লাখ লাখ টাকা খরচ করে কেয়ার ভিসায় ব্রিটেনে এসে সমস্যায় পড়া এমন অভিবাসীদের একজন ভারতীয় তরুণ পরিচর্যাকর্মী ইসমাইল। তিনি বলেন, “আমাদের কোন কথা না শুনেই তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
ইসমাইল এবং তার বোন জয়নাব চলতি বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা কর্মী বা কেয়ার ভিসা নামক বিশেষ ব্যবস্থায় বৈধ অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। জয়নবের সঙ্গে তার স্বামী এবং সন্তানও এসেছেন।
২০২০ সালে চালু হওয়া কেয়ার ভিসায় তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য ব্রিটেনে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে থাকেন অভিবাসীরা। সম্প্রতি বাতিল করা হলেও আবেদনকারীরা এর আগে স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানদের এই ভিসায় আনার সুযোগ পেতেন ।
গত বছর এই ভিসায় বিপুল আবেদন জমা হলে সরকার এ সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তন করে এবং অনিয়মের অভিযোগে অভিবাসীদের স্পনসরকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ক্র্যাক ডাউন শুরু করে। যার ফলে বিপাকে পড়েছেন এসব এজেন্সির সহায়তায় আসা হাজার হাজার অভিবাসী।
জয়নব এবং ইসমাইল এমন হাজারো কেয়ার ওয়ার্কারদের মধ্যে দুজন, যারা কয়েক হাজার পাউন্ড পরিশোধ করেও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বৈধ ভিসায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্যও তাদের মধ্যস্থতাকারীদের বিপুল অর্থ প্রদান করতে হয়েছে। তাদেরকে সামাজিক পরিচর্যা খাতে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ব্রিটেনে আসার পর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
চলতি বছরের মে মাসে ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (টিবিআইজে) এবং দৈনিক অবজারভার এর সঙ্গে কথা বলেন ভুক্তভোগী অনেক অভিবাসী। তারা একেকটি ভিসার জন্য ১৮ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড বা ২১ হাজার ইউরোর বেশি খরচ করেছেন বলে জানান। কিন্তু এত অর্থ খরচ করে এসেও প্রতিশ্রুত বাসস্থান এবং চাকরি পাননি বেশিরভাগ ব্যক্তিরা।
ভারতীয় অভিবাসী জয়নব বলেন, এপ্রিল মাসে তারা ব্রিটিশ হোম অফিস থেকে একটি চিঠি পান। যেখানে বলা হয় তারা যে কোম্পানির মাধ্যমে কেয়ার ভিসায় এসেছেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চিঠিতে তাদেরকে কেয়ার সেক্টরে বিকল্প স্পনসর এবং কর্মসংস্থান খুঁজতে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। অন্যথায় তাদেরকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে বলে সতর্ক করা হয়।
জয়নব টিবিআইজে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে এই সেক্টরে প্রায় ৩০০টি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও কোন জায়গা ইতিবাচক সাড়া পাইনি। আমরা জানি না আমরা কীভাবে বাঁচব।”
‘এটি একটি দুঃস্বপ্ন”
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইন পেশায় আছেন আইনজীবী রুম্বিডজাই বুনজাওয়াবায়া। তিনি তার সংস্থা টিউলিয়ার মাধ্যমে কেয়ার ভিসায় আসা বিদেশি কর্মী এবং তাদের নিয়োগকর্তাদের আইনি পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করেন।
রুম্বিডজাই বুনজাওয়াবায়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, আমরা ইসমাঈল এবং জয়নবের মতো একই পরিস্থিতিতে থাকা অনেক অনেক লোককে পাচ্ছি। প্রতিদিন আমরা সমগ্র যুক্তরাজ্য থেকে নতুন নতুন মক্কেল পাই। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার আপনি একটি ঘটনা শুনলে মনে হবে বাকি সব লোকের সমস্যা শুনে ফেলেছেন। এটি একটি চরম দুঃস্বপ্ন।”
