1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বিরিয়ানির দোকান থেকে গ্রুপ অব কোম্পানিজ, অতঃপর
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৯:৫০ অপরাহ্ন

বিরিয়ানির দোকান থেকে গ্রুপ অব কোম্পানিজ, অতঃপর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫

যশোরের শার্শা উপজেলার শুড়া গ্রামের মো. খলিলুর রহমান ২০০৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নিজের সঞ্চিত সামান্য কিছু ডলার পকেটে নিয়ে নিউইয়র্ক এসেছিলেন। থাকার জন্য উঠেছিলেন দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায়। মাত্র ১৫ বছর পর নিজের নামে গড়ে তোলেন খলিল বিরিয়ানি হাউজ। বিরিয়ানির দোকান থেকে গড়ে তোলেন গ্রুপ অব কোম্পানিজ। বিশাল স্বপ্ন বুনেছিলেন আমেরিকার বুকে বাংলাদেশি খাবারকে পরিচিত করবেন। অথচ দুষ্টু লোকের খপ্পড়ে পড়ে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশি এই প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের পথে।

খলিল বিরিয়ানির যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। মাত্র ৮ বছরে তিনি একটি থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পুরস্কার। তাঁর জীবনের গল্প ও উত্থান রূপকথার মতোই ছিল। দুষ্টুচক্রের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হলেও আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিভোর এই খলিলুর রহমান।

খলিলুর রহমানের একমাত্র মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান এখন ব্রঙ্কসের খলিল বিরিয়ানি হাউজ। এক ছাদের নিচে তিনি গড়ে তুলেছেন ফুড কোর্ট। সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। খলিল বিরিয়ানি হাউস নামে আরো প্রতিষ্ঠান থাকলেও এসবের সঙ্গে আর সম্পৃক্ত নন তিনি।

খলিল বিরিয়ানি হাউজকে আজকের এ পর্যায়ে আনার পেছনের মিডিয়ার যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি কিছু নাম সর্বস্ব মিডিয়া তাকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেছিল। আবার সাংবাদিক নামধারী কিছু টাউট-বাটপার নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন সময় তাকে কুপরামর্শ দিয়েছে। তাদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে একের পর এক হোচট খেয়েছেন খলিলুর রহমান। এক সময় নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়েছেন।

খলিলুর রহমানের বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন সাংবাদিক ও লেখক হাবিব রহমান। তার হাত ধরেই ব্যাপক প্রসার ঘটেছে খলিল বিরিয়ানির। নেপথ্যে অনেক কাজ করেছেন হাবিব রহমান। কিন্তু একটা সময় খলিলুর রহমানকে ভুল পথে পরিচালিত করতে সফল হন কতিপয় নামধারী দুষ্টু লোক। কেউ ডিজিটাল প্রচারের নামে তার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। কেউ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন পরামর্শক হিসাবে। কিছু অনলাইন ও অনিয়মিত পত্রিকা অনুমতি ছাড়াই বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে জোর করে বিল আদায় করে নিয়েছেন। আবার একটা সময় কিছু সাংবাদিক খলিলের পরামর্শকও হয়েছিলেন। তাদের চাতুরতার ফাঁদে পড়ে প্রায় সর্বস্ব খুইয়েছেন তিনি। কেউ এসেছেন, আবার চলেও গেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে এখনো আছেন তার পরীক্ষিত বন্ধু হাবিব রহমান।
দুষ্টুলোকের পরামর্শ ও নিজের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা স্বীকার করে খলিলুর রহমান ঠিকানাকে জানান, আমি আশাবাদী মানুষ। কিছু মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম। সিদ্ধান্ত নিতেও ভুল করেছিলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে আগাছা কেটে ফেলতে হয়। তেমনি আমিও আগাছা কেটে ফেলার কাজ করছি। আশাকরি ভালোভাবে আবার শুরু করতে পারবো।

