ফোর্বস সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ ১০ দরিদ্রতম দেশের নাম প্রকাশ করেছে এবং ১০-এর মধ্যে কে কোন স্থানে রয়েছে, তার মূল্যায়ণও করেছে। এর মধ্যে আটটি দেশই আফ্রিকার। এই তালিকা করা হয়েছে দেশের মূলধন প্রতি জিডিপির ভিত্তিতে।
দারিদ্র্যের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির তালিকায় ১০ম স্থানে রয়েছে মাদাগাস্কার, যা একটি দ্বীপ দেশ এবং ভারতের সঙ্গে এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলি অর্থাৎ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, তাদের বিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং আর্থিক দুরবস্থা সত্ত্বেও এই তালিকায় নেই।
দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের ১০ দরিদ্রতম দেশের অবস্থান একে একে –
১) দক্ষিণ সুদান: ফোর্বসের মতে এই দেশ মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে সবচেয়ে দরিদ্র হওয়ার দাবিদার। পূর্ব আফ্রিকার এই দেশ ২০১১ সালে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র রূপে নিজের আত্মপ্রকাশ করে। এর ১১.১ মিলিয়ন (১.১ কোটি) জনসংখ্যার জন্য মোট জিডিপি $২৯.৯৯ বিলিয়ন।
২) বুরুন্ডি: পূর্ব আফ্রিকার একটি ক্ষুদ্র ভূমিবেষ্টিত দেশ বুরুন্ডি ১৩,৪৫৯,২৩৬ জনসংখ্যার জন্য মোট জিডিপি $২.১৫ বিলিয়ন সহ বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্র দেশ হিসাবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বুরুন্ডির দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এর বৃহৎ কৃষিনির্ভর জনসংখ্যাকে এর অর্থনৈতিক দুর্দশার নেপথ্যে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
৩) সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (CAR): মোট জিডিপি $৩.০৩ বিলিয়ন এবং জনসংখ্যা ৫,৮৪৯,৩৫৮। এটিকেই বিশ্বের তৃতীয় দরিদ্রতম দেশের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যদিও ছোট দেশটিতে সোনা, তেল, ইউরেনিয়াম এবং হিরের বেশ ভাল রিজার্ভ রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সশস্ত্র সংঘাতের মতো জটিল সমস্যাগুলিই প্রকৃতপক্ষে এটিকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এর ফলে এখানে ৮০ শতাংশ নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে।
৪) মালাউই: এই দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে জন্য পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত মালাউই ২১,৩৯০,৪৬৫ জনসংখ্যার জন্য $১০.৭৮ বিলিয়ন জিডিপি সহ বিশ্বব্যাপী চতুর্থ দরিদ্রতম স্থানে রয়েছে। আফ্রিকান দেশটি বৃষ্টি-নির্ভর কৃষির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, ফলে জলবায়ু পরিবর্তন এর পণ্যের দামের ওঠানামার সঙ্গে এর অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই নির্ভরশীলতাই এই দেশে দারিদ্র্যকে চালিত করার অন্যতম প্রধান কারণ।
৫) মোজাম্বিক: পূর্ব আফ্রিকার একটি কম জনবহুল দেশ। এ হেন মোজাম্বিক বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের তালিকায় ৫ম স্থানে রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, মোজাম্বিক বছরের পর বছর সন্ত্রাসবাদ এবং গ্যাংওয়ার দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ, দ্রুত জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, নিম্ন কৃষি উৎপাদনশীলতা এবং সম্পদের বৈষম্য দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে। মোজাম্বিক একটি প্রাক্তন পর্তুগিজ উপনিবেশ, এর জনসংখ্যা ৩৪,৪৯৭,৭৩৬ এবং জিডিপি $২৪.৫৫ বিলিয়ন।
৬) সোমালিয়া: আফ্রিকার সবচেয়ে খারাপ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশগুলির মধ্যে একটি। সোমালিয়া তার জলদস্যুদের জন্য কুখ্যাত এবং ১৯,০০৯,১৫১ জনসংখ্যার জন্য $১৩.৮৯ বিলিয়ন জিডিপি সহ বিশ্বের ষষ্ঠ দরিদ্রতম দেশের আখ্যা পেয়েছে। সোমালিয়া একটি ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে, যার ফলে এই দেশ এবং অর্থনীতির অকল্পনীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
৭) ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ দ্য কঙ্গো (ডিআরসি): সাব-সাহারান আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো বিশ্বের ৭ম দরিদ্রতম দেশ। এর মোট জিডিপি $৭৯.২৪ বিলিয়ন এবং জনসংখ্যা ১০৪,৩৫৪,৬১৫। কোবাল্ট এবং তামার মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, কঙ্গো একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে লড়াই করছে, যেখানে প্রায় ৬২ শতাংশ কঙ্গোলিজ প্রতিদিন ১৮০ টাকারও কম খরচে বেঁচে আছে, যা বৈশ্বিক জীবনযাত্রার মানের থেকে অনেক কম।
৮) লাইবেরিয়া: ৫,৪৯২,৪৮৬ জনসংখ্যার দ্বারা চালিত এই পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি বিশ্বের ৮ম দরিদ্রতম দেশ, যার মোট জিডিপি মাত্র $৫.০৫ বিলিয়ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, লাইবেরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য হিংসাত্মক সংঘাত থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ, পাশাপাশি ইবোলার মতো রোগের প্রাদুর্ভাবও।
৯) ইয়েমেন: ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেন বিশ্বের ৯ম দরিদ্র দেশ। যার জিডিপি $১৬.২২ বিলিয়ন এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩৪.৪ মিলিয়ন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে, যা তার অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছে। ইয়েমেনে এই গৃহযুদ্ধ দেশের অবকাঠামো বিপর্যস্ত করেছে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করেছে এবং খাদ্য, জল এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি সৃষ্টি করেছে। এই দেশের লাখ লাখ মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলির মানবিক সহায়তার উপর নির্ভর করতে হয়।
১০) মাদাগাস্কার: ভারত মহাসাগর অঞ্চলে অবস্থিত, ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র মাদাগাস্কার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ৩০.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার জন্য $১৮.১ বিলিয়ন জিডিপি সহ বিশ্বের ১০ম দরিদ্র দেশ এটি। মাদাগাস্কার একটি প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশ, যা ১৯৬০ সালে সার্বভৌম হয়ে ওঠে। এর অর্থনীতির বেশিরভাগই পর্যটন ও খনির উপর নির্ভরশীল।