তিনি আরও যোগ করেন,, ২০২৩ সালে ৫৯ হাজার কেয়ার কর্মী ব্রিটেনে এসেছেন। যদিও এই পরিসংখ্যানে আবেদনকারীদের সাথে আসা পরিবারের সদস্যদের যুক্ত করা হয়নি।
মাইগ্রেশন অবজারভেটরি অনুসারে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত আবেদনকারীদের সংখ্যা ৭৭ হাজার ছুঁয়েছিল। ওই সময়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ কর্মী কেয়ার ভিসায় এসেছিলেন।
যেভাবে অভিবাসীরা কেয়ার ভিসায় আসেন
আইন অনুযায়ী যাদের ভিসা দেওয়া হয় তারা তারা হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ব্রিটিশ নিয়োগকর্তাদের অধীনে কাজ করতে পারেন।
এই ভিসায় আবেদন করার জন্য একজন ব্যক্তি ঠিক কাজ করতে ব্রিটেনে আসছেন সেটির বিশদ তথ্য সহ একজন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে স্পনসরশিপ সনদ জমা দিতে হয়।
আবেদন করার জন্য একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ইংরেজি বলতে, পড়তে, লিখতে এবং বুঝতে সক্ষম হওয়ার দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়। এছাড়া আবেদনপত্রে সামাজিক পরিচর্যা খাত সম্পর্কিত সাধারণত জ্ঞানের প্রমাণ দিতে হবে।
প্রতি আবেদনকারীকে এক হাজার ২৭০ পাউন্ড এবং স্বামী/স্ত্রীর জন্য অতিরিক্ত ৩১৫ পাউন্ড এবং সন্তানদের জন্য জনপ্রতি ২০০ পাউন্ড সমমানের অর্থ কমপক্ষে ২৮ দিনের জন্য ব্যাংক একাউন্টে রেখে একটি প্রমাণপত্র অভিবাসনের খরচ হিসেবে দূতাবাসের ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হয়।
অর্থাৎ একজন ব্যক্তিকে দেখাতে হয় তিনি তার সঙ্গী এবং সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট অর্থ আছে। যদি কোন আবেদনকারী সেটি দেখাতে না পারেন তাহলে তার স্পন্সর কোম্পানি অথবা এজেন্সি আর্থিকভাবে সমর্থন করতে সম্মত এবং বাসস্থানের জন্য কমপক্ষে একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে এমন প্রমাণ দেখাতে হয়।
সব ঠিক থাকলে কেয়ার ভিসায় আবেদনকারীদের ব্রিটিশ দূতাবাসগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদি পর্যন্ত ভিসা প্রদান করে থাকে। তিন বছর মেয়াদি ভিসার জন্য জনপ্রতি ২৮৪ পাউন্ড এবং তিন বছরেরও বেশি সময়ের ভিসার জন্য ৫৫১ পাউন্ড ভিসা ফি হিসেবে দূতাবাসে জমা দিতে হয়।
এই পদ্ধতিতে একবার যুক্তরাজ্যে এলে সকল শর্ত পূরণ করলে যতবার ইচ্ছার এই ভিসা নবায়নের জন্য আবেদন করা যায়। বৈধভাবে পাঁচ বছর পর থাকার পর একজন অভিবাসী চাইলে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আবেদন করতে পারেন। যার ফলে এই ধরনের ভিসা যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের আশায় থাকা ব্যক্তিদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠে।
ব্রিটিশ সরকার স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাতে শ্রম ঘাটতি পূরণে এটিকে সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছিল। কারণ ব্রেক্সিটের পর হাজার হাজার ইইউ নাগরিক ব্রিটেন ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
২০২৪ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত কেয়ার ভিসায় আবেদনকারীরা পরিবারের সদস্যদের আনার সুযোগ পেতেন। এটি অনেক আবেদনকারীদের কাছে পরিবারসহ অভিবাসনের একটি আকর্ষণীয় সুযোগ হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। যাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক পুরুষ অভিবাসীরা নিজেদের স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন।
এই পদ্ধতির যত জটিলতা
