মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ন

বিশ্বজুড়ে যেভাবে হাজারও সন্তানের বাবা তিনি

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

নেদারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী জোনাথন জ্যাকব মেইজার একজন শুক্রাণু দাতা। বিশ্বজুড়ে তার দেওয়া শুত্রাণুর মাধ্যমে মা হয়েছেন হাজারও নারী। তবে জ্যাকব নিজেও জানেন না তিনি কত সন্তানের বাবা। ১৯৮১ বা ১৯৮২ সালে জন্ম নেয়া জ্যাকব ২০০৭ সাল থেকে শ্রক্রাণু দাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশে তার শুক্রাণু দেওয়া শুরু করেন।

তবে ঝামেলা বাধে তাকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্রের পর। জ্যাকবের শুক্রাণু ব্যবহার করে সন্তান ধারণ করা নারীদের নিয়ে তৈরি করা তথ্যচিত্রটি গত ৩ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।

জ্যাকব কত সন্তানের বাবা তা জানার পর ‘ধোঁকা, খারাপ এবং রাগ’ বোধ করেছেন বলে জানান তাদের মধ্যে একজন নারী। তবে জ্যাকব বিবিসিকে বলেন যে তথ্যচিত্রটি প্রতারণামূলক। কারণ এর মাধ্যমে যেসব পরিবার তার প্রতি কৃতজ্ঞ তাদের চেয়ে অসুখী মানুষগুলোকেই বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারে, জ্যাকব এটাও বলেছিলেন যে শত শত সন্তানের পিতা হওয়ার বিষয়টিকে তিনি ‘একদমই কোনো ভুল হিসেবে’ দেখেন না।

জ্যাকব দাবি করেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে [তথ্যচিত্রটির] নাম দ্য ম্যান উইথ ১০০০ কিডস রেখেছে। অথচ এর নাম হওয়া উচিৎ ছিল – যে শুক্রাণুদাতা পরিবারগুলোকে ৫৫০টি সন্তানের গর্ভধারণে সাহায্য করেছেন। তার মানে শুরু থেকেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারিত এবং বিভ্রান্ত করছে।

জ্যাকব বলেন, তিনি আড়াইশো পরিবারকে ‘শুক্রাণু দিয়ে সাহায্য’ করলেও নেটফ্লিক্স পাঁচটি অসন্তুষ্ট পরিবারকে বেছে নিয়েছে। এই পাঁচটি পরিবারের বাইরে অন্যান্য পরিবারগুলোর বক্তব্য নিশ্চয়ই ভিন্ন রকমের হবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে তথ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক নাটালি হিল বলেন, বেশিরভাগ পরিবারের খুশি থাকার দাবিটি ‘সম্পূর্ণ অসত্য’। আমি গত চার বছর ধরে জোনাথনের মিথ্যার কারণে প্রভাবিত হওয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ৪৫ বা ৫০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তার মিথ্যার বিষয়ে ৫০টি পরিবার আদালতে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছে এবং বিচারকের কাছে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি থামেন। তাই জোনাথনের গুটিকয়েকের সঙ্গে আলাপ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য।

জ্যাকব ১৭ বছর ধরে শুক্রাণু দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শুক্রাণু দিয়েছেন। অর্থাৎ কোনো ক্লিনিকের মাধ্যমে না দিয়ে সরাসরি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। জ্যাকবকে তাদের শুক্রাণুদাতা হিসেবে বেছে নেয়া কয়েকজন নারী বলেন যে তিনি কত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সে বিষয়ে তাদের কাছে স্পষ্ট করেননি জ্যাকব।

সাড়ে পাঁচশো সন্তানের জন্ম দেয়ার সংখ্যাটিকে তিনি অনেক বেশি মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জ্যাকব বলেন, “একজন সাধারণ মানুষের জন্য [বেশি], তবে একজন শুক্রাণু দাতার জন্য না। একজন শুক্রাণু দাতার জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক। তারা শত শত শিশুর মধ্যে যায়। তারা [ক্লিনিকগুলো] দাতার শুক্রাণু বিভিন্ন দেশে পাঠাবে”।

ভবিষ্যতে নিজেরই অজান্তে আপন ভাইবোনের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন নারী।

নাটালি নামের ওই মা বলেন, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল যে এই শিশুদের একে অন্যের সঙ্গে দেখা হবে এবং তারা প্রেমে পড়বে। কারণ তারা যে একই বাবার সন্তান সে বিষয়ে অজ্ঞাত থেকেই পরস্পরের মধ্যে কিছু একটা খুঁজে পাবে। এটাকেই আমি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখি। কারণ নিজেকে উন্মুক্ত এবং পরিচিত দাতা হিসেবে দাবি করলেও তিনি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ক্লিনিককে শুক্রাণু দান করেছেন। আর সব ক্লিনিক শিশুদের জন্য উন্মুক্ত এবং সৎ থাকার বিষয়টি মেনে চলে না।

তবে এক্ষেত্রে জ্যাকব বলেন, “আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারি যে এখন সস্তায় ডিএনএ পরীক্ষার সুযোগ আছে আর আমি ডিএনএ ডাটাবেসে আছি যাতে তারা জানতে পারে। এছাড়াও বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের জানাবে যে তারা একজন দাতার শুক্রাণু থেকে জন্ম নিয়েছে। সুতরাং তারা সবাই যেহেতু আমার যেহেতু পরিচয় জানে আর এমন যদি হয়েও থাকে তবে তারা একে অপরের সাথে দেখা করে জিজ্ঞেসা করতে পারে, ‘তুমি কি ডোনার চাইল্ড (শুক্রাণু থেকে জন্ম নেয়া সন্তান)?’ আর দ্বিতীয়ত, তোমার ডোনার বাবা (দাতা পিতা) কি জোনাথন?’

দেশব্যাপী ১১টি ক্লিনিকে দান করা শুক্রাণু থেকে জন্ম নেয়া ১০২টি সন্তানের বাবা মায়ার- এমন খবর আসার পর ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডে তার শুক্রাণু দান করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত অন্যান্য দেশে শুক্রাণু দান অব্যাহত রাখেন তিনি। পরে একজন নারী এবং তাকে সমর্থন দেয়া একটি ফাউন্ডেশন জ্যাকবের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন।

জ্যাকব তার সাক্ষ্যে, পাঁচশো থেকে ছয়শ সন্তান থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে আদালত জানান যে তিনি বিভিন্ন মহাদেশে এক হাজার পর্যন্ত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বিচারক জ্যাকবকে নতুন কোনো বাবা-মাকে শুক্রাণু দানে নিষেধ করেন এবং তা করলে তাকে প্রতিবার দানের জন্য এক লাখ ইউরো (৮৫ হাজার পাউন্ড) করে জরিমানা করা হবে বলে জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com