য দিয়ে এর বিশেষণ শেষ হবে কি? সীতাভোগ এক হৃদয় হরণ করা বিশ্বজনীন খাবার। ল্যাংচার সাথে সীতাভোগ উপভোগ করলেও সেদিন অজানা কারণে মিহিদানা থেকে বঞ্চিত হলাম। অথচ মিহিদানাও পশ্চিমবাংলার বিখ্যাত খাবার। পরে অবশ্য মিহিদানার স্বাদ নিয়েছিলাম।

বড় লাট জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন বর্ধমানের জমিদার বিজয়চাঁদ মহতাবকে মহারাজা খেতাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯০৪ সালে বর্ধমান ভ্রমণ করেন। জর্জ কার্জনের বর্ধমান আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয়চাঁদ মহতাব বর্ধমানের জনৈক মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টি তৈরি করতে বলেন। ভৈরবচন্দ্র নাগ সীতাভোগ ও বর্ধমানের অপর বিখ্যাত মিষ্টান্ন মিহিদানা তৈরি করেন। কথিত আছে, কার্জন সীতাভোগ খেয়ে এতটাই প্রীত হয়েছিলেন যে, সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি সীতাভোগ পরিবেশন করা বাধ্যতামূলক করেন।

সীতাভোগ পশ্চিমবাংলার এক প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। বর্ধমানের সীতাভোগ বিখ্যাত; যা দেখতে অনেকটা বাসমতি চালের ভাতের মতো হয়ে থাকে। সীমানা পেরিয়ে সীতাভোগ মিষ্টান্ন বাংলাদেশের মানুষের কাছেও সুনাম কুড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সীতাভোগ পরিবর্তিত নামে, কখনো নিজ নামে পরিচিত। অবশ্য যখন সীতাভোগের জন্ম; তখন কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা একত্রে বাংলা হিসেবে পরিচিত ছিল।

ভ্রমণে হৃদয় হরণ করা খাবার

সীতাভোগ মিষ্টান্নের প্রধান উপাদান হলো, সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল। সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল থেকে প্রস্তুত হওয়ার কারণেই সীতাভোগের একটি নিজস্ব স্বাদ ও সুগন্ধ হয়। সীতাসের চাল বর্ধমান জেলার এক বিশেষ অঞ্চলেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। চাল গুঁড়ো করে তাতে ১:৪ অনুপাতে ছানা মিশিয়ে পরিমাণমতো দুধ দিয়ে মাখানো হয়। এরপর একটি বাসমতি চালের আকৃতির মত ছিদ্রযুক্ত পিতলের পাত্র থেকে মিশ্রণকে গরম চিনির রসে ফেলা হয়। এর ফলে সীতাভোগ বাসমতির চালের ভাতের মতো দেখতে লম্বা সরু সরু দানাযুক্ত হয়। সীতাভোগের সাথে ছোট ছোট গোলাপজাম এবং কখনো কখনো কাজুবাদাম ও কিসমিস মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।

কেউ চাইলে শক্তিগড়ের যে কোনো দোকান থেকে সীতাভোগের স্বাদ নিতে পারেন। শক্তিগড় যেতে হলে কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে বর্ধমানগামী ট্রেনে উঠে শক্তিগড় স্টেশনে নামতে হবে। সময় প্রায় দুই ঘণ্টা লাগবে। ট্রেনের ভাড়া ২০ টাকা। এ ছাড়া বর্ধমানগামী যে কোনো বাসে চেপে শক্তিগড় যাওয়া যায়। দূরপাল্লার আসানসোল, দূর্গাপুর, শান্তিনিকেতনের বাসগুলো শক্তিগড় হয়েই যায়। কলকাতা শহরে সীতাভোগ মিষ্টান্ন মিলবে, তবে শক্তিগড়ের সীতাভোগ স্বাদে ও মানে অনন্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com