শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
Uncategorized

বিদেশে মধুচন্দ্রিমা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 ভারত

কলকাতা বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান আকর্ষণ কলকাতা। প্লেনে এবং বাসে  দিনে দিনে সরাসরি কলকাতা যাওয়া যায়। আর ট্রেনে যাওয়া যায় সপ্তাহে তিন দিন। ১৮৫৫ সালে তৈরি মার্বেল প্যালেস। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে সংগৃহীত নানা বস্তু আছে এই প্যালেসে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আছে মহারানী ভিক্টোরিয়ার ব্যবহৃত অমূল্য সামগ্রী সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা আছে এখানে।  বিড়লা প্ল্যানেটারিয়ামের  প্ল্যানেটারিয়াম থেকে সৌরজগৎ সম্পর্কে জানা যায়। বিদ্যাসাগর সেতু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার এক বিস্ময়কর অবদান। হুগলি নদীর ওপর এই সেতুটি ১৯৯২ সালে ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। এটি এশিয়ার দীর্ঘতম তারের রশিতে ঝুলন্ত সেতু। কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সায়েন্স সিটি অন্যতম। বিজ্ঞান, কারিগরি আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই সায়েন্স সিটি।  বোটানিক্যাল গার্ডেন সুন্দর বাগান। যেখানে বিচিত্র গাছপালা দেখতে পাবেন। চৌরঙ্গি আর পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় জাদুঘর। মিসরের সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো মমিও আছে এই জাদুঘরে। হাতে কিছুদিন সময় বেশি থাকলে শান্তিনিকেতন, মুর্শিদাবাদ, দীঘা, নদিয়ার মায়াপুর, ডুয়ার্সের অরণ্য এই স্থানগুলোর কোনো কোনোটা বেড়িয়ে নিতে পারবেন।

দার্জিলিং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য শুধু ভারত নয়, পৃথিবী বিখ্যাত এই দার্জিলিং। শুধু দার্জিলিং নয় দার্জিলিং যাওয়ার পথটাও যেন স্বপ্নময়। কেউ কেউ কলকাতা হয়ে দার্জিলিং বেড়াতে যান। কেউ যান বুড়িমারী সীমান্ত ধরে, শিলিগুড়ি হয়ে। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং থেকে দেখা যায় পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুস্থানের রেলস্টেশন ‘ঘুম’ এ শহরেই অবস্থিত। আছে ভারতের প্রথম মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’। ইকো ট্যুরিজমের জন্য দার্জিলিং এক রোল মডেল। শিলিগুড়ি, কালিম্পং, মিরিক, জলঢাকা, নকশালবাড়ি, প্রধাননগর, দুখিয়াপোখরি, কার্শিয়াং এই জেলার বিখ্যাত জায়গা।

দিল্লি তিন হাজার বছরেরও পুরনো এই শহর। পুরান দিল্লি আর নয়া দিল্লি দুই ভাগে ভাগ। ইতিহাসজড়িত প্রায় সবকিছুই পুরান দিল্লিতে। দিল্লিতে দেখতে পাবেন কুতুব মিনার, হুমায়ুনের সমাধি, লোটাস টেম্পল, জন্তর মন্তর, রাজঘাট_ যেখানে মহাত্মা গান্ধীর সমাধি এবং ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, নেহরু পরিবারের সমাধিও রয়েছে। এ ছাড়া আছে লালকেল্লা, যেখানে সোমবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সন্ধ্যায় দারুণ উপভোগ্য লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়। ইন্ডিয়া গেট, লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির, বিড়লা মন্দির, দিল্লি কালীবাড়ি, চাঁদনি চক, ডলস মিউজিয়াম, ইশা খাঁর সমাধি, খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার, বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের সমাধি, রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবন, একসঙ্গে ২৫ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জুমা মসজিদ, ন্যাশনাল মিউজিয়াম আরও কত কি! যমুনা নদীর পাড়ে তাজমহলখ্যাত এই আগ্রার কথা আর নতুন করে কী বলার আছে। সকালে তাজমহল দেখতে আপনার দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। অনেকেই সূর্যোদয়ের সময়কায় তাজমহল দেখতে পছন্দ করেন। তারপর রেড ফোর্ট দেখতে আরও ঘণ্টা দু-এক। দুপুরের খাবারের পর দেখে নিতে পারেন আকবরের তৈরি আগ্রার পূর্বতন রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি।

জয়পুর জয়পুর রাজস্থানের রাজধানী। রাজা জয়সিংয়ের নাম থেকে জয়পুর। জয়পুরের আরেক নাম পিংক সিটি। এখানে দেখা যাবে দুর্গ আর মিনার। গোলাপি রঙে একাকার হয়ে আছে এ শহর।  জয়পুরে দেখার মতো আছে অনেক কিছু। তার মধ্যে গোবিন্দজির মন্দির, কালীমন্দির, জয়মন্দির, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, সুখমন্দির, অম্বর প্যালেস, হাওয়া মহল, সিটি প্যালেস, যন্তর-মন্তর, জলমহল, মিউজিয়াম, নাহারগড় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সিমলা হিমাচলের রাজধানী সিমলা। সিমলা ও মানালি দুই গন্তব্যই বাংলাদেশিদের অনেক প্রিয়। যারা বরফ দেখতে চান, যারা তুষারপাত দেখতে চান, তারা মানালি যেতে পারেন। সিমলার অন্যতম আকর্ষণ ম্যালে। কার্ট রোড থেকে লিফটে করে ম্যালে পৌঁছানো যায়। এখানে আছে ঘোড়ায় চড়া, থিয়েটার, স্কেটিং করার সুযোগ। আছে প্রচুর শপিংয়ের সুযোগ। জাখু পাহাড়ে গেলে দেখতে পাবেন হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য। মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এগুলোই দেখা মিলবে অপরূপ সামার হিলের। আরও দু-কিলোমিটার এগোলে চাঁদউইক জলপ্রপাত। আরও দেখে নিন প্রস্পেক্ট হল, কামনা দেবীর মন্দির, চিড়িয়াখানা, ভাইসরয়ের প্রাসাদ রিট্রিট, ঐতিহাসিক ছয়তলা ভবন, পুষ্প উদ্যান নববাহার, মোচন মন্দির, শিবমন্দির, তারাদেবীর মন্দির, ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হল ইত্যাদি। সিমলা গেলে কুলু এবং মানালিও দেখে আসবেন।

