শাহজালালের নবনির্মিত থার্ড টার্মিনাল বাংলাদেশের আকাশপথে নবদিগন্তের সূচনা করেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন রুটে বিমান পরিচালনা করতে চায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গত ৩ ডিসেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে শুরু হয়েছে আইকাও এয়ারসার্ভিস নেভিগেশন ইভেন্ট-আইকান ২০২৩। পাঁচ দিনের এই ইভেন্টে বাংলাদেশসহ ৭৬টি দেশ অংশ নিচ্ছে।
এই ইভেন্টে ১০টি দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট (চুক্তি) এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করার টার্গেট নিয়েছে বেবিচক। ইতোমধ্যে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মুফিদুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল এই ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন।
বেবিচক সূত্র বলছে, থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং করার আগেই বেশ কয়েকটি দেশ বিমান পরিচালনা করার আবেদন জানিয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এছাড়া রিয়াদে চলমান ইভেন্টে ১০টি দেশের সঙ্গে এয়ার এগ্রিমেন্ট করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
ইভেন্টে সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন (গাকা) এবং বেবিচকের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একই সময়ে একই স্থানে অনেক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ডকুমেন্ট স্বাক্ষরের সুযোগ হবে।
এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। ইতোমধ্যে বাহরাইন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর সংক্রান্ত আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কূটনৈতিক মাধ্যমে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সিসিলিসসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পর্যালোচনা সভায় অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে।
এ ছাড়া রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সাইডলাইন সভায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই ও রুয়ান্ডার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কোনো ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারিত হয়নি। এসব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ তৈরি করতে ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণের জন্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রয়োজন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, কুয়েত, মিসরের সঙ্গে বিদ্যমান ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করা এবং চীনের সঙ্গে টপ (ঞঙচ) এর ভিত্তিতে বর্ধিত ফ্রিকোয়েন্সিগুলো নিয়মিতকরণ করা প্রয়োজন।
ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণ করায় এসব দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো নিষ্পন্ন করা সহজতর হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রয়োজনীয় অনেক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি পর্যালোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনালটিকে পুরোপুরিভাবে অপারেশনাল করা হলে অধিক সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ তৈরি করতেও বিদ্যমান ফ্রিকোয়েন্সিগুলো হালনাগাদ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, যে কোনো দেশের জন্য আইকাও এয়ার সার্ভিস নেভিগেশন ইভেন্ট-আইকান ২০২৩ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই ইভেন্টে অংশ নিয়েছি। আমাদের থার্ড টার্মিনাল হয়ে গেছে। এখন আমরা নতুন নতুন রুটে ফ্লাইট পরিচলনা করতে পারব। এই ইভেন্টে অনেক দেশ অংশ নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন নতুন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা, ফ্লাইট বৃদ্ধি ও নতুন দেশের সঙ্গে এয়ার এগ্রিমেন্ট চুক্তি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বেবিচক বোর্ড সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন) এয়ার কমোডর শাহ কাওছার আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এয়ার ট্রান্সমিশন) একেএম ফায়জুল হক, বিশেষ পরিদর্শক (কমার্শিয়াল এয়ার ট্রান্সপোর্ট) এসএম গোলাম রাব্বানী, এভিয়েশন অ্যাটর্নি ফারজানা নুসরাত, মন্ত্রণালয়-বিমান-ইউএসবাংলা এবং নভোএয়ারের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।