আইনজীবী বুনজাওয়াবায়ার মতে, স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ভিসা মূলত অদক্ষ লোকদের জন্য অভিবাসনের পথ খুলে দিয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই সারা বিশ্ব থেকে আগত অনেক মানুষের জন্য সোজা রাস্তা খুলে দিয়েছে।
এসব সেক্টরের নতুন চাহিদা পূরণ করার জন্য নিয়োগ এবং স্পনসরশিপ কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হতে প্রচুর কোম্পানি দ্রুত গড়ে উঠেছিল।
২০২১ সালে ব্রিটেনে টায়ার ২ বা দক্ষ কর্মী এবং টায়ার ৫ বা অদক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য ৩৪ হাজারেও বেশি কোম্পানি নিবন্ধিত হয়ছিল। যদিও এসব কোম্পানির মধ্যে সবগুলো শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা খাতে পরিচালিত হয়নি।
বুনজাওয়াবায়া ব্যাখ্যা করেন, “আমি মনে করি হোম অফিস শুরুর দিকে ভালো করে পরিকল্পনা করেনি। বিশেষ করে কারা এসব কর্মীদের যথাযথভাবে স্পন্সর করতে পারবে সেটির পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, হোম অফিস এই সেক্টরে ঘাটতি পূরণ করতে এত আগ্রহী ছিল যে নিবন্ধনকারী সংস্থার সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে নতুন কোম্পানি স্থাপন ও অনুমোদন করা হয়েছে। অনেকেরই এই সেক্টরে পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না।
সহজ টার্গেট
যদিও প্রকৃত ভিসা আবেদনের খরচ মাত্র কয়েকশ পাউন্ড কিন্তু অনেক অভিবাসী এই ভিসায় বৈধভাবে ব্রিটেনে আসতে হাজার হাজার পাউন্ড দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। মূলত তারা দালালচক্র এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন।
বুনজাওয়াবায়া বিশ্বাস করেন, অপরাধীরা এবং দুর্বৃত্তরা এই নিয়মের সুবিধা নিয়েছে। অনেক লোক যুক্তরাজ্যে আসতে চায়। নৌকায় চ্যানেল পার হতেই যেখানে পাচারকারীদের বিপুল অর্থ দিতে হয় সেখানে বৈধ ভিসায় চাকরিসহ আসা যাবে এমন খবরে হাজার হাজার পাউন্ড দিবে এটাই স্বাভাবিক।
তার মতে,
এটি একটি পণ্যে পরিণত হয়েছিল। আমরা শুনেছি লোকেরা কেয়ার ভিসার জন্য জনপ্রতি সাত হাজার থেকে ১০ হাজার পাউন্ড দিতে দিতে প্রস্তুত ছিল। সব মিলিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী অভিবাসীদের কাছে গড়ে ১৮ হাজার থেকে ২৪ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাও আমরা নথিভুক্ত করেছি।
এই আইনজীবী বলেন, এই সেক্টরে কাজ করা বেশ কিছু পুরনো কোম্পানি শুরুর দিকে এসব ঘটনা বুঝতে পারেনি। অনেকর ধারণা ছিল না যে তারা যেসব ব্যক্তিদের নিয়োগ করেছে তারা মূলত বিপুল টাকায় স্পন্সর কিনে এখানে কাজ করছেন।
প্রতারণা
বুনজাওয়াবায়া মনে করেন, বর্তমান জটিলতার একটি কারণ হতে পারে অংশ হতে পারে কিছু অভিবাসী শ্রমিক ‘অধৈর্য’ হয়ে পরেন।
তিনি স্বীকার করেছেন, সমস্ত আমলাতান্ত্রিক ধাপের বিবেচনায় সরকারের চাহিদাও প্রকৃতপক্ষে বিপুল। যারা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না তারাই প্রায়শই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু হয়।
বুনজাওয়াবায়া বলেন, “মানব পাচারকারীরা কখনো কখনো বাংলাদেশ এবংপাকিস্তানের কিছু অঞ্চল এমনকি পুরো গ্রামকে সম্ভাব্য গ্রাহক হিসেবে টার্গেট করছিল।”
এসব চোরাকারবারিদের প্রায়ই প্রকৃত কেয়ার সংস্থা ছিল না।
তিনি যোগ করেন,
আমি বর্তমানে একটি সত্যিকারের কোম্পানির সাথে কাজ করছি এবং তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। কোম্পানিটি বুঝতে পেরেছে তারা এমন অনেক লোককে নিয়োগ করেছে যারা ভালোভাবে ইংরেজি বলতে পারে না।
