বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় আরও এক ধাপ পিছিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, এশীয় দেশগুলোর দাপট বজায় রেখে তালিকায় শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে সিঙ্গাপুর। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত এ বছরের ‘হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স’-এ এই চিত্র উঠে এসেছে।
কোন দেশের পাসপোর্ট দিয়ে কতগুলো দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় প্রবেশ করা যায়, তার ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ১৯৯টি দেশের পাসপোর্টকে এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শীর্ষে এশিয়া
তালিকায় প্রথম স্থান ধরে রেখেছে সিঙ্গাপুর। এই দেশের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। আবেদনকারীদের জন্য সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পাওয়া অবশ্য বেশ কঠিন। এর জন্য অন্তত দুই বছর সে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস, অর্থনৈতিক অবদান ও পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের মতো শর্ত পূরণ করতে হয়।
দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে আছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। দেশ দুটির পাসপোর্টধারীরা ১৯০টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ পান।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপের ছয়টি দেশ—ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন। এই দেশগুলোর নাগরিকেরা ১৮৯টি দেশে ভিসা ছাড়া যেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পতন
২০১৪ সালে তালিকার শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবার দশম স্থানে নেমে এসেছে। গত ২০ বছরের ইতিহাসে এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থান। বর্তমানে মার্কিন পাসপোর্টধারীরা ১৮২টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ পান। র্যাঙ্কিংয়ে দশম স্থানে থাকলেও স্কোরের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে মোট ৩৩টি দেশ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি এর অন্যতম কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের একটি বিলে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের জন্য ২৫০ ডলারের একটি নতুন ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’ চালু করার কথা বলা হয়েছে, যা দেশটিতে ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে।
শীর্ষ দশে যেসব দেশ
১. সিঙ্গাপুর (১৯৩টি দেশ)
২. জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া (১৯০টি দেশ)
৩. ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, স্পেন (১৮৯টি দেশ)
৪. অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, সুইডেন (১৮৮টি দেশ)
৫. গ্রিস, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড (১৮৭টি দেশ)
৬. যুক্তরাজ্য (১৮৬টি দেশ)
৭. অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড (১৮৫টি দেশ)
৮. কানাডা, এস্তোনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (১৮৪টি দেশ)
৯. ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া (১৮৩টি দেশ)
১০. আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র (১৮২টি দেশ)
দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র
শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান তুলনামূলক ভালো বলা চলে। ৮০তম স্থানে থাকা ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা ৬০টির বেশি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ পান। অন্যদিকে, বাংলাদেশ রয়েছে ৯৬তম স্থানে। বাংলাদেশিরা প্রায় ৪১টি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারেন। নেপাল (৯৮তম) ও পাকিস্তান (১০১তম) র্যাঙ্কিংয়ে আছে। মূলত, শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভিসা চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা এই অঞ্চলের দেশগুলোর পাসপোর্টের দুর্বল অবস্থানের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
তালিকার একেবারে শেষে ৯৯তম স্থানে আছে আফগানিস্তান। দেশটির নাগরিকেরা মাত্র ২৫টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন। এর ঠিক ওপরেই রয়েছে সিরিয়া ও ইরাক। দেশ দুটির নাগরিকেরা যথাক্রমে ২৭টি ও ৩০টি দেশ ভিসা ছাড়া যাতায়াতের সুযোগ পান। অর্থাৎ, শক্তিশালী ও দুর্বল পাসপোর্টের মধ্যে ভিসা ছাড়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১৬৮টি দেশের।
যে দেশগুলো ভিসা মওকুফের জন্য আলোচনা চালায় এবং পারস্পরিক চুক্তি বজায় রাখে, তারা তালিকায় ওপরের দিকে উঠতে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এর একটি বড় উদাহরণ। দেশটি গত ১০ বছরে ৪২তম স্থান থেকে উঠে এসেছে অষ্টম স্থানে।
সূত্র: সিএনএন, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স