ভারতে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য নিদর্শন সংখ্যা প্রায় ৩৯টি। এরমাঝে প্রাকৃতিক নিদর্শন ৮টি। সাংস্কৃতিক নিদর্শন ৩০টি এবং মিশ্র ১টি। এখানে বিখ্যাত কিছু নিদর্শনের পরিচিতি দেয়া হল।
নিজ স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে তার সমাধির ওপর তাজমহল নির্মাণ করেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। যমুনা নদীর তীরে তৎকালীন সময়ে ৩২ লাখ রুপি খরচ করে এই স্থাপনা গড়ে তোলেন শাহজাহান। যা বর্তমান সময়ে ভারতীয় মুদ্রায় ৫৮ বিলিয়ন মূল্যের। ১৬৫৩ সালে নির্মিত এই স্থাপনা পরবর্তীতে স্থান করে নিয়েছে সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য হিসেবে। ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে পূর্ণিমা রাতে তাজমহলের অবলোকন এক আরাধ্য বিষয়।
ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম নিদর্শন হয়ে টিকে আছে এই অজন্তা গুহা। পাহাড় কেটে তৈরি এই গুহার দেয়ালে থাকা ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্র ইতালীয় বিভিন্ন নিদর্শন থেকে কোন অংশেই কম নয়।
ভারতের একেবারেই প্রথম দিকের স্বীকৃত একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন এই অজন্তা গুহা। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে ২য় শতক থেকে ৬৫০ সালের মাঝে এই অজন্তা গুহার জন্ম। অসাধারণ শিল্পকর্মে তৈরি এই গুহায় রয়েছে ৩১টি শিলালিপি, ছবি এবং ভাস্কর্য। ধারণা করা হয়, দুটি ধাপে এই গুহার নিদর্শন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রত্নত্বাত্তিকদের বিশ্বাস, ভারতে শিল্প এবং সাংস্কৃতিক চর্চার একেবারেই প্রথম দিকের একটি নিদর্শন এই অজন্তা গুহা।
সত্যজিৎ রায়ের কৈলাসে কেলেঙ্কারি দেখা হয়েছে? তাহলে খুব সম্ভবত মহারাষ্ট্রের ইলোরা নিয়ে বেশ ধারণা আছে আপনার। পাথুরে পাহাড় উপর থেকে কেটে এই জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ৩৪টি মন্দির এবং গুহা। স্থাপত্যকলার এই অনন্য বিষ্ময় দেখতে প্রতিবছর হাজারো পর্যটক আসেন ভারতে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর আওরঙ্গবাদ থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইলোরা নগরের পত্তন হয় খ্রিস্টিয় ৬০০ থেকে ১০০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে।
ইলোরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক সম্ভবত এর ধর্মীয় আবহ। এখানে একইসাথে সনাতন, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের নিদর্শন দেখতে পাবেন পর্যটকেরা।
আরেকবার স্মরণ করতে হলো সত্যজিৎ রায়কে। ফেলুদার সাথে এই যন্তর মন্তর ঘোরেননি এমন বাঙালি হয়তো খুব কমই আছেন। যন্তর মন্তর মূলত একটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। রাজস্থানের রাজপুত রাজা জয় সিংহ এটি নির্মাণ করেন ১৭৩৮ সালে। যন্তর মন্তরে মোট ১৯টি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যন্ত্র রয়েছে।
এতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সূর্যঘড়িটিও। এতে নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়, ভূমির অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করার মত যন্ত্রের উপস্থিতিও রয়েছে। প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান চর্চার এক বড় নিদর্শন এই যন্তর মন্তর। ইউনেস্কোও এই জায়গার কদর করতে ভুল করেনি।
ভারতের প্রথম শহর হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় আহমেদাবাদ। প্রায় ৬ শতাব্দী ধরে গুজরাট রাজ্যের রাজধানী হয়ে থাকা এই শহরের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছে ঐতিহ্য এবং জনজীবনের মেলবন্ধন। এর পুরাতন ধাঁচের আবাসন স্থাপনা, কুয়া এবং ধর্মীয় স্থাপনা এই শহরকে দিয়েছে অন্য এক উচ্চতা। ভারতের সবশেষ সংযোজিত হেরিটেজ সাইট হিসেবে রয়েছে এই শহরটি। ২০১৭ সালের ৮ জুলাই একে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দান করে ইউনেস্কো।
এছাড়া ভারতে মুঘল আমলে গড়ে ওঠা কুতুব মিনার, ফতেপুর সিক্রি, আগ্রার লাল দুর্গ, হুমায়ুনের দূর্গ, প্রাকৃতিক নিদর্শন কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক, হিমালয় ন্যাশনাল পার্ক এসব স্থাপনাও আছে ইউনেস্কোর তালিকায়।