“স্পন্সর ভিসা ইস্যু করার আগে নিয়ম অনুযায়ী কেয়ার কোম্পানিগুলোকে একটি ইন্টারভিউ নিতে হয়। অনেক কোম্পানি এখন একটি নির্দিষ্ট ভাষা স্তর এবং এটি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় উপায় খুঁজে পেয়েছে। ইতিপূর্বে কোম্পানিগুলো জুম অ্যাপসের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিত। আবেদনকারীরা ভিডিও সাক্ষাৎকারে ইংরেজি পারলেও ব্রিটেনে এসে উল্টোচিত্র দেখা দেয়। সম্ভবত এসব ক্ষেত্রে অপব্যবহার হয়েছে”, যোগ করেন বুনজাওয়াবা।
ভুয়া কোম্পানি এবং ওয়েবসাইট
এই অভিবাসন আইনজীবী কেয়ার ভিসা নিয়ে আরেকটি সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন। সেটি হলো স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা খাতের খ্যাতনামা কোম্পানির ক্লোনিং বা নকল করা। অনেক কোম্পানির স্পনসরশিপের নথি হ্যাক করা হয়েছিল।
যার ফলে বৈধ কোম্পানির নামে লোক নিয়োগ করা হলেও অর্থ চলে গিয়েছিল মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্টদের হাতে। অভিবাসীরা ব্রিটেনে আসার পর অনেক কোম্পানি জানত না তারা দেশটিতে কি করছে।
তিনি বলেন, এমনকি একটি ক্ষেত্রে এক কোম্পানির কাজের শিফট ব্যবস্থা ক্লোন করা হয়েছিল। অভিবাসীরা ভেবেছিল তাদের কখন কাজ দেবে সেই হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা পুরো সিস্টেমটিকে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার ও শোষণ করেছে। পরিসংখ্যান দেখলে আপনি পরিষ্কার হবেন আমরা কেন এখনও কেন যোগ্য কর্মী পেতে সংগ্রাম করছি। অনেক কোম্পানি স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা খাতের লোক ভেবে লোকেদের নিয়োগ দিলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের সেই যোগ্যতা ছিল না।
ক্র্যাকডাউন
হোম অফিস তাদের শৈথিল্য নিয়ম এবং যুক্তরাজ্যে এই রুট নিয়ে চলা অনিয়ম নিয়ে নিশ্চিত হলে পরিস্থিতি ঠিক করতে তারা ক্র্যাক ডাউন বা অভিযান শুরু করে।
কর্তৃপক্ষের মতে, তারা এটির মাধ্যমে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে।
তবে এই নিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়া অনেকাংশে ‘নির্বিচার’ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ অনেকের। অনেক কোম্পানির লাইসেন্স প্রত্যাহার করেছে। যার ফলে লোকেরা তাদের চাকরি এবং যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার হারিয়েছে।
আইনজীবী বুনজাওয়াবায়া বলেন,
এই ঘটনাগুলো মূলত ২০২৩ সালে ঘটতে শুরু করে। ওই বছর দেশটিতে বৈধ অভিবাসনের পরিসংখ্যান সরকারের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল এবং এটি যুক্তরাজ্যে সামগ্রিক অভিবাসনকে কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির বিপরীত ছিল। মোট ১২ লাখ মানুষ বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিল।
ব্রিটিশ অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স অনুসারে, দেশটির নিট মাইগ্রেশন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৮৫ হাজার।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কেয়ার ভিসার কিছু ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। কারণ কিছু কেয়ার কোম্পানির কর্মী চাহিদা এত বেশি ছিল যে নিজেরা নিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত সময় তাদের হাঁতে ছিল না। তারা এই মধ্যস্বত্বভোগীদের বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এমন অনেক শ্রমিককে খুঁজে পেয়েছিল যারা আসলে এই সেক্টরের কাজ পারে না এবং একদম ইংরেজি বলতে পারেন না।
অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীরা নিজেরাই এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। যেহেতু তারা বিপুল অর্থ দিয়েছিল এজেন্সিগুলো চেয়েছে তাদেরকে দ্রুত কাজে লাগাতে। কোম্পানি নিয়োগ করা কর্মীদের ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারছিল না। সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য সমস্যাগুলো বড় ও জটিল হয়ে গিয়েছিল।
