1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে প্রতারণার জাল
শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে প্রতারণার জাল

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৬ মে, ২০২১

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া এখন অনেকেরই প্রথম পছন্দ। ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল এডুকেশন’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া ও ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন করে থাকেন। বিনিময়ে ফার্মগুলো ক্ষেত্রভেদে একেকজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।

জানা গেছে, সারাদেশে নামে-বেনামে দুই হাজারের মতো কনসালটেন্সি ফার্ম গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারের মনিটরিং না থাকায় ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে কয়েকটি চক্র। আর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবার। গত এক দশকে এসব চক্র পড়াশোনার জন্য বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অন্তত ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীদের ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থাকে পছন্দের শীর্ষে। মানসম্পন্ন ও ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ভর্তি ও ভিসা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম নিজেরাই সম্পন্ন করেন।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে ওই ফাঁদে পা দেয় একটি বড় অংশ। এসব ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই নিজের লাখ লাখ টাকার লোকসান করেছেন।

জানা যায়, চটকদার প্রচারণার মাধ্যমে অসাধু এজেন্সিগুলো প্রধানত দুই ধরনের প্রতারণা করে থাকে। এক. শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া অসম্পন্ন রাখা ও বিদেশে না পাঠানো। দুই. ভিসা করে বাইরে পাঠিয়ে প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা না দেয়া। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশের বাইরে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতারক চক্রগুলো এখন লাগামহীন। এটিকে মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের নতুন ক্ষেত্র বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে দেশে শক্ত কোনো আইন নেই। কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর কর্মকাণ্ড তদারকিরও ব্যবস্থা নেই। কেবল ‘পরামর্শক’ হিসেবে একটি ট্রেড লাইসেন্স বা কোম্পানি করেই প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাট করেও পার পেয়ে যাচ্ছে ফার্ম সংশ্লিষ্ট প্রতারকরা।

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এরকম তিনজনের প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। উত্তরার ট্রাভেলার এজ বি.ডি. নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাব্বির হোসেন (২১), শামীমুল হক ও আমিনুল ইসলাম নামের তিনজনকে পড়াশোনর জন্য কানাডায় পাঠানোর কথা বলে যথাক্রমে ২০ লাখ, ১৫ লাখ ও ১৭ লাখ টাকা নেয়।

এরপর তাদের কানাডায় না পাঠিয়ে ইন্দোনেশিয়া পাঠানো হয়। সেখানে শুরু হয় তাদের মানবেতর জীবন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ইন্দোনেশিয়া পুলিশ তাদের আটক করে এবং ১৭ দিন তারা জেলহাজতে থাকে।

বিদেশে ভর্তির নামে ‘স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি’ করা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ফ্যাডক্যাব)-এর সদস্য সংখ্যা ৪০০-এর মতো। অথচ রাজধানীর ফার্মগেট, পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, কাকরাইল, উত্তরা, গুলশান, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অন্তত পৌনে তিনশ’ প্রতিষ্ঠান আছে। আর নামে-বেনামে সারাদেশে এই সংখ্যা দুই হাজারের মতো।

সংগঠনটির সভাপতি কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী জানান, যারা শিক্ষার্থী পাঠানোর নাম করে অন্য উদ্দেশ্যে বিদেশে লোক পাঠায় তারা অবশ্যই অপরাধ করছে। কারণ এই লাইসেন্স দিয়ে সেটা করার কোনো সুযোগ নেই।

পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে রাজধানীতে স্টুডেন্ট ভিসা কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্তত দেড়শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৫৫টি অভিযানে ৬৯২ মানব পাচারকারী আটক হয়। এসব ঘটনায় মামলা হয় ৩৩০টি।

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নামে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথাও জানিয়েছে আটক হওয়া অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ মামলা হয়েছে ৪২০ ধারায়। ফলে আসামিদের বেশির ভাগ জামিনে বের হয়ে গেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (গুলশান বিভাগ) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনায় টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়া এবং বিদেশে ভর্তি না করার অভিযোগই আমরা পেয়ে থাকি। জাল-জালিয়াতি করে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কাউকে বিদেশে পাঠাতে সক্ষমও হয় তাহলে সেখানে গিয়ে ধরা পড়ে জেল-জুলুমের শিকার হওয়ার ঘটনা আছে। কেউ রক্ষা পেলেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে কুলি-মজুরের কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ সময় ভুক্তভোগীরা কখনও ভয়ে, কখনও প্রতারক চক্রের প্রতিশ্রুতির জালে পড়ে মামলা করা থেকে বিরত থাকেন।

এদিকে, কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সেই অর্থে কোনো মনিটরিংও নেই। ফলে প্রতারণা চলছেই। এটা মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের নতুন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অধীনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত একটি বিধিমালায় কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর রাখার কথা ছিল।

২০১৪ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা করা হয়। কিন্তু তাতে ফার্মগুলোর ব্যাপারে কোনো বিধান রাখা হয়নি। নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কনসালটেন্সি ফার্মগুলো মূলত ব্যবসা করছে। এগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়। তাই যারা লাইসেন্স দিয়েছে এটা তাদেরই দেখার কথা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com