শত শত বাংলাদেশিকে ভাড়া করা বিমানে লিবিয়ায় পাচার করা হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাঠানো হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে মাল্টার সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড মাল্টা টুডে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সিরিয়ার দামেস্ক এবং লিবিয়ার বেনগাজির মধ্যে স্থানান্তরের জন্য অপরাধী গোষ্ঠী অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ ইউরো করে আদায় করে। এই স্থানান্তরের জন্য সিরিয়ার এয়ারলাইন চাম উইংস পরিচালিত ফ্লাইট ব্যবহার করা হয় । প্রশাসনের নাকের ডগায় এই পাচারের কাজটি সারতে মানবপাচারকারীরা অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ ইউরো ‘প্রশাসন ফি’ হিসেবে আদায় করা হয় ।
অর্থ আদায়ের পর অভিবাসীদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার পর বিমানের টিকিট দেওয়া হয়। এই টিকিট আবার একটি নির্দিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সি থেকে নগদে কিনতে হয় । এর জন্য মানবপাচারকারীরা অভিবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে যায় এবং তাদের পক্ষে ফ্লাইট বুক করে। লিবিয়ায় যাওয়ার পর পাচারকারীদের আরেকটি ইউনিট অভিবাসীদের উপকূলীয় এলাকায় নিয়ে গিয়ে নৌকায় উঠিয়ে দেয় । ইতালিতে পৌঁছানোর জন্য ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার বিপজ্জনক যাত্রা শুরু হয় অভিবাসীদের ।
ইউরোপীয় সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স এবং উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের কাছ থেকে ইতালি ও মাল্টা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই তথ্য পাওয়া গেছে । এই পাচারকারী নেটওয়ার্কের বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন ইউরোপীয় কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছিল । গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে এটি উপস্থাপন করা হয়েছিল ।
গত বছর ধরে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসী নৌকায় করে লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার সময় নৌকাডুবির শিকার হয়। ওই সময় মানবপাচারের এই চক্রের ব্যাপারটি আলোচনায় আসে। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ বেনগাজির ১৭৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৪৭ জন আরোহী নিয়ে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অভিবাসীদের একটি নৌকা ডুবে যায় । ওই ঘটনায় ৩০ জন নিখোঁজ হয় এবং ১৭ জনকে ইতালীয় উপকূলরক্ষীরা উদ্ধার করে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, নৌকাটিতে থাকা অধিকাংশ অভিবাসীই ছিল বাংলাদেশি ।
এই ঘটনার তিন দিন পর মাল্টার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বায়রন ক্যামিলেরি পার্লামেন্টে বিষয়টি উত্থাপন করেন । তিনি জানান, অভিবাসীদের পাচারে যে ভাড়া করা বিমানগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো পরিচালনা করে চ্যাম উইংস। মাল্টা এই এয়ারলাইনটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউরোপীয় কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।
সাগর পাড়ি দিয়ে বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা জানিয়েছেন, পূর্ব লিবিয়ার বেনগাজি হচ্ছে একমাত্র আকাশপথ যেটি অভিবাসীদের স্থানান্তর করার জন্য অপরাধী চক্র ব্যবহার করে। এই এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ করে যৌথ সরকার। জাতিসংঘ এবং জেনারেল হাফতার এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি ।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বেনগাজির আকাশপথ সিরিয়ার নাগরিকদের জন্যও ব্যবনাগরিকদেরহৃত হয় । তবে বাংলাদেশি ও সিরিয়ার আলাদাভাবে পাচার করা হয় । বিমানযাত্রার সময় অভিবাসীরা আসনেও বসার সুযোগ পায় না । তাদের সঙ্গে বিমানের ক্রুদের আচরণও সুখকর নয়। বেনগাজিতে অবতরণের পর যাত্রীদের চেকিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই । লিবিয়ার কর্মকর্তারা যাত্রীদের স্রেফ পাসপোর্ট চেক করেন এবং ‘একটি নোটবুকে’ নাম নথিভুক্ত করেন । অভিবাসীদের এরপর তাদের পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় । এই পাচারকারীরা অভিবাসীদের একটি সেফহোমে নিয়ে যায় ।
পাচারকারীরা অভিবাসীদের কিছু অংশকে লিবিয়ার পূর্ব উপকূল দিয়ে বিপজ্জনক সামুদ্রিক পারাপারের ঠেলে দে য়। অন্যদেরকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পশ্চিম লিবিয়ার উপকূলে স্থানান্তরিত করা হয় । সেখান থেকে কম বিপজ্জনক সামুদ্রিক যাত্রা ল্যাম্পেডুসার পথে ঠেলে দেওয়া হয় ।
পাচারকারী নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত সূত্র মাল্টা টুডেকে জানিয়েছে, লিবিয়ায় বাংলাদেশি এবং সিরিয়ানরা অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় বেশি হারে অর্থ প্রদান করে ।