শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বিনিয়োগের বদলে নাগরিকত্ব: বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে যেতে আগ্রহ বেশি?

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

 

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অভিবাসন প্রতিষ্ঠান হেনলি এন্ড পার্টনারস জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের মধ্যে ‘বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্বের’ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

আগে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে এই ব্যাপারে বেশি আগ্রহ দেখানো হলেও এখন উন্নত দেশগুলোর বাসিন্দারাও নতুন দেশে অভিবাসনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

অভিবাসনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী দেশের তালিকায় গত বছর ছিল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়া। তবে ২০২০ সালে সেই তালিকার শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রও। এখন যেসব দেশের মানুষ অভিবাসনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি খোঁজখবর করেছে, সেগুলো হলো, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

হেনলি এন্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্বের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা, যদিও এর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, অনেকেই এমন দেশ খুঁজছেন, যেখানে তিনি এবং তার পরিবার নিরাপদে থাকবেন। অনেকেই এমন দেশ খুঁজছেন যেখানে থেকে তারা তাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবেন।

তৃতীয় কোন দেশ হয়ে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অর্থ পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
তৃতীয় কোন দেশ হয়ে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অর্থ পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ

বিনিয়োগের বদলে কোন দেশে কী ভিসা পাওয়া যায়?

বর্তমানে ইউরোপের দেশ মাল্টা, সাইপ্রাস, মন্টিনেগ্রো, মলদোভা, লাটভিয়া, গ্রিস, পর্তুগাল, লিথুনিয়ার মতো দেশে বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব প্রদান করছে। ক্যারিবিয়ান দেশ অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারমুডা, গ্রানাডা, সেন্ট লুসিয়াতেও এই সুবিধা পাওয়া যায়।

এছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপিয়ানের অনেকগুলো বিনিয়োগের বিনিময়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়। পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্বের সুযোগ রয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে পাঁচ কোটি টাকা থেকে শুরু করে ১৫ কোটি পর্যন্ত টাকা খরচ হয়।

অনেক বাংলাদেশি কানাডায় বাড়ি কিনেছেন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
অনেক বাংলাদেশি কানাডায় বাড়ি কিনেছেন।
বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে যেতে আগ্রহ বেশি?

বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগকারী ভিসায় যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শক হিসাবে কাজ করে। কিন্তু টেলিফোনে এই ব্যাপারে তাদের কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকার একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”বাংলাদেশ থেকে কানাডা, যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার দিকেও অনেকের আগ্রহ রয়েছে তবে এখন মাল্টা, সাইপ্রাস, লাটভিয়ার মতো ইউরোপের দেশগুলোয় সরাসরি নাগরিকত্ব নিয়ে চলে যাওয়ার একটা প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।”

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের বদলে নাগরিকত্ব, স্থায়ী বসবাসের সুবিধা নিয়েছেন।

তবে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ততোটা বেশি অভিবাসনের আবেদন জমা পড়েনি বলে তিনি জানান। তবে নভেম্বর মাস থেকে আবার অনেকে অভিবাসনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে।

অর্থ পাচার বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা
ছবির ক্যাপশান,অর্থ পাচার বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা

বাংলাদেশ থেকে কীভাবে বিনিয়োগের এতো টাকা পাঠানো হয়?

দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি বলেছে, বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৫০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে। তবে বিষয়টিতে লাগাতার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে কোনও লাভ হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এর আগে চলতি বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অর্থপাচার বিরোধী সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) জানিয়েছিলো যে গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ নানা কৌশলে তারা বিদেশে পাচার করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার কয়েক ভাবে হয়ে থাকে। এর একটি বড় উপায় হচ্ছে বাণিজ্য কারসাজি। আরেকটি উপায় হচ্ছে হুন্ডি।

বাণিজ্য কারসাজির মাধ্যমে যখন কোন পণ্য আমদানি করা হয়,তখন কম দামের পণ্যকে বেশি দাম দেখানো হয়, ফলে অতিরিক্ত অর্থ দেশের বাইরে থেকে যায়।

একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশি দামের পণ্যকে কম দাম দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দেশে আনা হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা এর আগে বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এগুলো ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং হিসেবে পরিচিত।

“টাকা পাচারের পুরো বিষয়টা যেহেতু অবৈধ পন্থায় হয়ে থাকে সেজন্য এর সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া মুশকিল। খুব প্রচলিত হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো। আমদানির ক্ষেত্রে যেটা করা হয়, কোন একটি পণ্যের দাম যত হবার কথা তার চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে টাকা পাচার করে দেয়া হয়,” বলেন অধ্যাপক বিদিশা।

অর্থ পাচারের বিষয়গুলোর উপর নজরদারির জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি ইউনিট গঠন করেছে অনেক আগেই। এর নাম ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

এই ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোঃ. রাজী হাসান একটি প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলার আকবর হোসেনকে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী বিদেশে টাকা পাঠানো এতো সহজ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে রীতিমতো অসম্ভব।

ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মি. হাসান বলেন: “বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের সময় একজন ব্যক্তি প্রতিবছর ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া শিক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য শর্তসাপেক্ষে অর্থ নেয়া যায়। তবে বিদেশে সম্পদ কেনার জন্য অর্থ নেয়া নিষিদ্ধ।”

তবে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে সরকারের আইন যতোই কঠোর হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে অর্থ পাচার থেমে নেই। পাচারকারীরা নিত্যনতুন কৌশলও খুঁজে বের করছেন।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা

বিদেশে বিনিয়োগ কারা করছেন

নানা পন্থায় বিদেশে টাকা পাচার করে সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে।

বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের সুবিধায় তাদের পরিবারের সদস্যরা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা নাগরিকত্ব নিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী নিজেরাও ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়ে বসবাস করছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে কানাডা অর্থ পাচারের যে গুঞ্জন এতদিন ছিলো তার সত্যতা পাওয়া গেছে। এর প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, তারাও এনিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং এসংক্রান্ত তথ্য তারা সরকারের কাছে চেয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, তারা অন্তত ২৮টি ঘটনায় দেখেছেন যে যারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে টাকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাই বেশি।

একসময় বিদেশে পাচার করা অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা হলেও এখন অর্থ পাচারকারীরা বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ কোটায় নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের সুবিধা নিয়েছেন।

 

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com