ইউরোপীয় বণিকেরা যখন থেকে ভারত, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে অবতরণ করেছে তখন থেকে তারা আমাদের শোষণ করেছে। এই শোষণের পাশাপাশি তাদের দ্বারা কিছু কিছু সুন্দর প্রাকৃতিক জিনিসও আবিষ্কার হয়েছে। যদিও এই সব প্রাকৃতিক নিদর্শন তারা আসার আগেই বিদ্যমান ছিলো। তবু এটা বললে ভুল হবে না যে তারা এটা বিশ্ববাসীর সামনে এনেছে যাতে আমরা তা অবলোকন করতে পারি। আর আজ তেমনি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করব এবং তা হল ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত।
অবাক করা বিষয় হল! প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৩৫ ঘনমিটার পানি পতিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে যা সত্যিই বিস্ময়কর। যখন জল পড়ে তখন সেই সময় প্রচণ্ড আওয়াজ সৃষ্টি করে বলে স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’। এর অর্থ ‘বজের ধোয়া’। তাই তারা এই জলপ্রপাত এর কাছে আসতে ভয় পেতো।
ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৫৫ সালে এই জলপ্রপাত দেখে এর নামকরণ করেন রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে, সেই সময় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রাণী (এত সুন্দর একটা জিনিসের নাম অমন খারাপ এবং সাম্রাজ্যবাদী রাণীর নামে নামকরণ না করলেও হত) সেই থেকে এটি ভিক্টোরিয়া ফলস নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে জিম্বাবুয়ে সরকার এর নামকরণ করেছে ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’ ফলস। উল্লেখ যে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ছিলেন পাদ্রী। তিনি দাস প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন।
অনেক কাছ থেকে দেখা যায় কিভাবে ওপর থেকে পানি নিচে পড়ে গর্জন করছে আর সে পানির তোড়ে ধোঁয়ার মতো বাষ্প উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। সে দৃশ্য দেখলে বুঝতে মোটেই অসুবিধা হবে না কেন ভিক্টোরিয়াকে অনেকে বলেন ‘বিজলী ধোঁয়া’, যেমন সেই সময়কার আদিবাসীরা এটা বলেই ডাকত এবং ভয়ও পেতো। তবে দুই দেশের কোনো পার্ক থেকেই আসলে পুরো সৌন্দর্যটা অবলোকন করা যায় না। জিম্বাবুয়ের অংশ থেকে দেখা যায় প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আর অন্য দিকে জাম্বিয়া অংশ থেকে দেখা যায় প্রায় ২০ থেকে ১৫ শতাংশ মাত্র।
ইউনেস্কো ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জলপ্রপাতটিকে উভয় নামেই তালিকাভুক্ত করে। জলপ্রপাতের উভয় অংশকে সংযুক্ত করতে ভিক্টোরিয়া ফলস, জাম্বেজি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যান চলাচল সহজ হয়েছে এবং এই যান চলাচল এর কারণেই পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে এটি বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।