বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে ভারত আপত্তি করতে পারে, এমন সম্ভাবনা সত্ত্বেও জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন এক মার্কিন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
এই তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করেছেন ঢাকায় দূতাবাসে কাজ করে যাওয়া সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন ডেনিলোউইজ, যিনি বর্তমানে ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউজ পোর্টাল সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসের (এসএপি) এডিটর-অ্যাট-লার্জ।
ভারতের আপত্তির সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই নতুন এই ভিসা নীতি ঘোষণা বাংলাদেশ-সম্পর্কিত অনেক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ‘একমত হয়েও দ্বিমত’ হওয়ার সংকেত বলে জন ডেনিলোউইজ ২৮ মে এসএপিতে প্রকাশিত এক লেখায় উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশসহ ভারতের আশপাশে প্রভাব পড়তে পারত, মার্কিন এমন অনেক পদক্ষেপের বিষয়ে নয়াদিল্লি থেকে এর আগে জোর আপত্তি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা দেওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের কাছে যদি মনে হয়, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে কেউ বাধা সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তাঁর ভিসা দেওয়া হবে না। নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার বিষয়টি ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে এক বৈঠকে ভিসা নীতিটির কথা জানান। সেই বৈঠকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস মনে করে, ভিসা নীতিটি কাদের ওপর প্রয়োগ করা হতে পারে, বাংলাদেশের এমন কিছু নাগরিকের তালিকা মার্কিনরা এরই মধ্যে তৈরি করেছে।
ডোনাল্ড লু যে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ভিসা নীতিটির কথা জানান, সেই বৈঠকেই মার্কিন কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় রাষ্ট্রদূত ওই তালিকার ইঙ্গিত পেয়েছেন। দূতাবাস এক বার্তায় ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়েছে।
জন ডেনিলোউইজ বলেন, ভিসা নীতির কার্যকারিতা নির্ভর করবে এর বাস্তবায়নের ওপর। আর এই বাস্তবায়নের দিকটি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বড় রকম চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।
বাংলাদেশে সরকার ও রাজনৈতিক বিভিন্ন পক্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ভবিষ্যতে কী কী পদক্ষেপ নেয়, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস কতটা ‘বেছে বেছে’ এগোতে পারবে, তার ওপর ভিসা নীতি বাস্তবায়ন অনেকটাই নির্ভর করবে বলে জন ডেনিলোউইজ মনে করেন। তাঁর মতে, মার্কিন মিত্ররা বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
বাংলাদেশে যারা ‘বর্তমান অবস্থা’ বহাল রাখতে চায়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর ক্ষেত্রে মার্কিন ভিসার কড়াকড়ি ‘যথেষ্ট ফলপ্রসূ’ না-ও হতে পারে বলে মনে করেন জন ডেনিলোউইজ। ভিসা নীতি যাদের ওপর প্রয়োগ করা হতে পারে, তাদের নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ সীমিত হয়ে এলে তবেই ভিসা নীতির কিছু ফল মিললেও মিলতে পারে বলে তাঁর বিশ্বাস।
ভয়ের কিছু নেই: পিটার হাস
অবশ্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় বলেছেন, নতুন ভিসা নীতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে এ নীতি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় ইএমকে সেন্টারে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিটার হাস এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।