 নেপাল

হিমালয়কন্যা বলে নেপালকে। সারা পৃথিবীর পর্বতারোহীদের রাজধানী বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট নেপালে। মূল আকর্ষণ : কাঠমান্ডু, নাগরকোট, পোখারা কাঠমান্ডু হয়েই আপনাকে অন্যান্য শহরে যেতে হবে। কাঠমান্ডুতে দেখুন কুমারীঘর, কুমারীঘরের পাশেই ষোড়শ শতাব্দীর তৈরি রাজলক্ষ্মী নরসিংহ মল্লের প্রাসাদ। একটি মাত্র গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি এই প্রাসাদের নাম কাষ্ঠমণ্ডপ। হয়তো এ থেকেই শহরের নাম কাঠমান্ডু। এ ছাড়া দেখুন বসন্তপুর দবার স্কয়ার, শম্ভুনাথ, বড়া নীলকণ্ঠ, শিবপুরী পাহাড় ও হনুমান ধোঁকা।  কাঠমান্ডু শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে এই নাগারকোট। নেপালের যেসব স্থান থেকে সবচেয়ে মনোরম সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়, নাগরকোট তার মধ্যে সেরা। হিমালয়ের মোট ১৩টি পর্বত রেঞ্জের মধ্যে আটটিই নাগরকোট থেকে দেখা যায়। সমুদ্রসীমা থেকে সাত হাজার ফুট উঁচুতে এই শহর। কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে পোখারা। পোখারা নেপালের বিখ্যাত পর্যটন গন্তব্য। এই শহরের মাত্র তিরিশ মাইল দূরত্বের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ১০টি পর্বতের মধ্যে ৩টি দৃশ্যমান_ ধৌলাগিরি, অন্নপূর্ণা ১ ও মানাসলু। পোখারায় দেখবেন ডেভিড ফলস, গুপ্তেশ্বর গুহা ও শ্বেতি নদী। অদ্ভুত এই নদী। পানির রং সাদা। এখানেই আছে বিখ্যাত ফেওয়া লেক। চাইলে নৌকা ভ্রমণ করে নিতে পারেন এই লেকে। পোখারায় সূর্যোদয় দেখতে চাইলে যেতে হবে নৌদাড়। পোখারা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে।

 ভুটান

ভুটান পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার ৬৮ শতাংশই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পৃথিবীর আর কোনো দেশে অরণ্য আর সবুজ প্রকৃতিকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে ভুটানের প্রকৃতির সৌন্দর্যের তুলনা ভুটানই। বিনিময়ে হিমালয় যেন নিজেকে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে এখানে। বেশির ভাগ বাংলাদেশি পর্যটক প্লেনে যাতায়াত করেন। ভারতের ট্রানজিট ভিসা থাকলে কলকাতা থেকেও যাতায়াত করতে পারেন। রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাতে কলকাতার এসপ্ল্যানেড বাসস্ট্যান্ড থেকে ভুটানের সীমান্ত শহর ফুনসোলিংয়ে বাস যায়।  ভুটানের রাজধানী শহর থিম্পু। থিম্পুর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০০০ ফুট। বছরের বেশির ভাগ সময়ের তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় বেশ কম। থিম্পু সাজানো ও পরিচ্ছন্ন শহর। থিম্পুতে দেখবেন পাহাড়ি নদী, বৌদ্ধ মন্দির, রাজপ্রাসাদ, ন্যাশনাল মেমোরিয়াল স্তুপা, বিবিএস টাওয়ার, সেন্টেনারি ফার্মাস মার্কেট, জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ন্যাশনাল পার্ক, টাকিন চিড়িয়াখানা, ফুল আর আপেলের বাগান। থিম্পুর রাস্তাঘাট দেখে মুগ্ধ হবেন। আপনার ভুটান ভ্রমণ পারো থেকেই শুরু হবে।

এয়ারপোর্ট থেকে শহরে যেতে ১৫ মিনিটের পথ। পারো থেকে থিম্পুর দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিলোমিটার। ঘণ্টা দু-একের যাত্রা। ১৬৪৯ সালে তৈরি রিনপুং জং দেখুন পারোতে। এটি উচ্চতায় সাততলা দালানের সমান। এখানে দেখতে পাবেন গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। পাচু নদীর ওপর কাঠের সেতুটাও বিখ্যাত। ঘুরে দেখুন মিউজিয়াম। পুনাখা যেতে পারমিট লাগে। পারমিট জোগাড়ে ঝক্কিঝামেলা তেমন নেই। আবেদন করার পর ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যেই পারমিট মিলে যায়। থিম্পু থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে পুনাখা। পুনাখা যাওয়ার পথে দেখে নিন বিখ্যাত দোচুলা পাস। পুনাখায় পৌঁছে দেখবেন পাথরের ছড়াছড়ি। যেন এক পাথুরে শহর। আছে ঝুলন্ত ব্রিজ আর ব্রিজের নিচ দিয়ে সশব্দে বয়ে গেছে খরস্রোাতা নদী

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com