ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ হচ্ছে ইতালি। ইতালির অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা, জীবনযাত্রার মান সবকিছুর মূলে রয়েছে তাদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক হওয়ায় উচ্চ শিক্ষায় ইতালি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। ইতালির উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা, বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাড়ি জমায় উচ্চ শিক্ষা অর্জনে। এজন্য বলা হয়ে থাকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষার স্থান ইতালি।
কেন যাবেন ইতালিতে?
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পছন্দের কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হচ্ছে ইতালি। এখানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ডিগ্রি প্রদানকারী অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তুলনামূলকভাবে স্বল্প টিউশন ফি দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। স্বল্প খরচে বাস করতে পারবেন। শিক্ষা খাতে নিত্যনতুন বৈচিত্র্য দেখতে পাবেন। পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ পাবেন। অনেক ধরনের কোর্স থেকে নিজের পছন্দমতো কোর্স বাছাই করে পড়তে পারবেন। ইতালিতে ৯০টি নিবন্ধিত উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে ৫০টির বেশিই পরিচালিত হয় সরকারি অর্থায়নে। এছাড়াও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে পোস্টগ্র্যাজুয়েট সেন্টার, পলিটেকনিক ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী সেক্টর।
গ্লোবাল পিইও (প্রফেশনাল ইম্প্লয়ার অর্গানাইজেশন) সার্ভিসেস ও ফোর্বসের মতে, বর্তমানে ইউরোপ অর্থনীতিতে তৃতীয় এবং গোটা বিশ্বে নবম বৃহত্তম দেশ ইতালি। সেই সূত্রে, ইন্টার্নশিপ, অন-দ্যা-জব ট্রেনিং এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
দেশটির প্রধান ভাষা ইতালিয়ান হলেও ইংরেজি ভাষার প্রতি গুরুত্ব থাকায় প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছে ইতালিতে।
পর্যটন শিল্পের দিক থেকেও ইতালি বিশ্ব বিখ্যাত। ইউএনডব্লিউটিও (ইউনাইটেড ন্যাশন্স ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন) অনুসারে, বিশ্ব পর্যটন র্যাঙ্কিংয়ে এই ইউরোপীয় দেশটির অবস্থান ৪র্থ। এখন পর্যন্ত ইতালিতেই রয়েছে সর্বাধিক সংখ্যক ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (৫৯)। এগুলোর মধ্যে ৫৩টি সাংস্কৃতিকভাবে স্বীকৃত ও ৬টিতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিশেষত্ব।
ভাষাগত যোগ্যতা:
ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজী ও ইতালীয় উভয় ভাষায় কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। আর আপনি যদি ইতালীয় ভাষায় পারদর্শী না হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্য ইংরেজী ভাষায় কোর্স পছন্দ করতে হবে। প্রয়োজন হবে ভাষাগত যোগ্যতার । বর্তমানে ইতালিতে ভিসার জন্য IELTS ৬ স্কোর দরকার হয়। অন্যদিকে ইতালিও ভাষার ক্ষেত্রে কমপক্ষে p2 লেবেল ইউরোপাস ভাষার বাস্তব শ্রেণী বিভাগ প্রয়োজন হবে। কারণ b2 লেবেলে পাস করলে ইতালিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাকে আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। কিন্তু আপনি যদি c2 লেবেলে পাস করেন, তাহলে আপনাকে আর কোন পরীক্ষার জন্য বসে থাকতে হবে না।
টিউশন ফি:
অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি অনেক কম। সধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আপনার পড়াশুনাবাবদ ইতালিতে খরচ হবে প্রতি বছর ১৮০০ থেকে ৮০০০ ইউরো ডলার। তবে ইতালির বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় একটু বেশি। নিম্নে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি এর তালিকা দেওয়া হলো__ টরিনো বিশ্ববিদ্যালয়ে 2800, Padova বিশ্ববিদ্যালয়ে 4000 ইউরো, সিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে 1,800 ইউরো, ভেনিসের ফস্কারি বিশ্ববিদ্যালয়ে 2100 থেকে 6500 ইউরোর মধ্যে, বোজেন-বোলজানো ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে 2,200 ইউরো, বোগোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে 2,100 ইউরো, টেন্তো বিশ্ববিদ্যালয়ে 6,000 ইউরো, Scuola Superiore শান্ত’আন্নাতে 4,000 ইউরো, মিলান পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে 3,300 ইউরো। সময় ভেদে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কম বেশী হতে পারে।
