একইসঙ্গে অভিবাসন সংস্কার করেও জার্মানির দক্ষ কর্মীর ঘাটতি সহজে পূরণ হবে না বলেও সতর্ক করেছেন তারা৷
জার্মানির নিয়োগকারীদের ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট রাইনার ডুলগের বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেন, ‘‘দক্ষ কর্মী আইন পাশ করা, দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার একটি পদক্ষেপ৷ তবে আরও অনেক কিছু করা দরকার৷’’
জার্মান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের (ডিজিবি) চেয়ারউইম্যান ইয়াসমিন ফাহিমি বলেন, অভিবাসনপ্রক্রিয়া সহজ করা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত৷
কিন্তু শ্রমঘাটতি পূরণ করতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি৷
বিদেশ থেকে আসা দক্ষ কর্মীদের জন্য ভাষা একটি দীর্ঘস্থায়ী বাধা বলেও মনে করেন ডুলগের৷ তিনি বলেন, ‘‘পছন্দসই বাসা এবং শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার খুঁজে পেতেও অসুবিধে পোহাতে হয়৷’’
ক্যানাডার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘অনেক বেশি আন্তরিকতার সঙ্গে বিদেশিদের স্বাগত জানায় তারা৷’’
পৃথিবীর বহু দেশে দাপ্তরিক কাজগুলো গোছানো সহজ হলেও জার্মানিতে তেমন নয় বলেও মনে করেন রাইনার ডুলগের৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অনেক কথা বলা হয়, অনেক ঘোষণাও দেয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়িত হয় না কিছুই৷’’
জুনে পাশ হওয়া দক্ষ কর্মী অভিবাসন আইন পয়েন্ট সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে একটি অপরচুনিটি কার্ড দেয়৷ পয়েন্টের মানদণ্ডে রয়েছে ভাষার দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, বয়স৷
জার্মানিতে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের কারণে অর্থাৎ বয়স্ক জনসংখ্যা অবসরে চলে গেছে শ্রমশক্তির ওপর আগামীতে আরো চাপ তৈরি হবে বলেও উদ্বেগ রয়েছে৷ আর তাই জুলাইয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস জোর দিয়ে বলেছেন, অনিয়মিত অভিবাসন সীমিত করার জন্য নেয়া পদক্ষেপগুলো অব্যাহত থাকবে৷ নিয়মিত অভিবাসনকে সহজতর করে আরও দক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে চান বলেও জানান তিনি৷
ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ফাহিমি বলেন, বেশি সংখ্যক লোককে দেশের কর্মশক্তিতে যুক্ত করতে জার্মানির তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে৷ অভিবাসী এবং শরণার্থীদের যারা ইতিমধ্যেই জার্মানিতে বসবাস করছেন, তাদের নিয়মিত শ্রমবাজারে যুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও মনে করেন এই শ্রমিক নেতা৷
জার্মানিতে আরও ভাল প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ডুগলের ও ফাহিমি৷ তাদের যুক্তি, এর মধ্য দিয়ে বাবা-মা, বিশেষ করে মায়েরা পূর্ণকালীন কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ পাবেন৷
ডুলগার বলেন, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি, উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন৷
ফাহিমি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কারিগরি দক্ষতা ছাড়াই প্রায় ২৬ লাখ তরুণ রয়েছেন, যাদের জরুরিভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলা প্রয়োজন৷’’
ডুলগের মনে করছেন, ডিজিটাইজেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে জার্মানিতে অনেক রুটিন কাজ, বিশেষ করে আমলাতন্ত্রে শ্রমিকের ঘাটতি কমাতে পারে৷
এদিকে, অভিবাসন বিরোধী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টির নেতা রোববার জানান, জার্মানদের আরও সন্তান নিতে উৎসাহিত করার জন্য প্রচলিত পারিবারিক নীতি ‘পুনর্বিবেচনা’ করা প্রয়োজন৷
সরকারি সম্প্রচার কেন্দ্র জেডডিএফ-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টিনো শ্রুপাল্লা বলেন, ‘‘আমাদের একটি ডি ফ্যাক্টো ওয়ান-চাইল্ড নীতি আছে৷ কিন্তু তার পরিবর্তন প্রয়োজন, তাতে ২০ বা ৩০ বছরের মধ্যে জার্মানি আবারও তরুণদের নিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারবে৷’’