উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, আধুনিক গবেষণাসুবিধা ও ভালো ক্যারিয়ার সম্ভাবনার কারণে বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্কলারশিপের সহায়তায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান।
প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের সুযোগ প্রদান করে। এসব তথ্য পাওয়া যায় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অফিসিয়াল পেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে। বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১০ দেশের স্কলারশিপ সম্পর্কিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
১. যুক্তরাষ্ট্র: ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম
ফুলব্রাইট ফরেইন স্টুডেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশি স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীরা বিনা খরচে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পান। বিশেষ করে যেসব প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন—বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কনিষ্ঠ অনুষদ সদস্য, সরকারি ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন এবং এনজিওতে কর্মরত কনিষ্ঠ থেকে মধ্যপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শিক্ষাগত সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।
প্রাথমিক যোগ্যতা: ভালো ফলসহ ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়
সংযুক্তি: টোয়েফল স্কোর ৮০ বা আইইএলটিএস স্কোর ৭.০, নির্বাচনী ধাপে জিআরই পরীক্ষার স্কোর যুক্ত করতে হয়;
আবেদনের সময়: এপ্রিল-মে-জুন;
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
২. কানাডা: এডু কানাডা স্টাডি ইন স্কলারশিপ
এডু কানাডা স্টাডি ইন স্কলারশিপ কানাডা সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত একটি বৃত্তি কর্মসূচি, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কানাডার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান করে। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা সুবিধা ও বহুসাংস্কৃতিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। কানাডার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাগত সম্পর্ক উন্নয়ন ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
আবেদনপ্রক্রিয়া: অনলাইনে আবেদন করতে হবে;
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৩. যুক্তরাজ্য: কমনওয়েলথ বৃত্তি
যুক্তরাজ্য সরকারের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক স্কলারশিপগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ স্কলারশিপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। এ প্রোগ্রামের অর্থায়ন করে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি)। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার সুযোগ মিলবে এই বৃত্তির মাধ্যমে।
প্রাথমিক যোগ্যতা: স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি;
সংযুক্তি: ভাষাদক্ষতার সনদ হিসেবে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করা হয়;
আবেদনের সময়: সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি;
কমনওয়েলথ স্কলারশিপ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৪. ফ্রান্স: আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ
আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ ফ্রান্সের ইউরো অ্যান্ড ফরেন অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের একটি প্রোগ্রাম। এই স্কলারশিপ শিক্ষার্থীদের পেশাদার দক্ষতা অর্জনের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয়। ইন্টার্নশিপে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদনের মাধ্যমে একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে হয়। এই বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ আছে।
আবেদনের যোগ্যতা: ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এইচএসসি এবং স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য স্নাতকে ভালো ফল প্রয়োজন;
আবেদনের সময়: ডিসেম্বর-জানুয়ারি;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৫. জার্মানি: ডাড স্কলারশিপ
German Academic Exchange Service অথবা ডাড (DAAD) তাদের কার্যক্রম শুরু করে ১৯২৫ সালে। এই স্কলারশিপ প্রতিবছর প্রায় ১,৫০,০০০ ছাত্রছাত্রীকে অর্থায়ন করে থাকে। যারা স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য ডাড (DAAD) স্কলারশিপ একটি দারুণ সুযোগ। জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে বৃত্তি পাওয়া যায় ডাড-এর আওতায়।
আবেদনের যোগ্যতা: ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এইচএসসি এবং স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য স্নাতকে ভালো ফল প্রয়োজন;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৬. রাশিয়া: সরকারি বৃত্তি
রাশিয়া সরকার প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য Russian Government Scholarship প্রদান করে, যা বিনা মূল্যে রাশিয়ার বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেয়। শিক্ষার্থীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির জন্য বৃত্তি পাবেন। তবে শিক্ষার্থীদের সেজন্য এক বছর রুশ ভাষা শিখতে হবে।
আবেদনের যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাধারণ যোগ্যতা;
আবেদনের সময়: সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৭. চীন: সিএসসি বৃত্তি
সিএসসি বৃত্তি (CSC Scholarship) হলো চীন সরকার প্রদত্ত একটি পূর্ণাঙ্গ বৃত্তি, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চীনের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করার সুযোগ দেয়। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি ছাড়াই মানসম্পন্ন শিক্ষা, গবেষণাসুবিধা এবং চীনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। চীন ও অন্যান্য দেশের মধ্যে শিক্ষাগত সহযোগিতা বাড়ানো এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। বৃত্তিপ্রাপ্তদের চীনা ভাষা শেখানো হয়।
আবেদনের যোগ্যতা: ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এইচএসসি এবং স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য স্নাতকে ভালো ফল প্রয়োজন;
আবেদনের সময়: ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৮. জাপান: মেক্সট বৃত্তি
জাপানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান করা হয়। জাপানে পড়াশোনার জন্য অন্যতম একটি স্কলারশিপ হলো ‘মেক্সট’ (এমইএক্সটি)। শব্দটি প্রকৃতপক্ষে মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন, কালচার, স্পোর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমইসিএসএসটি)। বড়সড় শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেক্সট। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু করে বিশ্বের ১৬০টির মতো দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীকে এ স্কলারশিপ দেয় জাপান সরকার। জাপান সরকার প্রদত্ত স্কলারশিপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে খ্যাতনামা ও সম্মানিত।
আবেদনের যোগ্যতা: স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এইচএসসি ও স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য স্নাতকে ভালো ফল প্রয়োজন;
সংযুক্তি: কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর প্রযোজ্য;
আবেদনের সময়: জানুয়ারি-জুলাই;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
৯. ভারত: আইসিসিআর শিক্ষাবৃত্তি
ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনায় বৃত্তি প্রদান করা হয়। ভারতে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ হচ্ছে আইসিসিআর স্কলারশিপ। প্রতিবছর আইসিসিআর-এর আওতায় মোট ২০০ স্কলারকে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের জন্য আর ১০০টি নন-ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের জন্য। যেমন: স্নাতকে ১৪০টি, স্নাতকোত্তর ৪০টি এবং এমফিল ও পিএইচডির জন্য ২০টি।
আবেদনের যোগ্যতা: ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এইচএসসি এবং স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য স্নাতকে ভালো ফল প্রয়োজন;
আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
১০. অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড স্কলারশিপ
অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। বিসিএস ক্যাডার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা, ব্র্যাক ও আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা আবেদন করতেন পারেন। নারীদের এই বৃত্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
২০২৫ সালে এই স্কলারশিপ বিশ্বের ৫৫টি দেশের মোট ১,৫৫১ জন শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হবে। অস্ট্রেলিয়া ২০২৩–২০২৪ শিক্ষাবর্ষে উল্লেখযোগ্যভাবে এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামে ২৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
আবেদনের যোগ্যতা: স্নাতকে আবেদনের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
সংযুক্তি: আইইএলটিএস ৬.৫ স্কোর থাকতে হয়;
আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল;
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।