স্কলারশিপ:
ইতালিতে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশুনার জন্য শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়ে থাকে নানা ধরনের স্কলারশিপ। যার মধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে। ইতালিতে সরকারিসহ বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের মাধ্যমে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে স্কলারশিপ পাওয়ার সকল বিষয়পূরণ করতে হবে। স্কলারশিপের ব্যপারে সকল তথ্য জানতে এবং আবেদন প্রক্রিয়া জানতে আপনাকে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট চেক করতে হবে।
তবে ইতালিতে পড়াশুনার ক্ষেত্রে ,আপনি আপনার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে ব্যাংকে ৮০০০ থেকে ১২০০০ হাজার ইউরো জমা দেখাতে হবে। যদি আপনি এই পরিমান টাকা জমা দেখাতে পারেন। শুধুমাত্র তখনই আপনি পড়াশুনার জন্য ইতালি যেতে পারবেন।
ইতালির শীর্ষ ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
*পলিটেক্নিকো ডি মিলানো
* স্যাপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অব রোম
* ইউনিভার্সিটি অব বোলোগনা
* ইউনিভার্সিটি অব পাদুয়া
* পলিটেকনিকো ডি টরিনো
* ইউনিভার্সিটি অব মিলান
* ইউনিভার্সিটি অব নেপল্স ফেদেরিকো-২
* ইউনিভার্সিটি অব পিসা
* ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্স
* ইউনিভার্সিটি অব তুরিন
প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নের জনপ্রিয় কয়েকটি বিষয়সমূহঃ
চারুকলা, ফ্যাশন ডিজাইন, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক, হস্পিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম, মেডিসিন, কম্পিউটার সায়েন্স, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি।
আবেদন কিভাবে করবেন:
ইতালিতে আপনি যদি স্নাতক করতে চান তাহলে আপনাকে নূন্যতম এসএসসি পাস হতে হবে।স্নাতকোত্তরের জন্য স্নাতক পাশ এবং আর পিএইচডি এর জন্য স্নাতকোত্তর পাশ হতে হবে। প্রথমে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বাচাই করবেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম পূরন করে অফিসিয়াল ইমেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ র্কতৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিবেন।
সেমিস্টার, ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনাকে ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ভিজিট করতে হবে। নিজের পছন্দকৃত কোর্স বাছাই করে তাদেরকে অফিসিয়াল ইমেল করে সঠিক ও নির্ভুল সব তথ্য জেনে নিবেন। ইতালিতে সাধারণত বছরে সাধারণত ২টি কোর্স অফার করা হয়।
প্রথমটি ফল ইন্টেক, যার আবেদন কার্যক্রম শুরু হয় নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে যাবতীয় আবেদন শেষে কোর্স আরম্ভ হয় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে। এই সময়টিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বাধিক সংখ্যক কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়।
আরও পড়ুন: স্নাতকোত্তরে স্কলারশিপ দিচ্ছে ফ্রান্স, বছরে থাকছে ১৭ লাখ টাকা
দ্বিতীয়টি স্প্রিং যার আবেদন কার্যক্রম শুরু হয় হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এগুলোর সময়সীমা থাকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। অতঃপর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই ভর্তি শেষ করে কোর্স শুরু করে দেওয়া হয়।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র:
* প্রশংসা পত্র ।
* মার্কশীট।
* মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সব সার্টিফিকেট।
* পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
* সিভি।
* রিকোমেন্ডশন লেটার ।
* মোটিভেশন লেটার।
* আইএলটিএস অথবা টোফেল স্কোরের সনদপত্র ।
* বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন পত্র।
ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজপত্র ভিন্ন-ভিন্ন প্রয়োজন হতে পারে ।
International Organization for Migration (IOM) এর মাধ্যমে সকল নথিপত্র ভেরিফিকেশন করাতে হবে। এরপরে আপনাকে দূতাবাসে যেতে হবে। সেখানে আপনাকে প্রি-অ্যাপ্লিকেশন এর জন্য অনুরোধ করতে হবে এবং ভর্তির আবেদনসহ সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে। তারপরে দূতাবাস আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার আবেদনটি পাঠিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে আপনাকে ফলাফল জানিয়ে দিবে।