বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

বিদেশে পড়তে চাই, কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রোগ্রাম আমার জন্য

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নানা দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করেও সাড়া না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু এমনও তো হতে পারে, আপনি বারবার ভুল দরজায় কড়া নাড়ছেন। অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, আগ্রহ—নানা দিক বিবেচনা করেই আবেদন করা উচিত। এ প্রসঙ্গে জানা যাক কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীর মতামত।

নিজেকে বুঝুন

উচ্চশিক্ষার আবেদনের বিভিন্ন ধাপে আপনাকে নিজের লেখা বেশ কিছু নিবন্ধ জমা দিতে হবে। আপনি নিজেই যদি নিজের শক্তি ও আগ্রহের জায়গাটা না বোঝেন, তাহলে অন্যকেও বোঝাতে পারবেন না। ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বৃত্তিদাতাদের কাছে ‘আগ্রহ’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন আপনি একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়তে চান বা নির্দিষ্ট একটি ক্যারিয়ার বেছে নিতে চান; আপনার জীবনের লক্ষ্য কী—এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো নিজের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করা,’ বলছিলেন তাহমিনা আক্তার। তিনি বর্তমানে ইন্টেল করপোরেশনে ডিফেক্ট রিডাকশন ডেটা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। তাহমিনা যোগ করেন, ‘আমি সব সময় ন্যানোম্যাটেরিয়ালস ও সেমিকন্ডাক্টর প্রসেসিং নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। তাই পিএইচডি করার জন্য এমন একটি বিষয় বেছে নিয়েছি, যা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে সরাসরি কাজে লাগানো যায়।’

তাহমিনা মনে করেন, শুধু আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে নয়, ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিষয় নির্বাচন করা উচিত। এতে আরও নানা সম্ভাবনার দরজা খুলে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রামের র‌্যাঙ্কিং যাচাই করুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং গুরুত্বপূর্ণ হলেও শুধু সেটার ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। বাবলু হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ফেলো। তাঁর মতে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং বিবেচনা করা যায়, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অধ্যাপকের গবেষণার সঙ্গে নিজের আগ্রহের মিল আছে কি না, সেটি। পাশাপাশি ল্যাবের সুবিধা, গবেষণার সুযোগ এবং সুপারভাইজারের কাজের ধরনও বিবেচনায় রাখা জরুরি।’

ভালো র‍্যাঙ্কিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিশ্চয়ই একটা বড় সুযোগ। কিন্তু আপনি যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, সে বিষয়সংশ্লিষ্ট পড়ালেখা বা কাজের সুযোগ সম্পর্কেও আগে থেকেই ভালোমতো খোঁজ নিন। ভালো হয় যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কোনো শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

বৃত্তি ও তহবিলের সুযোগ

ভিনদেশের পড়ালেখা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। জীবনযাত্রার মান যেহেতু আলাদা, থাকা-খাওয়ার পেছনেও একটা বড় অঙ্কের অর্থ চলে যায়; তাই বিমানে চেপে বসার আগেই বৃত্তি বা তহবিলের সুযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো। তাহমিনা আক্তার তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলছিলেন, ‘জিআরই বা টোয়েফলে ভালো স্কোর থাকলে সহজেই রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্স বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ফান্ড পাওয়া যায়। আমার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা এবং কিছু পাবলিকেশন থাকায় ফান্ডিং পেতে সুবিধা হয়েছে।’ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে তা ভর্তিপ্রক্রিয়া ও বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভর্তিপ্রক্রিয়া ও যোগ্যতা যাচাই করুন

ভিনদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপ্রক্রিয়াটি অবশ্যই ‘রকেট সায়েন্স’ নয়। কিন্তু প্রতিটি ধাপ বুঝতে হলে আপনাকে ভালোভাবে নির্দেশনাগুলো পড়তে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আপনার যোগ্যতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার মিল আছে কি না, যাচাই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তড়িৎ প্রকৌশলে পড়ছেন রাবাব ই জান্নাত। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি এমন অধ্যাপকদের খুঁজেছি, যাঁদের গবেষণার বিষয় আমার আগ্রহের সঙ্গে মেলে। পাশাপাশি আবেদনপ্রক্রিয়াটি আমার কাছে সহজ মনে হয়েছে; কারণ, আগে থেকেই সঠিক তথ্য ও গাইডলাইন পেয়েছিলাম।’

অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ, সঠিকভাবে আবেদনপত্র প্রস্তুত করা, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন এবং ঠিকভাবে নিজের আগ্রহ তুলে ধরার সক্ষমতা ভর্তিপ্রক্রিয়াকে সহজ করে।

অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের ব্যবহার

সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য অ্যালামনাই ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্কের সহায়তা বেশ কার্যকর। বাবলু হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে বোঝা যায়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপক কোন বিষয়ে শিক্ষার্থী খুঁজছেন এবং কোথায় ফান্ডিং আছে।’

লিংকডইন, রিসার্চ গেট এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার মান বুঝতে সহায়ক।

কাজের সুযোগ আছে কি

কোনো দেশে পড়তে যাওয়ার আগে সেই দেশের চাকরির বাজার, ওয়ার্ক পারমিটের শর্তাবলি ও পড়ালেখা-পরবর্তী ভিসা নীতিমালা সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

ফিনল্যান্ডের ওউলু বিশ্ববিদ্যালয়ে লার্নিং, এডুকেশন ও টেকনোলজি বিষয়ে পড়ছেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘ফিনল্যান্ডে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা, বিশেষ করে ফিনিশ ভাষা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনার সঙ্গে ভাষাগত দক্ষতা একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়। তবে দেশ থেকেই যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিয়ে আসা ভালো।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com