1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বিশ্বে প্রথম ক্লাইমেট ভিসা পেয়েছে যে দেশ
মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্বে প্রথম ক্লাইমেট ভিসা পেয়েছে যে দেশ

  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫

বিশ্বে বহু রকমের ভিসা সিস্টেম চালু আছে। তারই একটি হলো জলবায়ু ভিসা। ফিজি প্রথম এ ধরনের ভিসা-নীতি চালু করে ২০২৩ সালে। তবে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র টুভালু এই সুবিধা পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টুভালুর জনসংখ্যা সাড়ে ৯ হাজারের মতো। এই জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের আবেদন করেছে। তারা অপেক্ষা করছে এক বিশেষ ধরনের ভিসার। একে বলা হচ্ছে ক্লাইমেট ভিসা।

টুভালুর জাতীয় পতাকা। ছবি: উইকিপিডিয়া
টুভালুর জাতীয় পতাকা। ছবি: উইকিপিডিয়া

টুভালু এমনই একটি দেশ, যার জনসংখ্যা বছরে প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কমে গেছে। দেশটির ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। এই জনসংখ্যার অর্ধেকই তরুণ। এই দ্বীপরাষ্ট্র একসময় ছিল স্বপ্নের মতো শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই শতাব্দীর মধ্যে পুরো টুভালু সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যেতে পারে।

টুভালুর প্রধানমন্ত্রী ফেলেতি টেও জানিয়েছেন যে, দেশটির ভেতরে মানুষ স্থানান্তর সম্ভব নয়। কারণ এর ভূখণ্ড অত্যন্ত নিচু, রয়েছে বসবাসযোগ্য জমির অভাব। তাই আন্তর্জাতিক অভিবাসনই একমাত্র বিকল্প। সামনের দিনগুলোতে টুভালুতে বছরে ১০০ দিনের বেশি বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেশটিতে মানুষের টিকে থাকা বিপন্ন করে তুলবে। টুভালুর মানুষের জন্য প্রথম জলবায়ুভিত্তিক অভিবাসন ‘ক্লাইমেট ভিসা’ চালু করেছে অস্ট্রেলিয়া। এটি অস্ট্রেলিয়ান প্যাসিফিক ইমিগ্রেশন ভিসা নামেও পরিচিত। দেশটির ৪ হাজারের বেশি নাগরিক ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের জন্য বিশেষ ক্লাইমেট ভিসার আবেদন করেছে। মানবিক কারণে ভিসা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া প্রায় ২৪৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে টুভালুর উপকূল সংরক্ষণ প্রকল্পে। যা জলবায়ু হুমকির বিরুদ্ধে কিছুটা সময় কেনা যায়।

বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ডুবে যেতে পারে টুভালু। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে সর্বোচ্চ ৫ মিটার উচ্চতায় থাকা টুভালু বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। নাসার বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বীপটির বড় অংশ উচ্চ জোয়ারের সময় পানির নিচে চলে যাবে।

২০২১ সালে টুভালুর মন্ত্রী সাইমন কোফে রাজধানী ফুনাফুটিতে সমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেনশনের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনে বিবৃতি দিচ্ছেন। ছবি: ছবি: এএফপি
২০২১ সালে টুভালুর মন্ত্রী সাইমন কোফে রাজধানী ফুনাফুটিতে সমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো কনভেনশনের ২৬তম বার্ষিক সম্মেলনে বিবৃতি দিচ্ছেন। ছবি: ছবি: এএফপি

বিশ্বে প্রথম পরিবেশভিত্তিক গণপুনর্বাসন পরিকল্পনা করা হয়েছে টুভালুকে নিয়ে। যদি জলবায়ু বিষয়ে ভবিষ্যৎ অনুমান সত্যি হয়, তাহলে এটি হতে পারে অনেক দেশের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত। বেঁচে থাকার এই লড়াইয়ে ২০২৪ সালে টুভালু ও অস্ট্রেলিয়া একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তার আওতায় টুভালুর নাগরিকদের জন্য জলবায়ুজনিত অভিবাসন সহজ করা হয়। এমনকি যদি দেশটির ভূখণ্ড হারিয়ে যায়, তবু টুভালুর সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের চলতি মাস থেকে ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ২৮০টি করে স্থায়ী বসবাসের ভিসা দেবে টুভালু নাগরিকদের জন্য। নির্বাচিতরা পাবেন চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অধিকার।

বাসস্থানসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পেলেও টুভালুর নাগরিকেরা ভাবনায় পড়ে গেছেন নিজেদের জাতিগত পরিচয় ও সংস্কৃতি রক্ষা বিষয়ে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েও দেশটি তার সার্বভৌমত্ব ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে চায়। তাই ভূখণ্ড হারিয়ে ফেলার শঙ্কায় টুভালু ঘোষণা করেছে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা। যেখানে দেশের প্রশাসন, ইতিহাস ও সংস্কৃতি অনলাইনে সংরক্ষিত থাকবে। টুভালু বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হবে, যেটি পুরোপুরি অনলাইনে চলে যাবে অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিরোধ হিসেবে। ভূখণ্ড না থাকলেও যাতে রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব বজায় থাকে।

মালদ্বীপ, কিরিবাস ও মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের মতো দেশগুলোও একই ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়েই হয়তো অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে টুভালুর সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক সীমা স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশটির ভূখণ্ড পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়া এই স্বীকৃতি বজায় রাখবে। এটি আন্তর্জাতিক আইনে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত বটে।

অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডও দেশটির জন্য বিশেষ কোটায় ভিসার ব্যবস্থা করেছে। সেই ভিসার নাম প্যাসিফিক অ্যাকসেস ক্যাটাগরি  ভিসা। এর মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাবে বছরে ৭৫ জন।

জনগণের ধাপে ধাপে অভিবাসন সত্ত্বেও টুভালু তার অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারা উপকূল রক্ষা, জমি পুনর্গঠন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মতো অভিযোজন কৌশল নিচ্ছে। একদিকে তারা তাদের নাগরিকদের স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত করছে, অন্যদিকে সময়ের বিরুদ্ধে অসম এক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: ডেটা রিপোর্টাল, এমএসএন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com