দ্বীপের নাম ফু-কক, দেশের নাম ভিয়েতনাম। নীল আকাশের নিচে আদিগন্ত সমুদ্রে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো সৌন্দর্য এখানে। নরম বালুতে রৌদ্রের ঝিকিমিকি আর অফুরন্ত ঢেউয়ের অক্লান্ত বয়ে চলার ছন্দময় শব্দ সারা বিশ্বের পর্যটকদের ডেকে আনে এখানে।
শুভ্র বালুর বেলাভূমির ফু-কক দ্বীপে এপ্রিল-মে ছাড়া সারা বছর পর্যটকের মেলা বসে। বছরের বেশির ভাগ সময় এখানকার তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জুলাইতে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা আরও নমনীয় হয়। সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য মানুষকে কত নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট করে, তার অন্যতম উদাহরণ ফু-কক দ্বীপ।
এখানে যেমন পর্যটকদের সমাগম, তেমনি মধুচন্দ্রিমা যাপনে আসেন দম্পতিরা। যাঁরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসতে চান, তাঁদের জন্যও দ্বীপটি একই রকম আকর্ষণীয়।
যাঁরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সেই দেশের সংস্কৃতি নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য ভিয়েতনাম আকর্ষণীয়। পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম এবং সময় কাটানোর সুব্যবস্থা আছে দেশটিতে। ভিয়েতনাম উত্তর-দক্ষিণে অনেক বিস্তৃত।
হো চি মিন সিটি ও হ্যানয়—এই দুটি শহরের মধ্যে কেউ কেউ তুলনা করেন।
হো চি মিন সিটিতে শহুরে কোলাহল আছে। একই সঙ্গে আছে ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত বিভিন্ন আকর্ষণ। ওদিকে হ্যানয় স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়।
মানুষের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ব্যস্ত শহর হ্যানয়। এখানে হাতে কফির মগ নিয়ে ছুটে চলা ট্রেনে শহর ঘুরে বেড়ানো বেশ মজার। সেই সঙ্গে স্ট্রিট ফুডের বৈচিত্র্য এবং স্বাদ সংস্কারমুক্ত পর্যটকের জন্য এক বিরাট সুযোগ। আমাদের টংদোকানের মতো ছোট ছোট দোকানে নানা রকম চা ও কফি পাওয়া যায় হ্যানয়ে। এগুলোর মধ্যে হিরো হলো
‘এগ কফি’। তার সঙ্গে স্থানীয় মুখরোচক হালকা খাবার খাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে আছে চিংড়ি কেক, পিলো কেক, ফো রোলস, ফো নুডলস এবং কেম যুই বা আইসক্রিম দেওয়া স্টিকি রাইস। এটি আবার পাওয়া যায় কোরানো নারকেলের মিশ্রণে অনেক ধরনের স্বাদ ও গন্ধে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট রেস্তোরাঁয় দেখা যাবে কৌতূহলী পর্যটকদের। তাঁদের সঙ্গে কথায় কথায় কেটে যাবে মজার সকাল বা বিকেল।
ছবি: লেখক
হ্যানয়ে ‘জলে পুতুল নাচ’ দারুণ এক দেখার জিনিস। প্রায় ৫০ মিনিট চলা এই শো দেখতে হলে আগে থেকে টিকিট কাটতে হয়। বিনোদনের এই শো সব বয়সের মানুষের জন্য সমান আনন্দদায়ক।
দোতলা স্টিমারে সবুজাভ জলে হা লংবে পরিভ্রমণ শুধু আনন্দেরই নয়; এই ক্রুজ-যাত্রা সারা দিন আপনাকে মোহাবিষ্ট করে রাখবে। এই স্টিমার বিভিন্ন স্পটে থামে। এখানে কোথাও গুহার ভেতরে গিয়ে দেখা যায় কালের বিবর্তনে জমে থাকা বরফ শক্ত পাথর হয়ে ওপর থেকে ঝুলে আছে ‘স্টেলেকটাইট’ হয়ে। রাত কাটানোর জন্য কেউ কেউ দুই দিনের ট্রিপ করে থাকেন এখানে। সে জন্য অগ্রিম রুম ভাড়া নিতে হয়। খাবারদাবারের ব্যবস্থা থাকে, থাকে ইনডোর গেমের আয়োজন এবং বিশেষ অনুষ্ঠানও। বিকেলে স্প্রিং রোল বানানোর অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রোল তৈরি করে সেগুলো তেলে ভেজে গরম-গরম পরিবেশন করা হয়। কেউ কেউ ডিঙি নৌকায় সবুজ জলে এক গুহা থেকে আরেক গুহা কিংবা সৈকতের জলে নেমে সাঁতার কাটেন বা পা ভিজিয়ে ছবি তোলেন। যেকোনো ট্যুরিস্টের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো ঘটনা এই ট্রিপ।
ছবি: লেখক
ফু-ককের আরেক আকর্ষণ হলো ভিন ওয়ান্ডার্স থিম পার্ক। এই পার্ক দেখে মনে পড়ে গেল আশির দশকে দেখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ডিজনিল্যান্ডের কথা। ভিন ওয়ান্ডার্স থিম পার্ক যেন ডিজনিল্যান্ডের আরেক সংস্করণ। এর বিরাট অবকাঠামো আর বিস্তৃত স্থাপনা গড়ে উঠেছে লাখো মানুষের বিনোদনের কথা ভেবে।
ফু-কক শহরের গোছানো অট্টালিকার আলোকসজ্জা দেখার জন্য ছাদখোলা বাসের দোতলায় বসে মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করা যায় পুরো সন্ধ্যা। ফু-ককের কেব্ল কার বিশ্বের অন্যতম রোপওয়ে। এর দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ৮৯৯ মিটারের কিছু বেশি। দ্বীপ থেকে দ্বীপে এত উঁচুতে কেব্ল কারে চড়ে অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এই আরোহণ মন ভালো করে দেওয়ার মতো সুপারিশযোগ্য ইভেন্ট।
ভেনিসের মতো খাল দিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা মোহনীয় পরিবেশে সুসজ্জিত নৌকা ভ্রমণ ফু-ককের আরেক আকর্ষণ। দুই পাড় থেকে দেখা যায় পর্যটকদের জন্য সাজানো সব স্যুভেনির আর খাবারের দোকান।
ছবি: লেখক
এখানকার আরেক আকর্ষণ পানির নিচে সমুদ্রের বৈচিত্র্যময় ভুবন। জলপরীদের দেখা মিলবে মানুষের বানানো আন্ডার ওয়াটার বিনোদনকেন্দ্রে। কচ্ছপ আকৃতির এক বিরাট স্থাপনার ভেতর বানানো হয়েছে এটি।
এখানে হরেক রকমের জলজ প্রাণী পানিতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। এখানে মেরু অঞ্চলের ইগলু আর পেঙ্গুইনের দেখা মিলবে অন্য অনেক প্রাণীর সঙ্গে।
একটার পর একটা এসব আনন্দময় পরিবেশ ও কার্যক্রম দেখে মনে হবে, এ যেন স্বপ্নের রাজ্য!