1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান যেভাবে গড়ে ওঠে
রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান যেভাবে গড়ে ওঠে

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ বছর। মেসোপটেমিয়ার বুক চিরে বয়ে চলেছে ইউফ্রেটিস নদী। তারই পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক রাজ্য—ব্যাবিলন; সভ্যতার সূতিকাগার। সোনালি প্রাচীর, বিশাল দ্বার, আকাশ ছোঁয়া জিগুরাত—সব মিলিয়ে যেন এক রূপকথার শহর।

এই রাজ্যের সিংহাসনে তখন বসেছেন এক পরাক্রান্ত রাজা নবুচাদনেজার দ্বিতীয়। তিনি শুধু একজন যোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন একজন শিল্পরসিক, স্বপ্নদ্রষ্টাও। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় শুরু হয় অ্যামিটিস নামের এক নারীকে বিয়ে করার পর।

অ্যামিটিস ছিলেন মিডিয়া রাজ্যের রাজকন্যা। যিনি সবুজ পাহাড়, ঝরনা আর ফুলের দেশে বড় হওয়া এক নরম মনের মেয়ে। ব্যাবিলনের সমতল মরুভূমি, ধূলিময় বাতাস আর গাছপালা-বিহীন পরিবেশে তিনি যেন নিজের দেশকে হারিয়ে ফেলেন।

একদিন সন্ধ্যায় প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে চুপ করে সূর্যাস্ত দেখছিলেন অ্যামিটিস। রাজা পাশে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘কী দেখছো, রানি?’ উত্তরে অ্যামিটিস বললেন, ‘আমার দেশের পাহাড় খুঁজছি। যেখানে পাখিরা গান গাইতো, ঝরনা বয়ে যেতো। এই মরু আমার নয়, রাজা।’

রাজা নবুচাদনেজার দ্বিতীয় জানতেন, এই দূর দেশে এসেও অ্যামিটিস কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। হয়তো তার শেকড়, হয়তো তার হাসি। তাই এক রাতে, চাঁদের আলোয় তিনি অ্যামিটিসের হাত ধরে বললেন, ‘তোমার জন্য আমি পাহাড় বানাবো। মাটির ওপর আকাশ ছুঁয়ে এক উদ্যান বানাবো, যেখানে তুমি হাঁটবে আর ভুলে যাবে তুমি নিজের দেশে নও।’

সেই রাতেই নবুচাদনেজারের হৃদয়ে জন্ম নেয় এক ইতিহাস। তিনি স্থির করলেন এক পাহাড় গড়বেন, এক সবুজ স্বর্গ, যাতে রানি আর একটুও একাকী না থাকেন।

পরের দিনই শুরু হলো কাজ। ব্যাবিলনের হৃদয়ে গড়ে উঠতে লাগলো এক অভূতপূর্ব স্থাপত্য। ধাপে ধাপে বানানো হলো পাথরের উঁচু স্তর। প্রতিটি স্তরে মাটি ফেলে লাগানো হলো গাছ, ফুল ও ফলের গাছ। তৈরি হলো ছোট ছোট ঝরনা। দূর থেকে মনে হতো আকাশে যেন এক বাগান ঝুলে আছে!

তখনকার মানুষ এই বিস্ময়কে নাম দিলো ‘শূন্য উদ্যান’। প্রশ্ন উঠতে পারে, এত উঁচুতে পানি উঠতো কীভাবে? মূলত রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়েছিল এক বিশেষ যন্ত্র, যার মাধ্যমে ইউফ্রেটিস নদী থেকে জল উঠতো ওপরে। অনেকে বলেন, এটি হয়তো স্ক্রু পদ্ধতি বা প্রাচীন হাইড্রোলিক সিস্টেমের প্রাচীন রূপ ছিল।

অ্যামিটিস প্রতিদিন সেই বাগানে হেঁটে বেড়াতেন। পাখির ডাক শুনতেন। ফুলের গন্ধে ডুবে যেতেন। পায়ের নিচে ফুলের পাঁপড়ি, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যেতো রঙিন পাখি। আর নবুচাদনেজার দূর থেকে তাকিয়ে থাকতেন। তিনি জানতেন, তার প্রেম এক নগরকে বদলে দিয়েছে। রানির মুখে আবার সেই পুরোনো হাসি ফিরে এসেছে।

ভালোবাসা শুধু হৃদয়েই নয়, কখনো কখনো সভ্যতার রূপও বদলে দেয়। ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান তেমনই এক প্রেমের চিরন্তন নিদর্শন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com