1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ভার্জিনিয়া ট্যুর, “এয়ার এন্ড স্পেস” মিউজিয়াম এবং গ্রেট ফলস
শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ভার্জিনিয়া ট্যুর, “এয়ার এন্ড স্পেস” মিউজিয়াম এবং গ্রেট ফলস

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

ভার্জিনিয়ায় শেষ দিনে আমরা গেলাম এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়ামে। আমরা তিনজন আর আমাদের গাইড কাম হোস্ট মোস্তফা তানিম। এই মিউজিয়ামটা প্রায় তানিমের বাসার কাছেই। অসাধারণ একটা মিউজিয়াম। রাইট ব্রাদার্সের সেই প্রাচীনতম প্লেন থেকে শুরু করে আধুনিক প্লেন সবই আছে এখানে। একটা আস্ত কনকর্ড প্লেন এখানে ঢুকিয়ে রেখেছে।

চিন্তা করা যায়? তার মানে কত বিশাল মিউজিয়াম! (এই কনকর্ড প্লেন অবশ্য অতিরিক্ত শব্দ দূষনের কারণে পৃথিবীতে বাতিল করা হয়েছে। কনকর্ড একবার বাংলাদেশে এসেছিল, আমি দেখেছিলাম। মনে আছে ঢাকার আকাশে তখন হঠাৎ কনকর্ড দেখে এত অবাক হয়েছিলাম!!) পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্লেন, বোমাবাজ দীর্ঘ ফাইটার প্লেন, সব ধরনের ভয়ঙ্কর মিসাইল কি নেই এখানে! সবচেয়ে ভাল লেগেছে ডিসকভারী দেখে। এটা মহাশূণ্য পাড়ি দিয়ে এখন এই মিউজিয়ামে অবস্থান করছে, আমার চোখের সামনে! তারপর দেখলাম অ্যাস্ট্রোনাটদের চাঁদে ব্যবহার করা সেই স্পেস স্যুট। এক পর্যায়ে আমি আর তানিম  কতজন চাঁদে গিয়েছে এই নিয়ে গবেষণায় নিবৃত্ত হলাম। শেষ পর্যন্ত জানা গেল এই পর্যন্ত ১২ জন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনাট চাঁদে পা রেখেছেন (অনেকে ভুল করে, হয়ত ঐ অ্যাপোলো-১১ তে আর্মস্ট্রং আর অলড্রিনই শুধু চাঁদে গিয়েছিলেন)। এই মিউজিয়ামে আরউইনের (১২ জনের একজন) পুরো স্পেস স্যুটটা আছে। সেটাই আশ্চর্য হয়ে দেখলাম। এই পোষাকটা পরেই একজন মানুষ চাঁদের দেশ থেকে ঘুরে এসেছে! কিমাশ্চর্যম!! (ফেসবুকের ভাষায় কিয়েক্টাবস্থা!)

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক জিনিষটা আবিস্কার করল এষা। দুটো মাকড়শা আর তিনটা প্রজাপতি। এরা স্পেস স্যুট না পরেই মহাশূণ্যে গিয়েছিল। প্রজাপতি গুলো জিরো গ্র্যাভিটিতে তাদের পুরো লাইফ সাইকেল সম্পন্ন করেছে সফল ভাবে, কোন সমস্যা হয় নি। আর মাকড়শার ক্ষেত্রে দেখা হয়েছে এই ছোট্ট মাকড়শা গুলো জিরো গ্রাভিটিতে, একটা জাল পৃথিবীতে যেমনটা নিখুঁত ভাবে তৈরী করতে পারে সেখানে পারে কিনা। দেখা গেছে প্রথম দিকে তার অসুবিধা হয়েছে, পরে সে নিজেই  তৈরী করে নিয়েছে। মাকড়শা দুটোর নাম আনিতা এবং এরাবেলা।

দ্রুতই বের হয়ে আসতে হল এমন চমৎকার একটা মিউজিয়াম থেকে। কারণ আমাদের হাতে সময় কম। পাঁচটায় ফিরতি ফ্লাইট। এখন যাব আমরা গ্রেট ফলসে। রবির মুখে শুনেছি, এই জায়গাটা নাকি হুমায়ূন আহমেদের খুব প্রিয় ছিল। সময় পেলে সে এখানে প্রায়ই আসত। আমরা রওনা হলাম গ্রেট ফলসের উদ্দেশ্যে। ওখানে রবি, মুনীর, মিতু, লাভলী, অমি সবাই আসবে। তারাও পথে। তবে এই প্রথম পথে প্রচন্ড জ্যামে পড়লাম। সবাই ছুটছে গ্রেট ফলসের উদ্দেশ্যে। তবে জ্যামে আটকে থাকলেও খুব খারাপ লাগলো না কারণ গাড়ীর দুপাশে অসাধারণ প্রকৃতি দেখতে দেখতেই সময় চলে যায়।

এক সময় জ্যাম কাটিয়ে পার্কে ঢুকতে পারলাম। কিন্তু যথারীতি পার্কিং এর জায়গা নেই। অনেক খুঁজে পেতে পাওয়া গেল জায়গা। পুরা পার্কেই প্রচুর জায়গা কিন্তু পার্কিং ছাড়া একটা গাড়িও কোথাও রাখা যাবে না।
শেষ পর্যন্ত পার্কিং করে পার্কে ঢুকা হল। ওদিকে ওরাও সব চলে এসেছে। আসিফ মেহেদীর ছোট ভাই তারিক মেহেদী তার স্ত্রী আর বাচ্চাকে নিয়ে চলে এসেছে। সেই এখন আমাদের ক্যামেরা ম্যান। হাতে ডিএসলার ক্যামেরা। প্রথমে ফলস দেখা হল। হ্যাঁ সত্যিই চমৎকার ফলস।

এই যাত্রায় এটাকেই নায়াগ্রা ফলস বলে চালানো যাবে বলে মনে হল (হালকা ফটোশপের কাজ করতে হতে পারে), অনেকে নাকি এটাকে মিনি নায়াগ্রা বলে। আসলে এই জলপ্রপাতের বিশালতা ছবিতে বোঝানো মুশকিল, যেমন ল্যুরে কেভার্নের সৌন্দর্যও ছবিতে বোঝানো মুশকিল। তারিকের বাচ্চা জলপ্রপাতে গোসল করার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল, শুধু বলছে গোসল! গোসল!! ঐ একটা বাংলা শব্দই সে এখানে এসে শিখেছে। তার মা পড়েছে বিপদে, বাচ্চাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না এখানে যে গোসল অসম্ভব!

এই ফলস পার্কে বিভিন্ন জায়গায় চেয়ার বেঞ্চ পাতা। একটাতে আমরা বসে পড়লাম। সবাই কিছু না কিছু খাবার এনেছে। চা এনেছে মিতু, চানাচুর বিস্কিট এনেছে মুনীর, আরো অনেক কিছুই চলে এসেছে। ঐ সব খেতে খেতে সময় যে কিভাবে কিভাবে চলে গেল, টেরই পেলাম না। এবার বিদায়ের পালা…।

বিদায় নেয়াটা সত্যি কষ্টের। কত অল্প সময়ে আমরা কত কাছাকাছি চলে  এসেছি, নিজের দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে  আমরা ঘনিষ্ঠ ক’জন… এখন আবার ছিটকে যাব যে যার পথে। সবাই  বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে চলে এসেছে। কিন্তু প্রচুর ভিড়, গাড়ি দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। বিদায় পর্ব দ্রুত শেষ করতে হবে … এবং শেষ করেও  ফেললাম … বিদায় ভার্জিনিয়া!

লেখকঃ কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com