এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। বছরের এই সময় স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে, শীতের একেবারে গোড়াতেই সুন্দর আবহাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা দেশের বাইরে বেরিয়ে পড়েন। কেউবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে কাক্সিক্ষত বিদেশ ভ্রমণে বের হন। বাংলাদেশি পর্যটক অধিকাংশেরই প্রথম পছন্দ প্রতিবেশী দেশ ভারত। কিন্তু বর্তমানে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটন ভিসা বন্ধ রাখায় বাংলাদেশি পর্যটকরা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন। তাদের পছন্দের তালিকায় আছে- নেপাল, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের মতো দেশ।
অ্যাভিয়েশন খাত ও ট্যুরিজম খাত সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের দিকে ঝুঁকছেন দেশীয় পর্যটকরা। এ ক্ষেত্রে যেসব দেশে ভিসাপ্রাপ্তি সহজ সেখানে পর্যটকদের চাপ বেশি। ট্র্যাভেল ট্যাক্স কমিয়ে আনায় অনেকে আবার ভুটান ভ্রমণেও যাচ্ছেন। ভিসাপ্রাপ্তি সহজ হওয়ায় অনেকে পাকিস্তানেও বেড়াতে যাচ্ছেন। দূরত্ব হিসেবে ভারতের পরেই কাছের দেশ এবং অন এরাইভাল ও ই-ভিসা প্রাপ্তি এবং স্বল্প সময়ের যাতায়াত সুবিধার কারণে নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে বাংলাদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ছে। তবে এসব রুটে যাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় উড়োজাহাজের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে কাছের দেশ, ভাষাগত নৈকট্য, তুলনামূলক কম ভ্রমণ ব্যয় এবং সহজ ভিসাপ্রাপ্তির কারণে বাংলাদেশের পর্যটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ভারত ভ্রমণে যেতেন।
তবে গত ৫ আগস্টের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা প্রদান সাময়িক বন্ধ রয়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ মো. কামরুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতীয় ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমাতে হয়েছে। ঢাকা-কলকাতা রুটে ১৪টির জায়গায় এখন ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করছি। আর চট্টগ্রাম-কলকাতা রুট পুরোপুরি বন্ধ। ঢাকা-চেন্নাই রুটে ১১টির বদলে এখন চলছে ছয়টি ফ্লাইট। ভারতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে ব্যাংকক, মালদ্বীপ এবং নেপালে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের হার তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতে এমনিতেই মানুষ ভ্রমণে বের হন।
এর সঙ্গে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় দেশি পর্যটকরা এসব দেশে যাচ্ছেন। মালদ্বীপের এক-একটি ফ্লাইটে এখন ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যটক দেশ থেকে ভ্রমণে যাচ্ছেন। পর্যটকদের বড় অংশই পরিবারসহ বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর পরিচালক (ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স) মো. মানসুর আলম পারভেজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একদিকে ভারতীয় ভিসা বন্ধ অন্যদিকে এখন থাই ভিসা প্রত্যাখান হচ্ছে বেশি। তাই বাংলাদেশি পর্যটকরা এখন বেশি যাচ্ছেন মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায়।
এই দুটি দেশে ই-ভিসা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য এই দুই দেশে পর্যটক পাঠাতে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। এর পর মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্যাংককে যাচ্ছেন পর্যটকরা। সম্প্রতি বেশ কিছু পর্যটক পাকিস্তানে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় করাচিতে যাচ্ছেন। কিন্তু এই রুটে প্লেনের ভাড়া বেশি। আর যে পর্যটকরা সাবলম্বী তারা ইউরোপের দেশগুলোতে ভ্রমণে যাচ্ছেন। ভুটানে ট্র্যাভেল ট্যাক্স কমিয়ে আনায় অনেকে আবার ভুটান ভ্রমণেও যাচ্ছেন