পর্যটনকে কেন্দ্র করে অল্প সময়ে গড়ে ওঠা এই শহরের বাসিন্দাদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন কোটিপতি। আরাম আয়েশে বসবাস করতে এবং টাকা উড়াতে দুবাইয়ের আমিরাতিদের জুড়ি মেলা ভার। এ শহরের রাস্তায় হর হামেশাই চোখে পড়ে রোলস্ রয়েস, অ্যাস্টন মার্টিন, ল্যাম্বারগিনির মতন দামী ও বিলাসবহুল গাড়ি, এমনকি দুবাই পুলিশেরও আছে এসব গাড়ীর বহর। ১০ থেকে ১০০ কোটি টাকা দামের এই গাড়িগুলোর অন্যতম বড় বাজার দুবাই।
কোটি টাকার এই গাড়ীগুলোতে সওয়ারী হিসেবে কখনো কখনো দেখা পাওয়া যায় বাঘ সিংহেরও। আমরা যেমন শখের বশে কুকুর বিড়াল পুষে থাকি, তেমনি দুবাইয়ের ধনীরা পুষে থাকেন বাঘ সিংহ কিম্বা শিম্পাঞ্জির মতন ভয়ঙ্কর প্রাণী।
দুবাই একটি মুসলিম দেশের অংশ হলেও পর্যটকদের অকৃষ্ট করতে, তাদের জন্য এখানে মদ্যপান বৈধ। এমনকি খোলামেলা পোষাক পরা নারীদেরও চোখে পড়বে দুবাইয়ের সমুদ্র সৈকতে।
উবারের মাধ্যমে বিশ্বাবাসী শুধুমাত্র ট্যাক্সি কিম্বা মোটরবাইক সেবা পেলেও দুবাইবাসী উবারের মাধ্যমে নিয়ে থাকে হেলিকপ্টার সেবাও। দুবাইয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার খুবই সাধারন ঘটনা। এমকি বর্তমানে দুবাইয়ে চালু হয়েছে বানিজ্যিক ভাবে পরিচালিত বিশ্বের সর্ব প্রথম চালকবিহীন হেলিকপ্টার ড্রোন ট্যাক্সি সার্ভিস।
দুবাই বিমান বন্দর পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বিমানবন্দর। দুবাইয়ের মোট আয়ের ১৫ শতাংই আসে এই বিমানবন্দর থেকে। বিশ্বের বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স দুবাই বিমান বন্দরকে ট্রানজিট হাব হিসাবে ব্যবহার করে। প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০ হাজার বিমান ওঠা-নামা করে। আর প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেন যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।
চকচকে আকাশচুম্বী অট্টালিকার এই শহর নির্মাণের সাথে মিশে আছে অনেক বাংলাদেশী শ্রমিকের রক্ত-ঘাম। এখান থেকেই আয় হয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে বাংলাদেশ।
পৃথিবীর অনেক বড় শহরের মতন জলপথকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে দুবাই। পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত এ শহরকে পৃথক করেছে দুবাই খাল। এই খালের এক পাশে দেরা দুবাই আরেক পাশে বার দুবাই অবস্থিত। দেরা দুবাই অত্যাধুনিক আকাশচুম্বি অট্টালিকার শহর আর বার দুবাই ধারণ করে আছে দুবাইয়ের প্রাচিন ঐতিহ্য।
দুবাইয়ের প্রকৃত আধিবাসীদের বাস এই বার দুবাইয়ে। দেরা দুবাইয়ে অত্যাধুনিক শপিং মল, নামি দামি হোটেল, প্রশস্থ ঝকঝকে রাস্থা থাকলেও বার দুবাইয়ের চিত্র একদমই আলাদা। বিলাসিতার ছিঁটেফোঁটা না থাকলেও আদি ও অকৃত্রিম দুবাইয়ের দেখা মিলবে এখানেই। তাই প্রকৃত দুবাইকে দেখতে হলে যেতে হবে বার দুবাইয়ে।