চার বছরের নিষেধাজ্ঞার পর ২০২২ সালের ৯ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ থেকে ৫৩ জন কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও উন্মুক্ত হয়। এর সাত মাস পর দেশটির তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী ভি শিবকুমার ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ এক বিবৃতিতে জানান, বিদেশি কর্মীদের জন্য কোটার আবেদন ও অনুমোদন পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার থাকলেও কিছু কিছু সেক্টরে বিদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় ১ মার্চ থেকে চলমান অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন দেশটির ব্যবসায়ী নেতারা।
তবে প্রত্যাবাসন কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে কারখানা মালিকদের। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা অনেক আগেই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছিল, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বিচার না করে সামান্য জরিমানা নিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে।
মালয়েশিয়ান মুসলিম রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দাতুক জাওহর আলী তৈয়ব খান বলেন, এই শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে বছরের পর বছর ধরে এখানে থাকায় ও তাদের ভিসা ফি ব্যয়বহুল হওয়ায় নিয়োগকর্তাদের পক্ষে তা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে।
শ্রমিকদের অভিবাসন শিবিরে আটকে রাখার পরিবর্তে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সরকারের একটি ভালো পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, সরকারকে অবশ্যই নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে।
মালয়েশিয়ার এসএমই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিং হং সিং বলেন, প্রত্যাবাসন কর্মসূচি অনথিভুক্ত কর্মীদের নিজ দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করার জন্য একটি কম ব্যয়বহুল উপায়। কিন্তু কিছু নিয়োগকর্তার জন্য দুঃশ্চিন্তারও কারণ। তারা শ্রমিকের অভাবের সম্মুখীন হতে পারে।
তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ এবং উৎপাদন খাতে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
অ্যাসোসিয়েটেড চাইনিজ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট তান শ্রী লো কিয়ান চুয়ান বলেন, প্রত্যাবাসন কর্মসূচি যেসব বিদেশি কর্মী অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেছে তাদের জন্য। অনথিভুক্ত বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করার জন্য সরকার আগেও বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে। তবে আমরা বুঝতে পারি বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে বিদেশি শ্রমিক সরবরাহে ভারসাম্যহীনতার পরিস্থিতি রয়েছে।
কুয়ালালামপুর ও সেলাঙ্গর ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নিভাস রাগভান বলেন, ব্যবসার প্রয়োজনে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগের অনুমতি দেওয়া উচিত।
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, বিদেশ কর্মী কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা সিস্টেমটি সব কোম্পানির মালিকদের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত, যাতে তারা দ্রুত সময়ে সহজ প্রক্রিয়ায় কম খরচে কর্মী নিয়োগ করতে পারে।
এতে সরাসরি কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়োগ আদেশ পেলে অভিবাসন ব্যয় কমার পাশাপাশি অসাধু এজেন্টের হাতে শোষণ থেকে বিদেশি কর্মীরা মুক্তি পাবেন বলে মনে করেন তিনি।
ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্সের সভাপতি তান শ্রী সোহ থিয়ান লাই বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ১ মার্চ থেকে প্রত্যাবাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্ত দেশে নথিভুক্ত বিদেশি শ্রমিকদের পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয়। এটি বর্তমানে একটি জাতীয় উদ্বেগের কারণ।
তিনি বলেন, যে সেক্টরে নিয়োগকর্তাদের সত্যিকার অর্থেই কর্মীর চাহিদা রয়েছে, তাদের শ্রম ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশি কর্মী প্রয়োজন। সরকারের উচিত এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে অনুমোদন করা।