বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন

বুর্জ আল আরব

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩
Dubai, UAE - May 2013: People enjoying a sunny day at Jumeirah beach in front of the Burj al Arab hotel. Jumeirah Beach is a white sand beach that is located and named after the Jumeirah district

কথায় বলা হয় এই পৃথিবীর কোন সৌন্দর্য্য ই স্বর্গের মতো নয়। স্বর্গে যা চাওয়া হয় তা সাথে সাথে সামনে এসে হাজির হয়। কিন্তু আজ আপনাদের আমি এমন একটি হোটেল সম্পর্কে জানাবো যা এক কথায় স্বর্গতুল্য। সেখানে মানুষ যা চায় তাই পায়। কি নেই সেখানে? সোনার জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত হেলিপ্যাড, রোলস রয়েস সবকিছুই আছে সেই হোটেলে। বিলাসিতার আরেক নাম বলা হয়ে থাকে বুর্জ আল আরব কে। শুধুমাত্র দুবাই ই না বরং সারা বিশ্বের একমাত্র 7 স্টার হোটেল এই বুর্জ আল আরব। বিখ্যাত একটি আরব জাহাজের মাস্তুল এর অনুকরণে এই হোটেলটি বানানো হয়েছে। বুর্জ আল আরব এর অর্থ হচ্ছে আরবের সম্মান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এটি অবস্থিত।

এই 7 স্টার হোটেলের একটি সাধারণ মানের রুম ও যদি আপনি আপনি একদিনের জন্য ভাড়া নিতে চান তাহলে খরচ করতে হবে প্রায় সর্বনিম্ন এক লক্ষ টাকা। বড়ো রুম যদি নিতে চান তবে আপনাকে খরচ করতে হবে প্রায় 8 লক্ষ টাকা। আর সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাজকীয় কামরায় থাকতে প্রতিদিন খরচ হবে 25 লক্ষ টাকা। টাকার পরিমাণ টা শুনে অনেকের মনে হতে পারে খুব বেশি মানুষ এই হোটেলে যায় না। কিন্তু এমনটি ভেবে থাকলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ এই হোটেলে থাকতে হলে আগে থেকে শুধু রুম বুকিং করলেই হবে না সাথে আপনার জীবন বৃত্তান্ত বাধ্যতামূলক জমা দিতে হবে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই হোটেল দেখতে ছুটে আসে।

এই হোটেলে প্রবেশ করার আগে নিরাপত্তা তল্লাশি বাধ্যতামূলক এবং নির্দিষ্ট অংকের দিরহাম হোটেল কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়ে ঢুকতে হয়। আর হোটেলটিতে থাকতে হলে হোটেল কর্তৃক নির্দিষ্ট ড্রেসকোট মানতে হয়। ছোট পোশাক পরে হোটেলটিতে প্রবেশের অনুমতি নেই।

বিশ্বের সেরা এই হোটেল টি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় 5 হাজার কোটি টাকা। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় 1994 সালে। আর কাজ সম্পূর্ণ হয় 1999 সালে। সমুদ্রের মাঝে মানুষের তৈরি একটি কৃত্রিম দ্বীপ এর উপর এটি নির্মাণ করা হয়েছে। একটি ব্রিজের দ্বারা মূল ভূমির সাথে যুক্ত।

56 তলা বিশিষ্ট হোটেল টি তিনটি তলা রয়েছে জলের নীচে।  আর পুরো হোটেলে লিফট রয়েছে সর্বমোট 18 টি।

দৃষ্টিনন্দন এই হোটেলটির ভবনের নকশাকারী টম রাইড। তিনি ঐতিহ্যবাহী আরবিয়া নৌকার পালের আকারে বুর্জ আল আরবের ডিজাইন করেন। যা ভবিষ্যতের দিকে পাল তুলে এগিয়ে যাওয়া নির্দেশ করে।

বুর্জ আল আরবে যে সমস্ত অতিথিরা আসেন তাদের 24 ক্যারেট সোনার Iped দেওয়া হয়।  এই Ipad এ আইফোন কোম্পানির সাথে বুর্জ আল আরব হোটেলের লোগো লাগানো থাকে। Ipad দেওয়ার কারণ হলো তার কারণ হলো বিলাসবহুল এই হোটেলের অতিথিরা যাতে রাজকীয় ভাব অনুভব করতে পারে। এর বাইরে হোটেল টির নানা তথ্যাদি সহ বিভিন্ন সেবা Ipad এ দেওয়া থাকে। হোটেল রুমে বসে একজন অতিথি Ipad থেকে রেস্তোরাঁ গুলোর খাবার মেনু জেনে নিতে পারবে। আর যদি কোন অতিথি হোটেলে থাকা কালিন 24 ক্যারেট স্বর্ণের Ipad টি নিজের করে পেতে চান তবে তাকে 7 লক্ষ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে।