খলিল বিরিয়ানি থেকে একের পর এক শাখা খোলা, এরপর অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করতে নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন খলিলুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বোকামি করেছি। এগুলো এখন ফিক্সড করবো। যদিও একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, আমার পার্টনারশিপে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। বুঝে না বুঝে ভুল করেছি। তবে ভুল থেকে শিখেছি। ইনশাল্লাহ আগের অবস্থান ফিরে পাব। আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে পিছপা হবো না।

খলিলুর রহমান জানান, আমি এখন কুলিনারি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। পাশাপাশি মশলা নিয়ে কাজ করছি। ফ্রাঞ্জচাইজ নিয়েও অনেক দূর এগিয়েছি। আশাকরি শিগগির ভালো কিছু ফল পাব।

খলিলুর রহমানের পরীক্ষিত বন্ধু সাংবাদিক হাবিব রহমান বলেন, খলিল ভাই তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি সরলসোজা একজন মানুষ। আর এর সুযোগ নিয়েছেন কিছু লোক। তবে খলিল ভাই একজন কর্মঠ মানুষ। তিনি একজন ভালো মানের শেফ। অতএব, তিনি চেষ্টা করলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। আমার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।

২০১৭ সালে ২১ জুলাই ব্রঙ্কসের স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকায় ১৪৪৫ ওলমাস্টেড অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ ইন্ডিয়ান, আমেরিকান, চায়নিজ খাবারের সমন্বয়ে যাত্রা শুরু করে খলিল বিরিয়ানি হাউস। ভোক্তাদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রত্যাশা পূরণে খলিল বিরিয়ানি হাউস প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় শাখা খোলে। নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠান করেন একই এলাকায়, ‘খলিল হালাল চায়নিজ’ নামে। পরের বছর গড়ে তুললেন খলিল সুইটস অ্যান্ড বেকারি।

২০২০ সালে বাইডেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, তখন ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক হিসেবে খলিল চালু করলেন ‘বাইডেন বিরিয়ানি’। নামের কারণে মানুষের মধ্যে তৈরি হলো অতিরিক্ত কৌতূহল। বিক্রিও দেদার। এ বিরিয়ানিতে মসলার বাহুল্য ছিল না। নানান দেশের মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পান। রেস্টুরেন্টে আসেন কংগ্রেস সদস্যসহ মূলধারার অনেক রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ থেকে আসা কবি-সাহিত্যিক ও তারকারা।

২০২১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এক হাজার বর্গফুটের খলিল সুপারমার্কেট। পরের বছর খলিল বিরিয়ানির আরেকটি শাখা করলেন জ্যামাইকায়। পরের বছর খলিল ফুড কোর্ট। সেখানে হরেক রকম খাবার পাওয়া যায়। অনেক রেসিপি আছে তাঁর নিজের। জ্যামাইকার পর শাখা খুললেন জ্যাকসন হাইটসে। ছয়টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে শতাধিক মানুষ কাজ করতেন। শুধু নিজের ব্যবসা নয়, রন্ধনশিল্পে উৎসাহ দিতে বিনামূল্যে মানুষকে শিখিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত। কমিউনিটি সেবায় অবদানের জন্য ২০২২ সালে খলিলুর রহমান পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। পেয়েছেন আরও স্বীকৃতি।

সব প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটা সময় গড়ে তুললেন খলিল ফুডস। এরপর খলিল গ্রুপ হলো। গত ২৪ মে তিনি  নিউইয়র্কে আয়োজন করলেন আমেরিকান কারি অ্যাওয়ার্ডসের। মানুষ তখন তাকে আবিস্কার করলো খলিল গ্রুপ অব কোম্পানিজ নামে। কিন্তু এরপরই তিনি বড় ধাক্কা খেলেন। বিপদে কাউকে পাশে পেলেন না। শুধু পাশে রয়ে গেছেন পরিবারের সদস্য, বন্ধু হাবিব রহমান এবং কিছু শুভাকাক্সক্ষী।

খলিলুর রহমান এখনো স্বপ্ন দেখেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের খাবারের মতো বাংলাদেশি খাবারও জনপ্রিয় হয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী। সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি হাল ছাড়েননি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com