বেলজিয়াম ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এর বিমানবন্দরগুলি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। বেলজিয়ামের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট (Brussels Airport – BRU) নামে পরিচিত। এটি দেশের রাজধানী ব্রাসেলস শহরের উত্তরে অবস্থিত এবং ইউরোপীয় মহাদেশের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর।
লোকেশন:
ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার (৭ মাইল) দূরে অবস্থিত, যা সহজেই শহর থেকে অ্যাক্সেস করা যায়। এটি জাভেনটেম নামে একটি শহরতলীতে অবস্থিত, তাই একে অনেক সময় “জাভেনটেম এয়ারপোর্ট” নামেও ডাকা হয়। এখানে এসে আপনি ইউরোপের যেকোনো বড় শহরে সহজেই যেতে পারেন।
এয়ারলাইন্স যা বেলজিয়াম এয়ারপোর্ট থেকে পরিচালিত হয়:
ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট থেকে অনেক আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০টিরও বেশি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালিত হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য এয়ারলাইন্স হলো:
ব্রাসেলস এয়ারলাইন্স: বেলজিয়ামের জাতীয় এয়ারলাইন, যা ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
লুফথানসা (Lufthansa): জার্মানির প্রধান এয়ারলাইন, যা ইউরোপ এবং অন্যান্য মহাদেশে ব্যাপকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এয়ার ফ্রান্স (Air France): ফ্রান্সের প্রধান এয়ারলাইন, যা ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
কেএলএম (KLM): ডাচ এয়ারলাইন, যা ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এমিরেটস (Emirates): দুবাই থেকে পরিচালিত ফ্লাইট, যা মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপন করে।
কাতার এয়ারওয়েজ (Qatar Airways): এটি দোহা থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
রায়ানএয়ার (Ryanair) এবং ইজিজেট (EasyJet): ইউরোপীয় লো-কস্ট এয়ারলাইন্সগুলোও এখানে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
হোটেল ও রেস্তোরাঁ:
ব্রাসেলস এয়ারপোর্টের আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের হোটেল এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে যা ট্রানজিটে থাকা বা স্বল্পমেয়াদী থাকার জন্য আদর্শ। কিছু জনপ্রিয় হোটেল হলো:
শেরাটন ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট হোটেল: বিমানবন্দরের প্রধান টার্মিনালের পাশে অবস্থিত। যারা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য সুবিধাজনক হোটেল খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি অন্যতম সেরা অপশন।
ক্রাউন প্লাজা ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট: ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ এক আদর্শ হোটেল।
নোভোটেল ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট: পরিবার এবং পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক ও বাজেট-বান্ধব হোটেল।
এছাড়া, এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ও আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেমন:
স্যান্ডউইচ বারেরা: যারা হালকা খাবার পছন্দ করেন, তারা এখানে স্যান্ডউইচ, সালাদ, এবং প্যাস্ট্রি খেতে পারেন।
বেলজিয়ান বিয়ার ক্যাফে: এখানে আপনি বিখ্যাত বেলজিয়ান বিয়ার ও ট্র্যাডিশনাল বেলজিয়ান খাবার উপভোগ করতে পারবেন।
ট্রাফিক ও যাতায়াত:
ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ভ্রমণ করে। তবে, বিমানবন্দরের অবকাঠামো এবং পরিচালনা খুবই উন্নত, ফলে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে পরিচালিত হয়। এছাড়া, বিমানবন্দরের ভিতরে সাইনবোর্ড ও নির্দেশনা খুবই পরিষ্কার, যা নতুন পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক।
পরিবহন ব্যবস্থা:
ট্রেন: ব্রাসেলস এয়ারপোর্টের নিচে একটি ট্রেন স্টেশন রয়েছে, যা সরাসরি ব্রাসেলস শহর ও অন্যান্য শহরে সংযুক্ত। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে আপনি ব্রাসেলস সেন্ট্রাল স্টেশনে পৌঁছাতে পারেন।
বাস: বিভিন্ন বাস সার্ভিসও বিমানবন্দর থেকে শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে পরিচালিত হয়।
ট্যাক্সি: বিমানবন্দরের বাইরে সহজে ট্যাক্সি পাওয়া যায়, যা আপনাকে দ্রুত শহরে নিয়ে যাবে।
ভাড়া গাড়ি: এখানে অনেক আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ভাড়া গাড়ি সংস্থা রয়েছে, যেমন হের্টজ, এভিস, এবং সিক্সট। আপনি ইচ্ছে মতো গাড়ি ভাড়া করে নিজের মতো করে ভ্রমণ করতে পারেন।
বিমানবন্দরের সেবা:
ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে বিভিন্ন ধরনের সেবা রয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক এবং আরামদায়ক করে তোলে। কিছু উল্লেখযোগ্য সেবা হলো:
ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক টার্মিনাল: আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ দুইটি আলাদা টার্মিনাল, যা ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
লাউঞ্জ সুবিধা: বিজনেস এবং ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন প্রিমিয়াম লাউঞ্জ রয়েছে।
ফ্রি ওয়াই-ফাই: বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সংযোগ পাওয়া যায়।
শপিং ও ডিউটি-ফ্রি: বিমানবন্দরে বিভিন্ন ডিউটি-ফ্রি শপ এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের আউটলেট রয়েছে।
কার পার্কিং: বিমানবন্দরে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে।
মেডিকেল সেবা: বিমানবন্দরে মেডিকেল সেন্টার এবং জরুরি সেবা পাওয়া যায়।
উপসংহার:
ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট বেলজিয়ামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুবিধাসম্পন্ন বিমানবন্দর। এটি কেবলমাত্র বেলজিয়ামের জন্য নয়, পুরো ইউরোপের জন্য একটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে। আধুনিক সেবা, সুবিধাজনক যাতায়াত ব্যবস্থা, এবং উচ্চমানের হোটেল ও রেস্তোরাঁর কারণে ভ্রমণকারীরা এই বিমানবন্দরকে একটি নিরাপদ এবং আরামদায়ক স্টপ হিসেবে বিবেচনা করে।