রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

ভুতুড়ে দ্বীপ পোভেগলিয়া

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

একটা সুন্দর দ্বীপের কথা কল্পনা করো তো যার চারদিকে বিশাল নীল জলরাশি। যেখানে পাম গাছগুলো মৃদু বাতাসে দোল খায় এবং স্ফটিক স্বচ্ছ পানির ভিতর মাছেরা খেলা করে। তোমরা কি জানো, এমনই অজস্র নয়নাভিরাম সৌন্দর্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে লাখ লাখ দ্বীপ? একেকটা দ্বীপ যেন প্রকৃতির একেকটা সুপ্ত প্রতিভা। এই যেমন ধরো মালদ্বীপের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ, যেখানে শুষ্ক বালুকাময় সৈকত এবং ঝকঝকে পানির উপহ্রদ তোমাকে যেন হারিয়ে নিয়ে যাবে অন্য ভুবনে। আবার সবুজে ঘেরা হাওয়াই দ্বীপের কথা চিন্তা করো, যেখানে আগ্নেয়গিরির লাভা সাগরে গিয়ে মিশে এক মায়াবী দৃশ্যের জন্ম দেয়।

আজ তোমাদের এমনই এক দ্বীপের কথা বলবো যার নাম পোভেগলিয়া দ্বীপ। পোভেগলিয়া ইউরোপ মহাদেশের ইতালিতে অবস্থিত। আদ্রিয়াটিক সাগর হতে সৃষ্ট ভেনেশিয়ান ল্যাগুনের বুকে লিডো এবং ভেনিস নগরীর মাঝামাঝি অবস্থিত এই পোভেগলিয়া দ্বীপের রয়েছে হিম শীতল করা ভুতুড়ে ইতিহাস।

চলো তাহলে জেনে আসি সেই অন্ধকার ইতিহাস সম্পর্কে যেগুলো জানলে হয়তো তোমরা মিলাতে পারবে না এই দ্বীপের মায়াবী সৌন্দর্য্যের সাথে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম ছিল প্লেগ রোগ। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের বিস্তারে যেরকম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল ঠিক আজ থেকে ২০০–৩০০ বছর পূর্বে প্লেগ রোগের কারণেও সেই রকম আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল মানুষের মাঝে। তখন চিকিৎসাশাস্ত্র আজকের দিনের মতো এত উন্নত ছিল না। প্লেগ রোগ যাতে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য প্লেগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি আলাদা জনমানবহীন স্থানে বন্দি করে রাখা হতো। সেই সময় প্লেগের প্রতিরোধে কোয়ারেন্টাইনের জন্য বিখ্যাত এক স্থান ছিল ইতালির পোভেগলিয়া দ্বীপ।

কথিত আছে, এই দ্বীপে অসংখ্য প্যারানরমাল কাজকর্ম, ভূতের উপস্থিতিসহ অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা ঘটতো। প্লেগ আক্রান্ত রোগীদেরকে কী রকম অমানুষিক এবং অসহায় পরিস্থিতিতে এখানে ফেলে রাখা হতো তা ভাষায় বর্ণনা করা খুবই কঠিন। যে কারণে এখানে হাজার হাজার মানুষ বিনা চিকিৎসায় এবং ক্ষুধায় মারা যায়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ একসাথে মারা যায় যে এখানকার মাটি মরদেহে ভরে গিয়েছিল।

পরবর্তীতে ২০ শতকের দিকে দ্বীপটিকে একটি মানসিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয় কিন্তু পিছু ছাড়ে না ভয়ানক অভিজ্ঞতাগুলো। বলা হয়ে থাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষদের চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি রেখে পাশবিক অত্যাচার করা হতো। বন্দীদের আর্তচিৎকারে এক ভয়ানক পরিস্থিতি থাকতো দ্বীপটিতে।

এই অস্বস্তিকর ঘটনাগুলো এবং দ্বীপের বীভৎস অতীত দ্বীপটিকে একটি ভৌতিক স্থানে পরিণত করে। দ্বীপটি নিয়ে এতো গুজব ছড়িয়ে পরে যে সাধারণ মানুষ আজো এখানে যাওয়ার সাহস করতে পাওে না। বলা হয়ে থাকে দ্বীপটিতে প্রবেশ করলে অশরীরী বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গা ছমছম করা একটা অনুভূতি তোমাদের জেঁকে ধরবে। অনেক দর্শনার্থীই দাবি করেছেন তারা অভিশপ্ত কোয়ারেন্টাইন ভবন এবং মানসিক হাসপাতালের ভবনের আশাপাশে কালো ছায়াকে ছুটোছুটি করতে দেখেছেন। দ্বীপটিতে কোনো বাসিন্দা না থাকলেও দর্শনার্থীরা প্রায়ই গগনবিদারী চিৎকার, কান্না ইত্যাদি শুনতে পায়। আরো অদ্ভুত বিষয় হলো কেউ যখন এই দ্বীপে বেড়াতে যায়, হঠাৎ তাদের মন বিষণ্নতায় ডুবে যায়। হঠাৎ তাদেরকে গ্রাস করে দুনিয়ার বিভিন্ন দুঃখ। কী, শুনতেই কেমন অবাক লাগছে না? তাহলে একবার ভাবো যারা সেখানে বেড়াতে যায় তাদের মানসিক অবস্থা কী হয়।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এইসব ব্যাপারকে গুজব এবং লোককথা হিসেবে ধরে নিয়ে এখানকার অন্ধকার অতীতকে দূর করার লক্ষ্যে ইতালি সরকার বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে নিয়োগ করে। উদ্দেশ্য ছিল পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করা কিন্তু কাজ শুরু করার পর কোনো এক অদ্ভুত কারণে সব কোম্পানি কাজ ফেলে চলে যায়। বেশ অনেকগুলো উদ্যোগ বিফল হওয়ার পর অবশেষে ইতালি সরকার দ্বীপটিতে জনসাধারণের প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয়।

কী বুঝলে বন্ধুরা? পোভেগলিয়া দ্বীপ নিয়ে যতই রোমাঞ্চ কাজ করুক, চাইলেও এখানে গিয়ে এডভেঞ্চার করার চিন্তা করা যাবে না। দ্বীপের চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য সাধারণ মানুষকে বিমোহিত করলেও এর ভিতরের ভুতুড়ে আবহটা হয়তো আজীবন রহস্যই রয়ে যাবে ভ্রমণপিপাসু এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com