বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

ভার্চুয়াল জগতে রাতের রানীরা

  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

সরু গলির পাশে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। পরনে থ্রি পিস, মাথায় ওড়নাটা বেশ রক্ষণশীলভাবে প্যাঁচানো। মুখে মাস্ক, জামার সঙ্গে রং ম্যাচ করা। বারবার মোবাইলফোনের দিকে তাকাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কথা হচ্ছে। এরমধ্যেই টয়োটা সি-এইচ আর মডেলের গাড়িটি থামে। না, মেয়েটি গাড়িতে উঠে না। মেয়েটির হাতের ইশারায় গাড়িটি ঢুকে পাশের বাড়ির পার্কিংয়ে।

তারপর ওই গাড়ি থেকে বের হন চল্লিশ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। দ্রুত মেয়েটি পায়ে হেঁটে তার কাছে আসে। অতঃপর তারা লিফটে, উঠে যায় বহুতল ভবনে। এভাবেই রাজধানীজুড়ে করোনা মহামারীকালে বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেই বাসার বাইরে যাচ্ছেন অনেকে। গেস্ট বা মেহমান হচ্ছেন বিভিন্ন ফ্ল্যাটে। তবে এইসব গেস্ট ও ফ্ল্যাটের গল্প ভিন্ন। এ বিষয়ে কথা হয় সাথী নামক তরুণীর সঙ্গে। করোনা মহামারীর আগে সন্ধ্যার পর ফার্মগেট মোড়ে নিয়মিত দেখা মিলতো তার। ভোলার চরাঞ্চলে বাড়ি। থাকতেন কল্যাণপুর বস্তিতে।

করোনায় লকডাউনে সঙ্গীরা যখন একে একে ঢাকা ছাড়ছে তখনই ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সাথী। বেছে নেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। একসময় রাতের রানী, নাইট কুইন হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সাথীদের দেখা মিলছে এখন দিন-দুপুরে। যখন-তখন। ভার্চুয়াল-একচুয়াল। ফেসবুকে ‘রিয়েল সার্ভিস’ নামে এক গ্রুপের সদস্য হন সাথী। নিজের মুখ না দেখিয়ে নানা ছবি পোস্ট করেন ভার্চুয়াল এই মাধ্যমে। আহবান করেন ক্লায়েন্টদের। সাথী জানান, কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন তারকা হোটেলে ডাক পড়ছিলো তার। কিন্তু সম্প্রতি কঠোর লকডাউনে সেটিও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

প্রয়োজন হচ্ছিলো নিজের একটি এপার্টমেন্টের। যেখানে ক্লায়েন্টদের ডাকতে পারবেন। সম্প্রতি মিরপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন সাথী ও তার দুই বান্ধবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ডাকছেন ক্লায়েন্টদের। তাদের ক্লায়েন্টরা বিত্তশালী। সাথীদের সোবার মূল্যও বেশি। সাথী জানান, সরাসরি ছাড়াও করোনার কারণে অনেকেই অনলাইন সার্ভিস নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে সাথীদের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেয়া রয়েছে, ‘সারাদেশে কঠোর লকডাউন তাই রুমে গিয়ে কাজ করা পসিবল নয়। তাই এখন থেকে ক্যাম সার্ভিস এভেইলবল..।’ ওয়েভ ক্যামে নিজেদের নগ্নভাবে উপস্থাপন করেন। অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গি ও কথা বলেন। শব্দ করেন। এজন্য বিকাশে এডভান্স দাবি করেন তারা। সাথী জানান, এই সার্ভিস বেশি নিয়ে থাকেন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা।

কানেট সাবা নামে ওই পেজের একজন সদস্যের সঙ্গে ক্লায়েন্ট সেজে কথা বললে মেসেঞ্জারে তিনি জানান, হোম সার্ভিস দিয়ে থাকেন তিনি। এজন্য বিকাশে এডভান্স উবার গাড়ির ভাড়া পাঠালেই হয়। ঠিকানা অনুসারে বাসায় পৌঁছে যান তিনি। ঘন্টায় কয়েক হাজার টাকা নেন এই তরুণী। নিজেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দেন সাবা। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য নিজের তিনটি ছবিও পাঠান। সাবা জানান, করোনার কারণে ক্লায়েন্টদের ঝামেলায় না ফেলতেই হোম সার্ভিস শুরু করেছেন। সড়কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হলে ডাক্তার, ওষুধের অজুহাত দেখান তিনি। সঙ্গে রাখেন প্রেসক্রিপশন। এভাবেই কঠোর লকডাউনে চলছে অনৈতিক এই বাণিজ্য।

এ বিষয়ে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। যারা অপরাধ করছেন। নগ্নতা, অশ্লীলতা ছড়াচ্ছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com