‘দেশে ফিরে যাওয়া বিকল্প নয়’
এমন পরিস্থিতিতে থাকা বেশিরভাগ শ্রমিকই তাদের দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী নন। ইসমাইল এবং জয়নাবের মতো বেশিরভাগ অভিবাসীদের দেশে বিশাল ঋণ রয়েছে।
অনেকেই তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়েছিল এবং ব্রিটেনে এসে কাজ করে ঋণ পরিশোধ করার প্রত্যাশা দিয়ে এসেছিলেন।
প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়া অভিবাদীরা বাড়িতে ফিরে গেলে নিজদের কমিউনিটি বা এলাকায় অনেক উত্তেজনা তৈরীর ঝুঁকি তৈরী হয়।
ভুক্তভোগীদের মতে, “পাওনা পরিশোধ না করে ফিরে যাওয়া কোন বিকল্প নয়।”
আইনজীবী বুনজাওয়াবায়াসহ অনেকেই এসব বিষয়ে ফেসবুক লাইভ সেশন করেন যাতে করে তথ্যগুলো অভিবাসীদের মূল দেশে পৌঁছায়। কিন্তু অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী উত্তর দেন তারা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ব্রিটেনে প্রবেশ করা।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি অনেক লোক জানে যে তারা এই রুটের জন্য অনেক বেশি অর্থ প্রদান করছে।”
এক অভিবাসী এই আইনজীবীকে ফেসবুকে বলেন, বরং ইংল্যান্ডে কষ্ট পেলেও ভালো হবে কারণ সেখানে দুর্ঘটনা হলে আপনি বিনামূল্যে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। জিম্বাবুয়েতে আপনি হাসপাতালে যান সেখানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নেই। নেই কোনো এক্স-রে মেশিন কিংবা ব্যথানাশক ঔষধ। তারা মনে করে যে যাই হোক না কেন, তারা ইংল্যান্ডে আসার চেষ্টা করবে।
বুনজাওয়াবায়া স্বীকার করেন, অপরদিকে এমন অনেকেই আছে যারা জানেন না যোগ্যতা থাকলে ভিসা পেতে আপনাকে হাজার হাজার পাউন্ড দিতে হয় না। যেসব অভিবাসীরা জন্য যারা এখনও আইনি পথের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের আশা করছেন তাদের জানা উচিৎ বৈধ ভিসায় বিপুল টাকা দিতে হয় না। এমনটি হলে আপনি মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাতে পড়েছেন বলে ধরে নিতে হবে।
‘জটিল স্বপ্ন’
অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা এই আইনজীবী মনে করেন, এই রুটে অনেক বিষয় এখনও অস্পষ্ট। একটি চাকরি ছাড়া এবং সুরক্ষা ছাড়া যুক্তরাজ্যে জীবন কতটা কঠিন হতে পারে সেটি সম্পর্কে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কোন ধারণা থাকে না। বৈধ ভিসায় এসেও যে কেউ ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ব্যখ্যা করেন, তারা এক কথায় হতাশায় এবং অরক্ষিত থাকেন। অভিবাসীদের স্বপ্ন এক প্রকার বিক্রি হয়ে যায়। তারা মনে করেন ইংল্যান্ডের রাস্তা সোনা দিয়ে মোড়ানো। এটি দুধ এবং মধুর দেশ। একবার আসলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যখন তারা এখানে আসে এবং কাজের ধরন দেখে হতাশ হয়। স্থানীয় লোকেরা এসব কাজ করতে চায় না তাই বিদেশিদের আনা হয় এমন চিত্র দেখে তারা হতাশ হন।
“অভিবাসীরা অনেক কথা বিশ্বাস করে কারণ তারা দুর্বল পরিস্থিতি থেকে আসেন। তারা ধরে নেন তাদের অনেক সুবিধা দেওয়া হবে কিন্তু এগুলো যে সব সময় পাওয়া সম্ভব নয় সেটি তারা সত্যিই জানে না। হতাশার কারণে তাদের সুবিধা নেওয়া হয়, এবং যখন কেউ যখন মরিয়া হয় এবং খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তখন তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকেন”, মন্তব্য করেন আইনজীবী বুনজাওয়াবায়া।
প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন ইনফোমাইগ্রেন্টস