আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে তিনজন রিপাবলিকান অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তাদের দুজন ভারতীয়-আমেরিকান।
নিকি হ্যালি বেশ পরিচিত নাম হলেও, প্রার্থী হিসেবে আকস্মিকভাবে নাম ঘোষণা করা বিবেক রামাস্বামী তেমন একটা পরিচিত নন।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বিবেক রামাস্বামীর শিকড় ভারতের কেরালায়। অবশ্য তিনি বেড়ে উঠেছেন আমেরিকায়। বিবেকের মা-বাবা কেরালার বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে ভারত ছেড়ে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন তারা।
রামাস্বামীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা এবং তিনি পরিবর্তন আনতে পারবেন কি না, সেটি মূল্যায়ন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক সাভিতা প্যাটেল।
রামাস্বামী একজন ধনাঢ্য উদ্যোক্তা এবং ‘ওক, ইঙ্ক’ শীর্ষক বইয়ের লেখক। একুশে ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজ শোতে নিজের রাজনৈতিক মতামত তুলে ধরার সময় ক্যামেরার সামনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন।
নতুন আমেরিকান স্বপ্ন নির্মাণে ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলন’ গড়ে তুলতে চান রামাস্বামী, যার ভিত্তি হবে দক্ষতা ও যোগ্যতা। তিনি বলেছেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের যদি বন্ধন তৈরি করা না যায়, তাহলে বৈচিত্র্য থাকা অর্থহীন।
৩৭ বছর বয়সী রামাস্বামী ওহাইওতে জন্মগ্রহণ করেন, হার্ভার্ড ও ইয়েলে পড়াশোনা করেছেন। বায়োটেকনোলজি উদ্যোক্তা হিসেবে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করেছেন। এরপর একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তিনি বর্ণবাদ এবং জলবায়ু নিয়ে কর্পোরেট বিশ্বের ওকেইজমের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার ভূমিকায় রয়েছেন। তার দাবি, এটি ব্যবসা এবং দেশ উভয়েরই ক্ষতি করছে।
রামাস্বামী মূলত ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স) উদ্যোগের বিরোধী। এর মাধ্যমে মূলত একটি কোম্পানির সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপ করা হয়।
তিনি চীনের ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে চান।
রামাস্বামীর মতামত কারো কারো সঙ্গে মিলে যায়। যেমন সহকর্মী রিপাবলিকান বিক্রম শারামানির সাথে মেলে। যিনি ২০২২ সালের মধ্যবর্তী মেয়াদে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে মার্কিন সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সম্প্রতি রাজ্যে সফরের সময় রামাস্বামীর সঙ্গে তার দেখা হয়।
শারামানি তার এই ভারতীয়-আমেরিকান সহকর্মীকে খুবই হৃদয়গ্রাহী, স্পষ্টবাদী ও চিন্তাশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও একইরকম- আমেরিকাকে আলাদা করার পরিবর্তে একত্রিত করা।
কিন্তু এমনও কিছু ভারতীয়-আমেরিকান যারা আছেন, যারা রামাস্বামীর রাজনীতির সঙ্গে একমত নন। তাদের ধারণা রামাস্বামীর প্রচারণায় গভীরতার অভাব রয়েছে।
ডেমোক্র্যাট শেখর নারাসিমহান, এএপিআই (এশিয়ান আমেরিকানস অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার্স) ভিক্টরি ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মার্কিন রাজনীতিতে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রাধান্য পেতে দেখে তিনি খুশি হলেও রামাস্বামীর বিষয়ে তিনি আস্থাশীল নন। তিনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ এবং তার ব্যক্তিত্বে কোনো দাগ নেই। তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি কী?
নারাসিমহান বলেন, তিনি কি বয়স্কদের চিকিৎসার বিষয়ে খেয়াল রাখেন? অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের বিষয়ে তার পরিকল্পনা কী? তার নির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নেই এবং এখনও তার নীতিগুলো স্পষ্ট করেননি।
বিভিন্ন কমিউনিটির অনেক মানুষ আছেন যারা বহু বছর যাবত রিপাবলিকানদের সমর্থন করছেন। তারা বলেছেন, রামাস্বামী এই লড়াইয়ে না আসা পর্যন্ত তারা কখনও তার সম্পর্কে শোনেননি।
সুপরিচিত রিপাবলিকান পার্টি সমর্থক এবং তহবিল সংগ্রহকারী ডা. সাম্পাত শিভাঙ্গি বলেন, আমি তার সঙ্গে কখনো দেখা করিনি। আমাকে বলা হয়েছে তার অনেক টাকা আছে এবং বেশ ভালো কথা বলেন। কিন্তু তিনি অন্য দশটা প্রার্থীর মতো একজন প্রার্থী। তার খুব বেশি সুযোগ নেই।
জর্জ ডব্লিউ বুশের পর থেকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহকারী হোটেল ব্যবসায়ী ড্যানি গ্যাকওয়াড বলেন, রামাস্বামী যদি প্রথম দিকে তার উপস্থিতি জানান না দেন, তাহলে কেউ তার কথা জানতে চাইবে না।
গ্যাকওয়াড প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রামাস্বামীর সাহসের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তার একটি কৌশল থাকা বেশ জরুরি। সেটি হলো- ভারতীয়-আমেরিকানদের জন্য কিছু আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখনও বেশ প্রাথমিক অবস্থায় আছি, ফ্লোরিডায় দুজন শক্তিশালী প্রার্থী থাকতে পারেন। এর মধ্যে গভর্নর রন ডিসান্টিসের কথা তিনি উল্লেখ করেন, যিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেননি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ভারতীয়-আমেরিকান রিপাবলিকানরা ট্রাম্প, ডিসান্টিস ও হ্যালির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন।
নিকি হ্যালির আক্রমণাত্মক প্রচারণা শৈলীর প্রশংসা করে শিভাঙ্গি বলেন, ট্রাম্প যদি প্রার্থিতার লড়াই থেকে ছিটকে পড়েন তাহলে তিনি হ্যালিকে সমর্থন করবেন।
রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে, ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ক্রমে বাড়তে থাকায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষ বেশ খুশি, বিশেষ করে গত তিন দফার নির্বাচনে, এবং এবারে তাদের একজনের প্রার্থিতার সম্ভাবনা বেশ গর্বিত করেছে।