হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমা হল একে অপরকে জানার, বুঝার ও নতুন কিছু স্মৃতি তৈরি করার একটা মাধ্যম। যাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়ে থাকে তাদের জন্য এই উপলক্ষটি তাদের মধ্যকার জড়তা কাটানোর উপায় হয়ে থাকে। এটি নিয়ে হানিমুন ১: বাংলাদেশ ব্লগে কিছু কথা বলা হয়েছিল। এই ব্লগে আমরা কথা বলবো হানিমুন এর জন্য উপযোগ্য কিছু বিদেশি গন্তব্যস্থল নিয়ে।
১। সুইজারল্যান্ড: সুইজারল্যান্ড ইউরোপ মহাদেশের একটি মনোরম দেশ। দেশটি দেখতে একদম ছবির মত। এখানে অনেক সুন্দর কিছু এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে জুরিখ , সেন্ট মরিটস , টিচিনও , বার্ন ও আরও অনেক শহর উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে সুইজারল্যান্ডের দূরত্ব ৪৬৬০ মাইল। প্রথমে আপনাদের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে এবং ভিসা হয়ে যায়, তখন আপনার পছন্দের এয়ারলাইন্সে টিকেট বুক করতে পারবেন। ঢাকা -জুরিখ টিকেটের খরচ পরবে আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রতিজনে সর্বনিম্ন প্রায় ৭০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ প্রায় তিন লাখ টাকা। ঢাকা থেকে জুরিখ যেতে কমপক্ষে ১৫-২০ ঘণ্টা সময় লাগবে। যদি সুইজারল্যান্ডের সম্পূর্ণ সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে চান তাহলে কমপক্ষে ৪ টি শহর দেখার পরিকল্পনা করতে হবে। প্রথমে জুরিখ শহরটি ঘুরে দেখতে হবে।
জুরিখ শহরের মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে লিম্মাত নদী। এখানের শান্ত পরিবেশ নব-দম্পতির জন্য খুবই উপযোগ্য। ঐখান থেকে আপনারা বার্ন , সুইজারল্যান্ডের রাজধানী ঘুরে আসতে পারেন। জুরিখ থেকে ট্রেনে গেলে ১ ঘণ্টা লাগবে বার্নে পৌঁছাতে। এখানে জার্মান সংস্কৃতির কিছুটা প্রভাব দেখা যায়। এখানে ইউনেস্কো দ্বারা ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান আছে। ওল্ড সিটি অফ বার্ন – এ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান ও অনেক আগে নির্মিত কিছু জিনিস রয়েছে যা না দেখলে এখানে যাওয়াটাই বৃথা। বার্ন ট্রেন স্টেশন থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট যাত্রার পর আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার পরবর্তী গন্তব্যস্থল লহ্জ্যান শহর। এটি জেনেভা হ্রদের তীরে অবস্থিত।
এখানে আপনি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত চকলেট ফ্যাক্টরি দেখে আসতে পারেন। এছাড়াও আপনি সেখানের ঐতিহ্যবাহী সুইস চীস ফনডু উপভোগ করতে পারেন। এখানে আরও আছে অলিম্পিক জাদুঘর , যেখানে আগের খেলার ১০০০০ শিল্পকর্ম সংরক্ষণে আছে। এখান থেকে আপনারা রওনা হতে পারেন লুগানো শহরের দিকে যা আপনাদের হানিমুন ভ্রমণের সর্বশেষ গন্তব্যস্থল। লুগানো শহরটি লুগানো হ্রদের উপর অবস্থিত এবং লুগানো প্রাকালপস দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানের পরিবেশ খুবই রোমান্টিক। এখানে আসলে অবশ্যই বুটিক শপ ঘুরে দেখবেন এবং কিছু রেস্টুরেন্টে তাদের স্থানীয় খাবার স্বাদ করে দেখতে পারেন। এভাবে শেষ করতে পারেন আপনার স্বপ্নের হানিমুন।