বুর্জ আল আরব এর অভ্যন্তরে অতিথি রা রাজকীয় সব সুযোগ সুবিধা উপভোগ করে। হোটেলের রুম ভাড়া করলে তাদের দেওয়া হয় একটি বিশেষ ধরনের কার্ড। এই কার্ড স্পর্শ করলে একটি সোনালী রঙের দরজা খুলে যায় আর রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চলে হোটেলের ভেতরে দরজা, জানালার পর্দার খোলার কাজ। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে টিভি, টেলিফোন, লাইব্রেরী এমনকি হোটেলের যে খাটে অতিথি রা ঘুমাই  সেটিও ইচ্ছা করলেই ঘোরানো যায়।

হোটেলটি এত বিশাল আকৃতির হওয়া সত্ত্বেও পুরো হোটেলে মাত্র 28 টি ফ্লোর আছে। অর্থাৎ পুরো ভবনের 40 শতাংশ জায়গায় ব্যবহারের অযোগ্য। শুধুমাত্র উচ্চতা বাড়ানোর জন্য এমনটি করা হয়েছে। হোটেলটির প্রত্যেক টি ফ্লোর দোতলা।  যেখানে রুম রয়েছে মোট 202 টি।

পুরো হোটেলে চোখে পড়বে সুন্দর সুন্দর সব একুরিয়াম এবং অতিথিদের জন্য অভ্যর্থনা কেন্দ্র। এর ভেতরে 87 হাজার স্কয়ার ফিট জায়গা 22 ক্যারেট সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো আর একটি ত্রিমাত্রিক কৃত্রিম ঝর্ণা রয়েছে।

বুর্জ আল আরবের রাজকীয় গেইট টি প্রায় 590 ফুট উঁচু যা যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাচু অফ লিবার্টি চেয়েও বড়। আপনি যদি এই হোটেলের 27 তলায় হেঁটে উঠতে চান তবে আপনাকে 1080 টি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে।

বুর্জ আল আরবের ছাদে একটি হেলিপ্যাড আছে। হোটেলটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এই হেলিপ্যাডে কিছু মজার কাজ করা হয়েছে। 2004 সালের মার্চ মাসে গল্ফ খেলোয়াড় টাইগার উড সাগরের দিকে বেশ কয়েকটি বল মেরেছেন।

2005 সালে দুইজন টেনিস খেলোয়াড় এই হেলিপ্যাডে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তখন অস্থায়ীভাবে হেলিপ্যাড টিকে একটি টেনিস গ্রাউন্ডে  রূপান্তর করা হয়েছিল।

এই হেলিপ্যাডে কোনো সীমানা ছিল না তাই যদি একবার বল বাইরে চলে যায় তবে সেটি কে ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় নেই।

এই হোটেলের রেস্তোরাঁ গুলি অন্য রকম। সেখানে মোট 2 টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেই রেস্তোরাঁয়  বসে এক পাশে তাকিয়ে আপনি দুবাইয়ের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর অন্য পাশে দেখতে পারবেন কৃত্রিম সাগর। সেখানে খাবারের দাম যে খুব বেশি সেটি নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। এই হোটেলের আরেকটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁ সমুদ্রের জলের নীচে অবস্থিত। সেখানে প্রবেশ করলে মনে হবে আপনি সাবমেরিনে বসে আছেন। বিশাল একুরিয়ামের পাশে সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে দেখতে খাওয়ার স্বাদ নিতে পারবেন। আপনার চারপাশে জলে সাঁতার কেটে বেড়াবে জলচর প্রাণী। হোটেল ভবনটিতে বেশ কিছু সুবিধা যোগ করা হয়েছে। যেমন দিনের বেলায় সূর্যের তীব্র আলোকরশ্মি কিছুটা হালকা ভাবে পরিবর্তিত হয়ে প্রবেশ করে। এ জন্য দিনের বেলায় কোন কৃত্রিম আলো এই হোটেলে জালানো হয় না। সম্পূর্ণ সূর্যের আলোতে আলোকিত থাকে। আর রাতের বেলায় এর ভেতরে বাহিরে জ্বলজ্বল করে রঙিন সব আলো।

সেই হোটেলের জানালা বাইরে থেকে পরিষ্কার করতে প্রয়োজন হয় একটি পুরো  টিম কে। যারা প্রায় 1 মাস কাজ করে ঝুলে ঝুলে।

এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলোর জন্য হোটেলটির নির্মাণ প্রক্রিয়া ছিল প্রকৌশল বিদ্যার জটিল এবং পরিশ্রমের কাজ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com