সেন্ট্রাল ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি।অস্ট্রিয়ার শিক্ষাব্যবস্থাও খুবই মানসম্পন্ন। অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বদা বিশ্ব র্যাংকিং শীর্ষ সারিতে থাকে। বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে বিনা বেতনে বা স্বল্প বেতনে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, অস্ট্রিয়ার বেশ কিছু ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আইইএলটিএস দরকার হয় না। এর পাশাপাশি থাকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্কলারশিপ পাওয়ারও সুযোগ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক আইইএলটিএস ছাড়াই অস্ট্রিয়ার যে আট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
১। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় (Vienna University):-
এখানে ইংরেজি, ব্যবসা, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান নিয়ে পড়তে গেলে ইংরেজিতে দক্ষতার সার্টিফিকেট দরকার হয়। তবে এখানে ভর্তির সময় আইইএলটিএস দরকার হয় না।
২। সালজবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় (University of Salzburg):-
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় দক্ষতা থাকতে হয়। আইইএলটিএস থাকতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শিক্ষার্থী ইংরেজিতে খুব দক্ষ, এমন একটি রিকমেন্ডেশন লেটার থাকলেই হয়।
৩। ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস টেকনিকুম উইন (University of Applied Sciences Technikum Wien):-
এখানে পড়তে ইংরেজি অথবা জার্মান ভাষায় দক্ষতা লাগে। তবে যদি আপনি আগের প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে থাকেন, তাহলে কোনো ভাষাগত দক্ষতার সনদ দরকার হবে না।
৪। জোহানেস কেপলার বিশ্ববিদ্যালয় (Johannes Kepler University):-
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বিষয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস লাগে, সব বিষয়ের ক্ষেত্রে লাগে না।
৫। মডুল বিশ্ববিদ্যালয় (Modul University):-
এটি অস্ট্রিয়ার অন্যতম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে বাংলাদেশিরা এইচএসসির পরই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে শুরুতে এক সেমিস্টারের একটি ফাউন্ডেশন কোর্স করতে হবে। তাহলে আর আইইএলটিএস লাগবে না, কোর্সের শেষে থাকবে পরীক্ষা। মূল ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির সময় আইইএলটিএস ৫.৫ স্কোর লাগবে।
৬। ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয় (University of Innsbruck):- পূর্বের পড়াশোনা বাংলা মাধ্যমে হলেও ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট থাকতে হবে অথবা পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি হতে হবে, তাহলে আইইএলটিএস লাগবে না। তবে যদি আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫ থাকে, তাহলে ভালো।
আরও পড়ুন: স্নাতকোত্তর-পিএইচডি করুন ব্রুনাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা
৭। ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস (Vienna University of Economics and Business): বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এখানে ব্যাচেলরে ভর্তি হতে হলে আইইএলটিএস লাগবে, তবে যদি অস্ট্রিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষা সেন্টারের সার্টিফিকেট থাকে, যেখানে শিক্ষার্থীর B2 লেভেলের যোগ্যতা উল্লেখ থাকে, তাহলে আইইএলটিএস লাগবে না। আর মাস্টার্সে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর ব্যাচেলর ডিগ্রি ইংরেজিতে করা হয়েছে, এমন প্রমাণ দিতে পারলে আর আইইএলটিএস লাগবে না।
৮। গ্রাজ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (Technical University Graz):-
এখানে পড়তে ইংরেজিতে দক্ষতার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। শিক্ষার্থী যদি পূর্ববর্তী পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে করার প্রমাণ দেখাতে পারেন, তাহলে আইইএলটিএস লাগবে না।
এছাড়াও রয়েছে বৃত্তি, যেগুলোয় আইইএলটিএস ছাড়াই আবেদনের সুযোগ রয়েছে
১. অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বৃত্তি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়া সরকার সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিনা মূল্যে পড়াশোনার জন্য এই বৃত্তি দিয়ে থাকে। এই বৃত্তির আওতায় শর্ট কোর্স, ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডিতে পড়াশোনা করা যায়।
যেসব বিষয়ে পড়া যাবে:
মেডিকেল সায়েন্স
হিউম্যান মেডিসিন
টেকনিক্যাল সায়েন্স
হেলথ সায়েন্স
মানবিক
কলা
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
সামাজিক বিজ্ঞান
বৃত্তির আওতায় যা থাকবে:
স্বাস্থ্য বিমা
যাতায়াত ভাতা
বাসস্থান ভাতা
মাসিক ভাতা
শর্তাবলি
* ব্যাচেলর প্রোগ্রামে আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীর অবশ্যই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে মোট ১২ বছরের শিক্ষাজীবন পূর্ণ করতে হবে।
* মাস্টার্সে আবেদনের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হবে এবং পিএইচডিতে আবেদনের জন্য অবশ্যই ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে।
* পিএইচডি প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছর এবং ব্যাচেলর ও মাস্টার্স প্রার্থীদের বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ বছর হতে পারবে।
* অস্ট্রিয়ার নাগরিক ব্যতীত অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকেরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যেভাবে আবেদন করবেন
অনলাইনে আবেদন করতে হবে এই ঠিকানায়। এখানে বিভিন্ন দেশ ও প্রোগ্রামভিত্তিক আলাদা আলাদা বৃত্তির তালিকা আছে, যেগুলোর সময়সীমাও ভিন্ন ভিন্ন। তাই আপনি যে বিষয়ের জন্য আবেদন করতে চান, সেটি ভালোভাবে খুঁজে নিতে হবে।
২. অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বৃত্তি
এডিসি অগ্রাধিকার দেশ আর উন্নয়নশীল দেশ; এই দুই ক্যাটাগরিতে এই বৃত্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যে বিষয়ে পড়াশোনা করা যাবে
এই বৃত্তির আওতায় ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের ওপর ডিপ্লোমা করা যাবে। এখানে ইলেকটিভস হিসেবে থাকবে শিল্পোদ্যোগ তথা এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ তথা টিচার্স ট্রেনিং। পড়াশোনা করতে হবে অস্ট্রিয়ার ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে।
বৃত্তির আওতায় যা থাকবে
টিউশন ফি
স্বাস্থ্য বিমা
খাবার টাকা
ভ্রমণ ভাতা
২০৫ ইউরো বা প্রায় ২৫ হাজার টাকা মাসিক হাতখরচ
গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
আবেদনের শেষ তারিখ: ৩১ মার্চ ২০২৪
কোর্স শুরু: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বৃত্তি প্রাপ্তির ঘোষণা: মে ২০২৪
ভিসা আবেদন: ২০২৪ সালের মে মাসেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে
অস্ট্রিয়ার নাগরিক ব্যতীত অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকেরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
যেভাবে আবেদন করবেন
প্রথমে এই লিংক থেকে বৃত্তির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হবে।
ঢাকাস্থ অস্ট্রিয়ার দূতাবাসে যোগাযোগ করে কিংবা আইটিএইচের (ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট) ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে হবে।
এই লিংক থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে তা ভালোভাবে পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে [email protected] ই-মেইলে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করা যাবে।
সঠিকভাবে পূরণকৃত আবেদন ফরম [email protected] ই-মেইলে পাঠিয়ে দিতে হবে। আবেদন ফরম ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় ডাকযোগেও পাঠানো যাবে।কর্তৃপক্ষ আবেদন ফরম হাতে পেলে একটি ফিরতি ই-মেইলে জানিয়ে দেবে।
ভর্তি আর খরচের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন এখানে