শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০ অপরাহ্ন

ব্রঙ্কসে মাকসুদার আয়োজনে পিঠা উৎসব ও সঙ্গীতানুষ্ঠান

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩

নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ আর জমজমাট আয়োজসে অনুষ্ঠিত হয়েছে কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও কবি মাকসুদা আহমেদ-এর বর্ণিল পিঠা উৎসব। গত ১৫ মার্চ বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকায় গোল্ডেন প্যালেসে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার নানা পিঠা’র সমাহার ছিলো। বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন (বাকা)’র সহযোগিতায় এদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে পিঠা উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী সহ নানা শ্রেণী পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এই পিঠা উৎসবকে কেন্দ্র করে গোল্ডেন প্যালেসে নামে মানুষের ঢল। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো হলরুম। অনেকে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে দেখা যায় এ পিঠা উৎসব। এরআগে পিঠাপুলি দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থল। পিঠা উৎসবে শোভা পাচ্ছিল পাটিসাপ্টা, ভাপাপিঠা, তেলে পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, পাকুন পিঠা, নারিকেল পুলি, নিমকি, সাবুদানা, ডালপুরি, ডালপাকন, বুলশা সহ নাম না জানা অসংখ্য পদের পিঠাপুলি। উৎসবে বাসায় তৈরী পিঠা আনার প্রতিযোগিতায় যেন মেতে ওঠেন আয়োজক এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবরা। আয়োজক ও তার বন্ধু-বান্ধবীদের হাতে তৈরী বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানান আকৃতি, নানান স্বাদ আর রঙের এসব পিঠা অতিথিদের জন্যে ছিল ফ্রী। পিঠার মৌ মৌ গন্ধে উৎসব প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় এক ভিন্ন আমেজের। আয়োজকদের দাবী প্রায় চার’শ অতিথিকে পিঠাপুলি পরিবেশন করা হয়। উৎসবে আরো ছিল নৃত্য, সঙ্গীত সহ মনোজ্ঞ সব পরিবেশনা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলকে শুভেচ্ছা জানান আয়োজক নারী নেত্রী মাকসুদা আহমেদ। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার, বাংলা সিডিপ্যাপ ও এ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারন সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, ট্রাস্টি আজিমুর রহমান বুরহান, বিশিষ্ট রাজনীতিক আব্দুর রহিম বাদশা, কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আলমগীর খান আলম, রিয়েলস্টেট ইনভেস্টর নুরুল আজিম, বাকা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল হাশিম হাসনু, সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকন, সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার চৌধুরী, রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী সালেহ উদ্দিন সাল, বিশিষ্ট সাংবাদিক আকবার হায়দার কিরন, হৃদয়ে বাংলাদেশ’র উপদেষ্টা মামুন রহমান, সহ সভাপতি বদরুজ্জামান রুহেল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বাংলা ক্লাবের সহ-সভাপতি মোমিনুল ইসলাম, তিতাস মাল্টি সার্ভিসের কর্ণধার মেহের চৌধুরী, কবি কামরুন্নাহার রিতা, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট জামাল হুসেন, রায়হান জামান রানা, মখন মিয়া, জামাল আহমেদ, মার্গারেট মল্লিক, ইলা সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট বদরুজ্জামান রুহেল, রেজা আব্দুল্লাহ স্বপন।

অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে পিঠা তৈরী করে উৎসবে নিয়ে আসা পিঠা শিল্পীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়া হয়। এতে সেরা ৩ পিঠা শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাউল শিল্পী কালা মিয়া, নিউইয়র্কের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রোজি, সৈয়দ কামরুজ্জামান ফয়েজ ও মুসাফির মুক্তা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সাথে ছিলেন ঢোলক শফিক মিয়া। নৃত্য পরিবেশন করে ক্ষুদে নৃত্য শিল্পী মায়া এঞ্জেলিকা। গভীর রাত পর্যন্ত এ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন দর্শক-শ্রোতারা। একপর্যায়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বাউল শিল্পী কালা মিয়ার জন্মদিনের কেকও কাটা হয়।

আনুষ্ঠানে মাকসুদা আহমেদ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতির অংশ। এধরনের উৎসব আমাদের মন প্রাণ বাঙালীত্বের আমেজে ভরে দেয়। প্রবাসে পারস্পারিক বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত করার লক্ষে ব্রঙ্কসে সর্বপ্রথম পিঠা উৎসবের আয়োজন করেন তিনি। পিঠা উৎসবের জয়জয়কার এখন সবখানে। সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে ভবিষ্যতে আরো বর্ণময় অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। বাঙালী সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে পারস্পারিক বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠবে।

বক্তারা বলেন, এধরনের পিঠা উৎসব সুযোগ করে দেয় প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের শেকড়, কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত হবার। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের সামনে বাঙালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরা না হলে একদিন তা হারিয়ে যাবে। বক্তারা বলেন, নিজস্ব স্বত্তা, সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এধরনের উৎসব বড়ই প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com