আমাদের দেশ থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপে গিয়ে থাকেন। আমি মনে করি এই দুই জায়গাতেই আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে, যেটা আমরা হয়তো খুব ভালোমতো কাজে লাগাতে পারছি না। জনসংখ্যার অনুপাতে আর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার্থে উন্নত দেশগুলোতে যাওয়ার হার খুবই কম। তাই আমাদের উচিত বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি উৎসাহিত করা।
আমার অভিজ্ঞতা বলে, উন্নত কোনো দেশে পড়তে আসাটা খুব কঠিন কোনো বিষয় নয়। এটা অনেকটাই আপনার ধৈর্য আর পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল। যদি আপনি অনেকটা সময় চেষ্টা করেও অ্যাডমিশন না পান, তাহলে আমি বলব আপনার প্রোফাইল অনুযায়ী কান্ট্রি, ইউনিভার্সিটি বা কোর্স সিলেকশনে ভুল হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আরেকটু সময় নিয়ে পর্যালোচনা করুন, আপনি অবশ্যই আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।
আমি প্রথম যখন সিদ্ধান্ত নিই যে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য বিদেশে যাব, তখন খুব বড় একটা স্টেপ ছিল কান্ট্রি এবং ইউনিভার্সিটি সিলেকশন। ইউএসএ/কানাডা নাকি ইউরোপ, এ সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে গিয়েছিল। আমার মতো অনেকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার প্রোফাইল অনুযায়ী কান্ট্রি, ইউনিভার্সিটি আর সাবজেক্ট চয়েস করতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার আজকের লেখায় কান্ট্রি সিলেকশনের বিষয়ে আমার অভিমত তুলে ধরব। আগেই বলে রাখি, আমি যা লিখব, তা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আর সাবজেক্টভেদে বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে।
উত্তর আমেরিকায় আমাদের দেশের ছাত্রদের প্রথম পছন্দ আমেরিকা। ল্যান্ড অব অপরচুনিটি, যেখানে প্রচুর টপ র্যাঙ্কড ইউনিভার্সিটি পাবেন। এখানে ফান্ডিং অপরচুনিটিও প্রচুর। যদিও মাস্টার্সের ফান্ডিং পাওয়া তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন, কিন্তু মোটেও অসম্ভব না। এখানকার আরেকটা বড় সুবিধা হলো, এখানে আপনার কোনো ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার ফেস করতে হবে না।
কানাডার পরিস্থিতিও অনেকটাই কাছাকাছি। এই দেশগুলোতে ফান্ডিংয়ের সুযোগ যেমন বেশি, একই সঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেশি। সাধারণত আমাদের দেশের বেশির ভাগ ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদেরই তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স থাকে না। এ জন্য ফান্ডিং পাওয়াটা মাঝে মাঝে কঠিন হয়ে যায়। অবশ্য ফান্ডিং ছাড়াও বেশ কিছু স্কলারশিপ আছে, যেগুলো আপনাকে উচ্চশিক্ষার জন্য চমৎকার সুযোগ করে দিতে পারে, যেমন ইউএসএর ফুলব্রাইট স্কলারশিপ।
সব মিলিয়ে আপনার লক্ষ্য যদি থাকে রিসার্চ বেসড মাস্টার্স বা পিএইচডি করা, নর্থ আমেরিকা অবশ্যই আপনার প্রথম পছন্দ হতে পারে।
যাঁরা কোর্স বেসড মাস্টার্স করতে চান, তাঁদের জন্য ইউরোপ হতে পারে আদর্শ গন্তব্য। বিশ্বের টপ র্যাঙ্কড অনেক ইউনিভার্সিটি পাবেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। আর ইউরোপে অ্যাডমিশন পাওয়াটাও তুলনামূলকভাবে সহজ। এখানে পিএইচডি করার সুযোগও অনেক। পিএইচডির ক্ষেত্রে সুবিধাজনক বিষয় হলো, ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই পিএইচডিকে জব হিসাবে কাউন্ট করা হয়। যেটা পরবর্তী সময়ে পিআর পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইউরোপে মাস্টার্স করতে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো টিউশন ফি। বেশির ভাগ দেশেই পড়তে হলে বেশ বড় অঙ্কের টিউশন ফি দিতে হয়। তবে কিছু দেশে টিউশন ফি দেওয়া লাগে না, যেমন জার্মানি, নরওয়ে বা ফিনল্যান্ড। তাই এই দেশগুলো বর্তমানে ইউরোপ টার্গেট করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দেশগুলোতে টিউশন ফি থাকলেও নানা ধরনের স্কলারশিপও পাওয়া যায়। তাই কোন দেশে পড়তে যাব, এটা ঠিক করার আগে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা খতিয়ে দেখা উচিত। কিছু উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের Erasmus Mundus, জার্মানির DAAD, সুইডেনের SI, ইউকের Chevening, নেদারল্যান্ডসের OKP, ফ্রান্সের Eiffel, বেলজিয়ামের VLIR-UOS ইত্যাদি।
প্রতিটি দেশেই পড়তে যাওয়ার জন্য কিছু রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করতে হয়। আইইএলটিএস বা টোফেল (IELTS বা TOEFL) দিয়েই ইউরোপের প্রায় সব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবেন। আমেরিকার অনেক ইউনিভার্সিটির সঙ্গে GRE বা GMAT স্কোর চায়। এ বিষয়গুলো জানতে আপনার খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। ফেসবুকে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য অনেক গ্রুপ আছে। এ গ্রুপগুলোর ফাইল সেকশনেই আপনি প্রায় সক ধরনের তথ্য পেয়ে যাবেন।
আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থীই চেষ্টা করেন আইইলটিএস না দিয়েই বাইরে আসার। বিষয়টা হচ্ছে, আপনি মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন ইংলিশ দেখিয়ে কিছু দেশে যেতে পারবেন, কিন্তু সব দেশে নয়। আর আইইএলটিএস দিলে আপনার ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল অনেকখানি ডেভেলপ করবে, যা আপনার অ্যাডমিশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তো দেবেই, বাড়তি হিসেবে শিক্ষাজীবন এবং পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে অনেক এগিয়ে রাখবে আপনাকে। তাই আমি সাজেস্ট করব, অবশ্যই আইইএলটিএস দিয়ে আসবেন।
আমার জানা বিদেশে উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত খুবই হেল্পফুল কিছু ফেসবুক গ্রুপের লিংক শেয়ার করলাম।
For USA: https://www.facebook.com/groups/nextop.usa/?ref=share
For Sweden: https://www.facebook.com/groups/40362240846/?ref=share
For Germany: https://www.facebook.com/groups/bsfg.official/?ref=share
For Norway: https://www.facebook.com/groups/bsncommunity/?ref=share