বিমান ভ্রমণ যতই আকর্ষণীয় শোনাক না কেন, অনেক সময় যাত্রাপথটা গন্তব্যের চেয়েও বেশি ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। তবে তাই বলে ভদ্রতা ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। বরং আকাশযাত্রায় আরও বেশি শিষ্টাচার বজায় রাখা প্রয়োজন।
অভিজ্ঞ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিমানে ভ্রমণের সময় যে ৮টি কাজ কোনোভাবেই করা উচিত নয়—
১. ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে স্পর্শ করবেন না
অভিজ্ঞ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট আইডেন বলেন, “আমাদের স্পর্শ করবেন না, যেকোনো পরিস্থিতিতেই। আমরা কেবিনে খাবার পরিবেশন, পানীয় প্রস্তুত বা আবর্জনা সংগ্রহ—যা-ই করি না কেন, আপনার কথা শুনতে পাই। শুধু ডাকলেই আমরা সাড়া দেব।” মনে রাখবেন, অপরিচিত কাউকে স্পর্শ করা সাধারণত শোভন নয়।
২. বোর্ডিংয়ের পরপরই টয়লেট ব্যবহারের অনুরোধ করবেন না
বিমানে উঠেই যদি টয়লেটে যান, তা পুরো বোর্ডিং প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে পারে। আইডেন বলেন, “টার্মিনালে থাকাকালীনই ব্যবহার করতে পারতেন। বোর্ডিংয়ের সময় আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে—ওভারহেড লাগেজ স্পেস মনিটর করা, জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়ক যাত্রী চিহ্নিত করা এবং ফ্লাইট ডেক ও গ্রাউন্ড টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।”
৩. হাত-পা বা পা-এর পাতাকে আইলে ছড়িয়ে রাখবেন না
সিটে বসে স্ট্রেচ করা জরুরি হলেও হাত-পা আইলে ছড়িয়ে রাখা বিপজ্জনক ও বিরক্তিকর। সার্ভিসের সময় বা কেবিন মনিটরিংয়ের সময় ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের জন্য এটি বড় অসুবিধা।
৪. ল্যান্ডিংয়ের পর দৌড়ে সামনে চলে যাবেন না
বিমান গেটে পৌঁছানোর পরপরই সবার আগে নেমে যাওয়ার চেষ্টা অন্য যাত্রীদের প্রতি অসম্মানজনক। আইডেন বলেন, “সবারই তাড়া থাকে, কিন্তু ধৈর্য ধরুন, আপনার পালা এলেই নামবেন।”
৫. ক্রুর নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না
ফ্লাইট ক্রুর নির্দেশ অমান্য করা বা প্রশ্ন তোলা বড় ভুল। আইডেন জানান, “আমরা পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের কঠোর প্রশিক্ষণ নেই। দরজা খোলা, সিপিআর, শিশুজন্মে সহায়তা, আগুন নেভানো—সব কিছু শেখানো হয়। আমরা শুধু পানীয় পরিবেশন করি না”
৬. অন্য যাত্রীর আর্মরেস্টে পা তুলবেন না
এয়ার ট্রাভেল বিশেষজ্ঞ জেনি ড্রাইজেন বলেন, “সামনের আর্মরেস্টের পেছন থেকে কারও পায়ের আঙুল দেখা ভয়াবহ দৃশ্য। বিমানের অস্বস্তি সবার জন্যই সমান, তবে অন্যের জায়গা দখল করা যাবে না।”
৭. খালি পায়ে থাকবেন না
বিমান ফ্লোর খুবই নোংরা এবং জীবাণুযুক্ত হতে পারে। ড্রাইজেন বলেন, “আমরা আপনার পা দেখতে চাই না এবং আপনারও সংক্রমণের ঝুঁকি নিতে হবে না। জুতা ও মোজা পরে থাকুন।”
৮. রিক্লাইন করার সময় খেয়াল রাখুন
সিট রিক্লাইন করা স্বাভাবিক। তবে ধীরে করুন এবং পেছনে কারও খাবার বা ল্যাপটপ আছে কিনা দেখে নিন। সম্ভব হলে আগে জানিয়ে দিন।
বিমান ভ্রমণকে সবার জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে এই ৮টি নিয়ম মেনে চলুন। আপনার ভদ্রতা শুধু অন্যদের নয়, আপনার নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকেও আরও সুখকর করে তুলবে।