দৈনন্দিন ছকে বাঁধা জীবন থেকে খানিকটা মুক্তি আর একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার ফুসরত পেতে বেড়াতে যাওয়ার চেয়ে ভালো বিকল্প আর কি হতে পারে? বিশেষ করে শীতের এই সময়টাতে যেন সবার ঘুরে বেড়ানোর হিড়িক পড়ে যায়। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ বা পড়ার চাপ কম থাকায় আর সঙ্গে বড়রাও তাদের পেশাগত জীবন থেকে খানিকটা সময় বের করে শীতের আমেজে বেড়ানোর জন্য মুখিয়ে থাকেন।
বেড়াতে যাওয়ার পূর্বে ভ্রমণ পরিকল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
একটা গোছানো প্রস্তুতি আপনার বেড়ানোকে করে তুলতে পারে সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী।
তাছাড়া ভ্রমণ যেমন আপনার মনকে উৎফুল্ল করে, তেমনি খেয়াল করে দেখবেন যখন আমরা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি, মনের মধ্যে একটা খুশি ভাব চলে আসে।
ইনস্টিটিউট ফর এপ্লাইড রিসার্চের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা ৯৭ জন উত্তরদাতা মনে করেন ভ্রমণের পরিকল্পনা তাদের সুখী করে তোলে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং কর্মস্পৃহা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যারা এই শীতে কোথাও বেড়িয়ে আসার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য রইল ভ্রমণের প্রস্তুতি এবং সতর্কতার আদ্যোপান্ত-
– প্রথমেই নির্বাচন করতে হবে ভ্রমণ গন্তব্য।
এক্ষেত্রে শীতকালে বেড়াতে যাওয়ার উপযোগী জায়গাগুলো বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
গন্তব্য নির্ধারণের পর বাজেট এবং কতদিনের জন্য যাচ্ছেন, সে অনুযায়ী যুতসই পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। গুগল, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউব থেকে গন্তব্য সম্পর্কে ধারণা নিলে প্রস্তুতি নেওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
– গন্তব্য, বাজেট ও তারিখ নির্ধারণের পর যাতায়াত ব্যবস্থা নির্বাচন করা প্রয়োজন।
বাস, ট্রেন, লঞ্চ, প্লেন- যে পরিবহনেই যান না কেন, পর্যটনের এই ভরা মৌসুমে আসন নিশ্চিত করতে হবে হাতে বেশ সময় রেখে।
– বেড়াতে যাওয়ার পূর্বে থাকার বন্দোবস্তটাও করে ফেলা শ্রেয়।
হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাজেট, লোকেশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
এসব বিষয়গুলো ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
– ব্যাগ গুছানোর সময় যেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন, সেই এলাকার আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা নিয়ে জামা-কাপড় নির্বাচন করতে হবে। যেহেতু শীত পড়ে গেছে, সেক্ষেত্রে গরম কাপড়- সোয়েটার, মাফলার, চাদর- এসব সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।
পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, ফাস্ট এইড বক্স, সানগ্লাস, টুপি, ত্বক সচেতন হলে সানস্ক্রিন ক্রিম সঙ্গে রাখতে হবে।
– প্রয়োজনীয় ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল ফোন, ফোনের চার্জার, ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি অবশ্যই নিতে ভুলবেন না।
– প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্র, এটিএম কার্ড, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পাসপোর্ট, কোভিড-১৯ টিকার সনদপত্র ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।
-পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা সঙ্গে রাখুন। তবে তা অবশ্যই সাবধানে এবং নিরাপদে রাখতে হবে।\ হারিয়ে বা চুরি যেন না হয়ে যায়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু ভাংতি টাকা সঙ্গে রাখা উত্তম।
– ভ্রমণের আগে আপনার পরিবার বা কাছের মানুষদের জানিয়ে যাওয়া উচিত। যাতে ভ্রমণকালীন কোনো বিপদে-আপদে তারা আপনাদের খোঁজ-খবর নিতে পারেন।
পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার নিকটস্থ থানা বা টুরিস্ট পুলিশের ফোন নাম্বার সঙ্গে রাখুন। একইভাবে বেড়াতে যাওয়ার সময় নিজ বাসগৃহ খালি থাকলে প্রতিবেশী এবং বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের খেয়াল রাখতে বলতে পারেন।
পরিশেষে ভ্রমণ গন্তব্যে ময়লা আবর্জনা, প্লাস্টিকের প্যাকেট নির্ধারিত জায়গায় ফেলুন। আপনার দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।