বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৬ অপরাহ্ন
Uncategorized

বিমানবন্দরে রেন্ট-এ কারের সিন্ডিকেটে অসহায় যাত্রী

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২

প্রবেশদ্বার হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বেশ কিছু অসঙ্গতি বরাবরই দেশের ভাবমূতির জন্য প্রশ্নবিদ্ধ।

বিমানবন্দরটি যেসব কারণে দেশের নেতিবচাক ভাবমূর্তির জন্ম দিচ্ছে, তার অন্যতম হচ্ছে বিমান ভ্রমণ পরবর্তী যাতায়াতের জন্য লক্কড়ঝক্কড় মার্কা কার ও মাইক্রোবাস এবং যাত্রীদের সঙ্গে অপেশাদার আচারণ। ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়, দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি যাত্রীদের মালামাল লুটপাটেরও অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়ম দূর করতে অবশেষে তৎপর হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ১৮ দফা কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করতে ১৩ বছরের পুরনো গাড়ি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরে যাত্রীদের পরিবহনে ইজারা নেওয়া যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান রেন্ট-এ কার সার্ভিস দিয়ে থাকে, তাদের বেশির ভাগই চলছে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি দিয়ে। ফলে বিমানবন্দর চত্বরে ঢুকেই ভাঙাচুরা এসব গাড়ি দেখে বাংলাদেশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা যাচ্ছে বিদেশিদের কাছে। তা ছাড়া যাত্রী ভোগান্তিতেও চরমভাবে বিঘিত হচ্ছে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে রেন্ট এ কারের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে ১৮টি কঠোর নির্দেশনা জারি করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের একটি সংবেদনশীল স্থাপনা।

এ বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত দেশ ও বিদেশের যাত্রীরা আগমন ও বহির্গমন করে। যাত্রীদের ভ্রমণপরবর্তী যাতায়াতসেবা প্রদানের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অনুমোদিত ছয়টি রেন্ট-এ কার সার্ভিস রয়েছে।

সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে রেন্ট-এ কার প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দেশনা ঠিকমতো পালন করে না এবং চুক্তি অনুযায়ী সেবা প্রদান করার ব্যাপারে উদাসীন। এতে বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুন হচ্ছে। এ অবস্থায় রেন্ট-এ কার সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও বিমান ভ্রমণপরবর্তী যাতায়াতকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করার লক্ষ্যে জরুরি নির্দেশ জারি করা হলো।

১৮ নির্দেশনা : নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১০ বছরের বেশি পুরনো রেজিস্ট্রেশনকৃত এবং ১৩ বছরের পুরনো যানবাহন রাখা যাবে না। গাড়ির ক্যাপাসিটি সর্বনিম্ন ১৩০০ সিসি হতে হবে। প্রতিটি কোম্পানির পক্ষে একজন কাউন্টারে এবং তিনজন ক্যানপিতে দায়িত্ব পালন করবে।

কোম্পানিগুলোকে কম্পিউটারের মাধ্যমে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ফ্লাইট নম্বর, গন্তব্যস্থল, গাড়ির নম্বর, চালকের নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে হবে এবং এর এক কপি যাত্রীকে দিতে হবে। তালিকাভুক্তি ছাড়া কোনো যানবাহন বিমানবন্দর থেকে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।

প্রত্যেকটি কোম্পানিকে বেবিচক কর্তৃক অনুমোদিত ভাড়ার তালিকা কাউন্টারের সামনে প্রদর্শন করতে হবে। প্রত্যেকটি কোম্পাননির গাড়ির ভেতরেও বেবিচক কর্তৃক অনুমোদিত ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান রাখতে হবে। চালকদের বেবিচক কর্তৃক অনুমোদিত পোশাক পরিধান করতে হবে। চালকদের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক প্রদানকৃত পরিচয়পত্র বহন করতে হবে এবং পরিচয়পত্রটি বুকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে দৃশ্যমান থাকে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, প্রতিটি গাড়িতে বেবিচক কর্তৃক অনুমোদিত স্টিকার থাকতে হবে এবং স্টিকার প্রতি বছরই হালনাগাদ করতে হবে। যদি স্টিকার পেতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে স্টিকারের জন্য এপিবিএনে করা আবেদনপত্র গাড়ির সঙ্গে রাখতে হবে।

প্রত্যেকটি গাড়িতে কোম্পানির নিজস্ব স্টিকারও (ছোট ও বড়) থাকতে হবে। স্টিকার গাড়ির সামনে ও বাম পাশে দৃশ্যমান রাখতে হবে। বেবিচক কর্তৃক অনুমোদিত ভাড়ার ছাপানোর রশিদ ছাড়া অন্য কোনো রশিদ ব্যবহার করা যাবে না। প্রতি গাড়িতে একটি অভিযোগ রেজিস্টার এবং লগবুক থাকতে হবে। যাত্রী গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর অভিযোগ রেজিস্টার এবং লগবুকে যাত্রীর স্বাক্ষর নিতে হবে; যা যানবাহন চেকের সময় নিরাপত্তা শাখাকে দেখাতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ক্যানোপিতে গাড়ি প্রবেশ করার পর সর্বোচ্চ তিন মিনিট অবস্থান করতে পারবে। এ সময়ের মধ্যে কোনো কারণে যাত্রী উঠানো সম্ভব না হলে ক্যানোপি ছাড়তে হবে। যাত্রীর সঙ্গে সর্বদা বিনম্র ও সদাচরণ করতে হবে। কোম্পানির প্রত্যেক চালককে মার্জিত পোশাক পরিধান ও নেম ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে; যাত্রীদের কোনো বিষয়ে অভিযোগ করার জন্য প্রত্যেকটি গাড়িতে কোম্পাািনর নিজস্ব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নম্বর দৃশ্যমান রাখতে হবে। ক্যানোপি এলাকায় দিনের বেলায় কম সংখ্যক বহিরাগত গাড়ি দেখা গেলেও রাতে এ সংখ্যা বহুল অংশে বৃদ্ধি পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে আকস্মিক টহল প্রদান করতে হবে। এসব নির্দেশ যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হলে বিমানবন্দরে রেন্ট-এ কার সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হবে।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, যেহেতু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একটি দেশের প্রবেশ তোরণ হিসেবে বিবেচিত, তাই সার্বিক কার্যক্রম ও সেবা দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রেন্ট-এ কার প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজে সার্ভিসসহ আরও কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। এসব অঙ্গতি দূর করতে তারা জোর দিচ্ছেন। কর্মকর্তারা মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে এসব সংস্কার করা না হলে আধুনিকতার দৌড়ে আমরা পিছিয়ে পড়ব।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, বিমানবন্দরে ইজারাকৃত রেন্ট-এ কার প্রতিষ্ঠানগুলোতে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলতে পারবে না। এটা কঠোরভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি এবং বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান এসব নির্দেশনা না মানলে ইজারা বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com