২। মালদ্বীপ: এটি অনেক সুন্দর একটি দেশ। এই দেশটি ভারত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এখানে অনেক এমন সৈকত (Beach) আছে যা দম্পতিদের জন্য একদম নিখুঁত। তারা এরকম সৈকতে নিরিবিলি কিছু সময় কাটাতে পারে। বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১৮৮১.১৭ মাইল। যেহেতু আমরা একটা নতুন দেশে যাচ্ছি তাই এখানেও ভিসার ব্যাপার আছে। ভিসার পর আমরা যেকোন এজেন্সির সাথে কথা বলে টিকেট কাটতে হবে। টিকেটের খরচ পরবে প্রতিজনে প্রায় ৯৫০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মালদ্বীপ যায় এমন কোন এয়ারলাইন্স নাই। যেকোনো এয়ারলাইন্সে গেলেই একটা সংযোজক ফ্লাইট থাকবেই, এজন্যে সেখানে পৌঁছাতে প্রায় ১৩-১৪ ঘণ্টা লেগে যায় আবার এর চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। ঢাকা থেকে আমরা টিকেট কাটবো মালদ্বীপের রাজধানী মালে এর জন্য।
এখানে অবস্থানের সময় আপনারা অনেক রকমের কার্যকলাপ করতে পারেন। স্নরকেলিং, স্থানীয় যানবাহনের সাহায্যে মহাসাগর ভ্রমণ ও আরও অনেক কিছু। যদি আপনি বিয়ের পরিকল্পনা করে ক্লান্ত হয়ে থাকেন তবে চলে যেতে পারেন মালদ্বীপের যেকোনো রিসোর্টে এবং ঘুরে আসতে পারেন সেখানকার স্পাতে (Spa)। স্পাতে কাপল-মাসাজ (Couple-Massage) নেয়ার মাধ্যমে তারা অনেক সতেজ অনুভব করবে। এছাড়াও তারা স্নরকেলিং এর মাধ্যমে দেখতে পারেন প্রবাল দ্বীপের বিভিন্ন রঙের ও আকারের মাছ। এখানে একটি রেস্টুরেন্ট আছে যা পানির নিচে অবস্থিত, এখানে একটি রোমান্টিক ডিনার করলে মন্দ হয় না। এই অভিজ্ঞতা আজীবন মনে রাখার মত।
৩। বালি: বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ ও প্রদেশ। বালি ও তার আশেপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপমালা নুসা পেনিদা, নুসা লেমবনগান ও নুসা সেনিনগান নিয়ে প্রদেশ গঠিত হয়েছে। এর রাজধানী দেনপাসার দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশ থেকে বালির দূরত্ব প্রায় ২৭৭৬ মাইল। এখানে পৌঁছাতেও আপনাদের সংযুক্ত ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এতে প্রতিজনে টিকেটের খরচ পরবে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ২ লাখ টাকা। এই প্রদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর সমুদ্র-সৈকত।
বালিতে এরকম অনেক রিসোর্ট আছে যেখান থেকে পুরো প্রদেশের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায়। প্রথমে আপনারা যেতে পারেন উলুওয়াতুতে যেখানে রয়েছে রোমান্টিক আবহাওয়া এবং কিছু নিজস্ব সময় কাটানোর উপায়। রাতে এখানে একটি বিশেষ নৃত্য হয়ে থাকে যা কেচাক ফায়ার ডান্স নামে পরিচিত। এরপর যেতে পারেন কাঙ্গু সৈকতে। ঐখানে ঘোড়ায় চড়ে সূর্যাস্তের সময় ঘোরা যায়। এছাড়াও আপনারা ডুবসাঁতার, স্পা, পানিতে কচ্ছপ ছেড়ে দেওয়া ও আরও অনেক কিছু করতে পারেন।
এই তিনটি স্থান ছাড়াও আরও অনেক আকর্ষণীয় দেশ ও শহর রয়েছে যেখানে গেলে নব-দম্পতি তাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কখনই ভুলবে না।